যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) লিফট অপারেটরের নিয়োগ পরীক্ষা দিতে এসে প্রায় ১৭ জন চাকরি প্রার্থীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগ কর্মীদের বিরুদ্ধে। ভুক্তভোগী চাকরি প্রার্থীদের দাবি পরীক্ষা দিতে আসার সময় বৃহস্পতিবার (৭ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে তাদের ধরে নিয়ে যবিপ্রবির শহীদ মসিয়ূর রহমান হলে আটকে রাখা হয়। এরপর বিষয়টি জানাজানি হলে প্রায় ৬ ঘণ্টা পর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তাদের বিশ্ববিদ্যালয় এলাকার বিভিন্ন স্থানে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন যবিপ্রবি শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অপহরণের মামলাসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম রিজেন্ট বোর্ডের মাধ্যমে তদন্ত কমিটি গঠন করে অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে এসে কঠোর শাস্তির কথা জানিয়েছেন যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আনোয়ার হোসেন।
অপহরণের ঘটনায় দুপুর ১২ টায় শ ম র হলের প্রভোস্ট ড. মো আশরাফুজ্জামান জাহিদ হলে তল্লাশি চালিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান, হলে অপহৃত কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু অপহৃত চাকরি প্রার্থীরা জানান তারা বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত হলের ৩০৪, ৩০৯ নম্বর রুম ও পাঁচতলার বিভিন্ন কক্ষে ছিলেন। এ বিষয়ে জানতে হল প্রভোস্টেকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল দিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকে ইজিবাইক থেকে নামার সঙ্গে সঙ্গে আমাকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৯ নম্বর রুমে নিয়ে গিয়ে বলা হয়, ‘তোরা পরীক্ষা দিতে আসছিস, এডমিট কার্ড কোথা থেকে পাইলি? ওই রুমে আমিসহ ছয়জন চাকরি পরীক্ষার্থী ছিলাম। এ ছাড়া হলের ৩০৪ নম্বর রুম ও পাঁচ তলার একাধিক রুমে আরও অনেকে আটক ছিলেন। আমি বের হতে চাইলে আমাকে মাথায় ও নাকে-মুখে এলোপাতাড়ি কিল-ঘুষি মারে। আমার চেয়ে রুমের অন্যান্য পরীক্ষার্থীকে অনেক বেশি মারধর করে। তারপর সাড়ে ৩টার দিকে ওরাই (অপহরণকারীরা) পালবাড়ি নিয়ে ছেড়ে দেয়।
আরেক পরীক্ষার্থী জনান, আমাকে প্রধান ফটক থেকে ৩০৪ নম্বর রুমে নিয়ে যায়। বলে তুমি তো অনেক ভালো ছেলে নাস্তা হবে, ডিনার হবে, বাসায় ফোন দিয়ে বলো ভাইয়েরা আছে খুব ভালো ব্যবহার করছে। এখানে কয়েক দিন থাকলেও সমস্যা নেই। কিছুু সময় পর পাশের কক্ষ থেকে একজন বলে চাকরি বড় না কি জীবন বড়? তারপর আমি ওয়াশরুমে যাই, ফিরে এসে বলি পরীক্ষা দেব। তখন তারা বলে, যাও তুমি পরীক্ষা দাও। তখন ফোন রেখে পাঠিয়ে দেয়, বলে পরীক্ষা শেষে প্রধান ফটক থেকে ফোন নিয়ে চলে যাবি। তবে অন্য সবাইকে আটকে রেখে আমাকে কেন ছাড়লো সেটা আমি জানি না।
ভুক্তভোগী একজন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক বলেন, আমি বেলা সাড়ে ৯ টার দিকে পরীক্ষার জন্য আমার মেয়ের স্বামী মো. আরিফুল ইসলামকে নিয়ে আসি। তখন কিছু ছেলে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল ফটকের ভেতর থেকে জামাইকে ক্যান্টিনের দিকে নিয়ে যায়। এরপর থেকে তার ফোন বন্ধ পাই। দীর্ঘক্ষণ তার সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পেরে আমি রেজিস্ট্রার স্যারের কাছে অভিযোগ জানাই। পরবর্তীতে উপাচার্য স্যারকেও অভিযোগ জানাই।
এ বিষয়ে যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক তানভীর ফয়সাল বলেন, অপহরণের বিষয়ে আমি অবগত নই। আমাদের কাছে এই রকম কোনো অভিযোগ আসেনি। আমি দৃঢ়ভাবে বলতে পারি যবিপ্রবি ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এর সঙ্গে জড়িত না। কে বা কারা উদ্দেশ্য প্রণোদিতভাবে ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে এই রকম অপকর্ম করে থাকতে পারে। যদি ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এর সঙ্গে জড়িত থাকে আর সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায় তাহলে আমরা তাদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেব।
যবিপ্রবি ছাত্রলীগের সভাপতি সোহেল রানা বলেন, ছাত্রলীগের কোনো কর্মী এই অপহরণের সঙ্গে জড়িত নয়। ছাত্রলীগ কখনোই নিয়োগের সঙ্গে জড়িত ছিল না। আমাদের কোনো কর্মী যদি পরীক্ষা দেয়, তবে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হলে আমরা ভিসি স্যারকে জানাই। পরীক্ষার্থী যদি যোগ্য হয় তবে তাকে চাকরি দেওয়া হয়।
পরীক্ষার্থী অপহরণের বিষয়ে জানতে চাইলে যবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন বলেন, আজ যবিপ্রবিতে লিফট অপারেটর পদের চাকরির পরীক্ষা ছিল। সকাল ১০ টার দিকে আমি জানতে পারলাম কিছু পরীক্ষার্থীকে শহীদ মসিয়ূর রহমান হলের ৩০৪ নম্বর রুমে ছাত্রলীগ সভাপতির কর্মীরা আটকে রাখছে। আমি হলের প্রভোস্টকে বিষয়টি দেখার জন্য পাঠাই এবং প্রভোস্ট আমাকে জানায় রুমে কাউকে পাওয়া যায়নি। কিন্তু দুপুর ১২ টার দিকে যখন আমি অফিসে আসি তখন তাদের অভিভাবকরা আমার সঙ্গে দেখা করে তাদের স্বজনদের অপহরণের বিষয়টি নিশ্চিত করে।
তিনি আরও বলেন, বিকেল ৩টার দিকে পরীক্ষার্থীদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তারা আমাকে জানায়, তাদেরকে হলের তিন তলার ৩০৪ নম্বর রুম, ৩০৯ নম্বর রুম ও পাঁচ তলার বিভিন্ন রুমে আটকে রাখা হয়। পরে তাদেরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন এলাকায় নিয়ে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য লজ্জাজনক। এর সুষ্ঠু তদন্ত করে কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী অপহরণকারীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হবে।
মন্তব্য করুন