‘উড়লে আকাশে প্রজাপতি, প্রকৃতি পায় নতুন গতি’ স্লোগানে প্রজাপতি সংরক্ষণ এবং গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) অনুষ্ঠিত হয়েছে প্রজাপতি মেলা-২০২৩। শুক্রবার (২৪ নভেম্বর) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জহির রায়হান মিলনায়তনে দিনব্যাপী প্রজাতি মেলার উদ্বোধন করেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম। সকাল থেকেই প্রজাপতি দেখতে মেলায় ভিড় জমান দর্শনাথীরা। শহরের যান্ত্রিকতা, কোলাহল থেকে একটুখানি হাফ ছেড়ে বাঁচতে পরিবার, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধুবান্ধব নিয়ে অনেকেই ছুটে এসেছেন প্রকৃতির কোলে রং ছড়ানো পতঙ্গটির সৌন্দর্য উপভোগ করতে।
নগর জীবনের ব্যস্ততা থেকে মুক্তি পেতে একটুখানি প্রশান্তির আশায় সাভারের নবীনগর থেকে প্রজাপতি মেলায় এসেছেন ফজলে রাব্বি। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন তার ছোট্ট দুই মেয়েকেও। মেলায় এসে মেয়েরা ভীষণ খুশি। প্রজাপতির হাটে রঙ-বেরঙের প্রজাপতি দেখতে তারা ছোটাছুটি করছে এদিক-সেদিক। তিনি মেয়েদের বিভিন্ন প্রজাপতির সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন। ফজলে রাব্বি বলেন, ‘ইট-পাথরের শহুরে জীবনে প্রজাপতির দেখা পাওয়া দুর্লভ। ফেসবুকে প্রজাপতি মেলার কথা জানতে পেরে মেয়েদের নিয়ে ছুটে এসেছি প্রজাপতি মেলায়। মেয়েরাও পাপেট শো, গান, ছবি আঁকা দেখে চমৎকার সময় পার করেছে।’
মেলার আয়োজনকে ঘিরে শিশু-কিশোরদের আগ্রহ ছিল চোখে পড়ার মতো। হরেক রকমের প্রজাপতির উড়াউড়ি শিশু-কিশোরদের মনে গভীর আলোড়ন সৃষ্টি করে। বিচিত্র ও মনোমুগ্ধকর এসব প্রজাপতির পাখা যেন রঙ ছড়াচ্ছে শিশু-কিশোরদের মনে। সাভার থেকে বাবার সঙ্গে মেলা দেখতে এসেছেন ছোট ইনসিয়া। বিচিত্র রকমের প্রজাপতি দেখে সে খুবই খুশি। এ ছাড়া ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করতে পেরে এবং পাপেট শো দেখে খুবই উচ্ছ্বাসিত দেখা যায় ছোট্ট ইনসিয়াকে।
দিনব্যাপী নানা আয়োজনে আমন্ত্রিত অতিথিরা বিভিন্ন স্টল ঘুরে দেখেন। এবারের আসরে পরিবেশ সংরক্ষণে বিশেষ অবদানের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ারুল ইসলামকে বাটারফ্লাই অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ প্রদান করা হয়। এ ছাড়া প্রজাপতি নিয়ে গবেষণা কর্মের জন্য চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থী মো. জহির রায়হানকে বাটারফ্লাই ইয়াং ইনথুসিয়াস্ট অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
মেলা উপলক্ষে প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ছিল। দিনব্যাপী সেখানে জীবন্ত প্রজাপতি, প্রজাপতিবান্ধব বৃক্ষাদি ও প্রজাপতির প্রজনন ক্ষেত্রসহ উন্মুক্ত বাগান ঘুরে দেখেন দর্শনার্থীরা।
মেলার আহ্বায়ক এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে এক সময় ১১০ প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মিলতো। কিন্তু ক্যাম্পাসে নগরায়নের ফলে প্রজাপতি তার আবাসস্থল হারাচ্ছে। এখন ক্যাম্পাসে ৫৭ প্রজাতির প্রজাপতির দেখা মিলে। আমরা বৃক্ষরোপণের ফলে হয়তো বড় বড় গাছ লাগাই, কিন্তু নিচের ঝোঁপঝাড় হচ্ছে প্রজাপতির আবাসস্থল। সেটা একবার নষ্ট হয়ে গেলে আর লাগানো হয় না। ফলে দিন দিন কমছে প্রজাপতির পরিমাণ। আমরা চাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সবাই প্রাণ-প্রকৃতি সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠবে।’
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. নূরুল আলম বলেন, ‘প্রজাপতি মেলা সবার কাছে প্রিয় হয়ে উঠেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণ-প্রকৃতি রক্ষায় আমরা দুটি মাস্টারপ্ল্যান করার চেষ্টা করছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৃতি রক্ষায় একটা বায়োডাইভারসিটি প্ল্যান আরেকটি একাডেমিক মাস্টারপ্ল্যান প্রণয়নের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। প্রজাপতি মেলায় প্রজাপতির আদলে যে সব প্রদর্শনী হচ্ছে তা শিশু-কিশোরদের মনের মধ্য বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।’ উপাচার্য এ সময় দর্শনার্থী, প্রজাপতি বিশেষজ্ঞসহ সবাইকে ধন্যবাদ জানান এবং প্রকৃতি সংরক্ষণে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মেলায় দিনব্যাপী নানা আয়োজনের মধ্যে ছিল শিশু-কিশোরদের জন্য প্রজাপতি বিষয়ক ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা। শিশু কিশোররা তাদের রঙিন তুলিতে ফুটিয়ে তোলে প্রজাপতির বিভিন্ন অবয়ব। ছবি আঁকা প্রতিযোগিতায় বিভিন্ন বয়সী প্রায় শতাধিক শিশু অংশগ্রহণ করে। এর আগে অনুষ্ঠিত কুইজ প্রতিযোগিতায় প্রজাপতি বিষয়ক বিভিন্ন প্রশ্নে অংশগ্রহণ করে শিশু-কিশোররা। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছবি চত্বরে আয়োজন করা হয় প্রজাপতির আলোকচিত্র প্রদর্শনী। এতে প্রজাপতির নির্বাচিত বেশ কয়েকটি ছবি স্থান পায়। এ ছাড়া অন্যান্য আয়োজনের মধ্যে ছিল প্রজাপতির আদলে ঘুড়ি উড্ডয়ন, বারোয়ারি বিতর্ক প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি চেনা প্রতিযোগিতা, প্রজাপতি বিষয়ক ডকুমেন্টারি প্রদর্শনী এবং পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠান।
মন্তব্য করুন