বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) আইন ভেঙে ডিন নিয়োগ দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে রুটিন দায়িত্বে থাকা উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূইয়ার বিরুদ্ধে। রোববার (১০ ডিসেম্বর) রেজিস্ট্রার মনিরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশের মাধ্যমে ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ তানভীর কায়ছারকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন পদে দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের ২২(৫) ধারা অনুসারে কোনো অনুষদের ডিনের দায়িত্ব পালন করলে সেই অনুষদের পরবর্তী অন্য বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষককে ডিন পদে নিয়োগ করতে হবে। সেই অনুসারে ইংরেজি বিভাগের পরবর্তী বাংলা বিভাগের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক শারমিন আক্তারকে ডিন নিয়োগ করার কথা। কিন্তু নিয়ম ভেঙে ইংরেজি বিভাগ থেকেই তানভীর কায়ছারকে ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক জানিয়েছেন, বর্তমানে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক সমিতি ২০২৪ এর কার্যনির্বাহী পরিষদ নির্বাচনের মৌসুম চলছে। নতুন নিয়োগকৃত ডিন তানভীর কায়ছার নির্বাচনের একটি প্যানেল থেকে সদস্য পদে নির্বাচন করছেন। উক্ত প্যানেলটি বর্তমান রুটিন উপাচার্য বদরুজ্জামান ভূঁইয়ার আশীর্বাদপুষ্ট। নির্বাচন নিয়ে বিশেষ পরিস্থিতি তৈরি ও আশীর্বাদপুষ্ট শিক্ষককে সুবিধা প্রদানের নামে রুটিন উপাচার্য বিধিবহির্ভূত এই কাজটি করেছেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনের ধারা ২২(৫) অনুযায়ী এর পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত বিভাগ বাংলা থেকে ডিন হওয়ার কথা। কিন্তু খবর বিশেষ একটি পক্ষকে সুবিধা দেওয়ার জন্য নিজ পছন্দের ব্যক্তি ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক মোহাম্মদ তানভীর কায়ছারকে স্মারক নং বিইউ/রেজি/প্রশাসন/অনুষদীয় ডিন নিয়োগ/৪৮৫/২০২০/৩২৯৩ একটি পত্রে ২ বছরের জন্য ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষক বলেন, এটি সংসদ থেকে পাশকৃত বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আইনের পূর্ণাঙ্গ লঙ্ঘন। সংসদ থেকে পাশকৃত আইনে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ও মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভাগের ডিন নিয়োগ দেওয়া হয়। শুধু বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিন নিয়োগের ক্ষেত্রে সংসদে পাশকৃত আইন অমান্য করে রুটিন ভিসি পছন্দের লোককে নিয়োগ দেন। তাই রুটিন ভিসির ডিন নিয়োগের এই প্রক্রিয়াকে অনেকেই নিয়মবহির্ভূত বলে আখ্যা দিয়েছে। এই নিয়োগ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ বিরাজ করছে বলে জানা গেছে।
এর আগেও বঙ্গমাতা হলের প্রভোস্ট নিয়োগের ক্ষেত্রেও আইন ভাঙার কথা জানা গেছে। কেননা একজন রুটিন উপাচার্য রুটিন দায়িত্ব মোতাবেক কোনো হলের প্রভোস্ট পদ শূন্য হলে সেখানে হাউস টিউটরদের মধ্য থেকে সিনিয়রিটির ক্রম অনুসারে কোনো শিক্ষককে ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্টের দায়িত্ব প্রদান করার কথা থাকলেও তিনি তা করেননি। তিনি গণিত বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. হেনা রানী বিশ্বাসকে ভারপ্রাপ্ত প্রভোস্টের দায়িত্ব প্রদান করেন। অথচ হেনা রাণী বিশ্বাস কখনোই হাউজ টিউটর পর্যন্ত ছিলেন না।
একাধিক সূত্র থেকে জানা গেছে যে, বদরুজ্জামান ভূইয়া রুটিন দায়িত্ব পাওয়ার পর থেকেই নানা অনিয়মের সঙ্গে জড়িয়ে গেছেন।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি মো. আরিফ হোসনে বলেন, নিয়োগটি বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন অনুযায়ী হয়নি। আইনে ২২ এর ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী পালাক্রমে বিভাগের জেষ্ঠ শিক্ষক ডিন হবেন, মানে পরবর্তীতে বিভাগ ঘুরে আসলে তখন তিনি দায়িত্ব পাবেন।
এ বিষয়ে অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূইয়া বলেন, আইন অনুযায়ী অনুষদের সিনিয়র শিক্ষক ডিনের দায়িত্ব পাবে। এখানে বিভাগ কোনো বিষয় না। নিয়ম অনুযায়ীই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
প্রসঙ্গগত, অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূইয়া গত ৮ নভেম্বর উপাচার্য রুটিন দায়িত্ব পাওয়ার এক মাস যেতে না যেতেই নানা অভিযোগ উঠছে তার বিরুদ্ধে।
মন্তব্য করুন