ফেসবুকে হা হা রিঅ্যাক্ট দেওয়াকে কেন্দ্র করে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) দুই শিক্ষার্থীর মাঝে মারামারি ঘটনা ঘটেছে। সম্প্রতি ক্যাম্পাস সংলগ্ন ভোলা রোডের ট্রাফিক পুলিশ বক্সের সামনে এ ঘটনা ঘটে। মারামারিতে একজনকে চোখে আঘাত করা হলে রক্তজমাট বেধে যায়। অপরজনের হাতের আঙুলে কামড়ের অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বেশ সরগরম।
পরে আহত দুই শিক্ষার্থীকে বরিশাল শেরে-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (শেবাচিম) ভর্তি করা হয়। আহত দুজনই ববির বাংলা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী। তারা হলেন, শান্ত ইসলাম আরিফ ও জাকির হোসেন।
জানা গেছে, শান্ত ইসলাম আরিফের ছবিতে জাকির হোসেন হা হা রিয়েক্ট দেওয়ায় দুজনের মাঝে মেসেঞ্জারে কথা কাটাকাটি হয় এবং একে অপরকে হুমকি দেয়। এক পর্যায়ে তারা ভোলারোড আসে এবং জাকির ও শান্তর মাঝে মারামারি হয়। এ সময় জাকির হোসেনের মুখমণ্ডলে ঘুষি মারেন শান্ত। অপরদিকে শান্তর হাতের আঙুলে কামড় দেয় জাকির।
প্রত্যক্ষদর্শী রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থী জানান, আমি বাজার করতে গিয়ে দেখি তারা কথা কাটাকাটি করছে। এক পর্যায়ে কিলঘুষি মারছে। সবাই মাইর খাইছে। তবে কি কারণে এমন হয়েছে তা আমি জানি না। পরে শুনি ফেসবুকে হা হা রিঅ্যাক্টকে কেন্দ্র করে তারা মারামারি করেছে। একজনের চোখে বেশি ব্যাথা পেয়েছে আরেকজনের চোখের নিচে রক্তজমে গেছে।
এদিকে মারামারি শেষে সবাই হাসপাতালে না গিয়ে তাদের বাসায় চলে যায়। তখন বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের একাংশ থেকে হাসপাতালে যেতে বললে অস্বীকৃতি জানায় জাকির। তখন হাসপাতালে না গেলে ছাত্রলীগের ওই একাংশ পুণরায় জাকিরকে মেরে হাসপাতালে পাঠাবে বলে হুমকি দিলে জাকিরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে শেবাচিমে ভর্তি করা হয়। এমন তথ্য আসে প্রতিবেদকের কাছে।
ক্যাম্পাস সূত্রে জানা গেছে, বাংলা বিভাগের গোলাম রসূল একটি হোটেলে ৯ হাজার টাকার মত বাকি করেছে। হোটেলের মালিক এই বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ দিবে; এই কথা শুনতে পেরে গোলাম রসূলকে বিষয়টি শান্ত জানায়। শান্ত ও গোলাম রসূলের মাঝে আগেও দ্বন্দ্ব ছিল। এই নিয়ে গোলাম রসূলের সমালোচনা করেন শান্ত। তখন জাকিরকে শান্তর বিরুদ্ধে উত্তেজিত করে গোলাম রসূল, এমনটাই মনে করেন অনেকে। এ ঘটনার পরের দিন ফেসবুকে ছবিতে হা হা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাদের মাঝে সংঘাত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সেদিন রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিজেদের মাঝে মারামারি হলে সবাই মিলে ছাড়িয়ে দেয়। কার দোষ বা কার গুণ সেটা তো আমরা বলতে পারব না।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে গোলাম রসূল এই মারামারির সঙ্গে জড়িত না থাকার দাবি করে বলেন, আমার কাছে এক দোকানদার কিছু টাকা পাবে। আমি তার নিয়মিত ক্রেতা। টিউশনির টাকা পেলে সেটা পরিশোধ করে দেব। এটা আমার ব্যক্তিগত বিষয়। এসব বিষয়ে কারও সঙ্গে আমার ঝামেলা হয়নি। আমি ভোলা রোডে সবজি কিনতে গেছিলাম, আমি দোকানে ছিলাম, তখন দেখি ওদের মাঝে ঝামেলা হচ্ছে আমি গিয়ে ছাড়িয়ে দেই।
এ ঘটনায় শান্ত বলেন, জাকির দীর্ঘদিন যাবৎ নানাভাবে আমাকে উত্যাক্ত করে আসছিল। মঙ্গলবার (২৬ ডিসেম্বর) জাকির পরিকল্পিতভাবে আমার পোস্টে হা হা রিঅ্যাক্ট দেয়। আমি মেসেজ দিয়ে জাকিরকে রিঅ্যাক্ট রিমুভ করার জন্য অনুরোধ জানাই। কিন্ত জাকির রিঅ্যাক্ট রিমুভ না করে আমাকে গালি ও হুমকি দেয়। উসকানি দিয়ে আমার বাসা সংলগ্ন ভোলার রোডে ডেকে নিয়ে যায়। আমার কাছে এসবের স্ক্রিনশট রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, ভোলারোড যাওয়ার পর অকথ্য ভাষায় আমাকে গালি দেয়। আমি প্রতিবাদ করলে দুইজন আমার ওপর আতর্কিতভাবে আক্রমণ করে। গোলাম রসূল আমাকে ধরে রাখে আর জাকির কিল ঘুষি দিয়ে আঘাত করে। আমি একা ছিলাম, আত্মরক্ষার জন্য আমিও হিট করি। তখন জাকির আমাকে কামড় দেয়।
শিক্ষার্থী জাকির বলেন, আমি শান্তর একটা ছবিতে ভুলে ‘হা হা’ রিঅ্যাক্ট দিয়েছিলাম। ও আমাকে সেটা রিমুভ করতে বলেছিল। কিন্তু আমার ফোনে এমবি ছিল না। শুরুতে আমি মশকরা করে বলেছিলাম, তুই আমাকে মারবি? পরে আমি কোথায় আছি তা জানতে চায় শান্ত। তখন শান্তকে বলি, ‘আমি ভোলার রোডে আছি।’ তারপর অল্প সময়ের মধ্যে আসলে, আমি ওরে বন্ধু বলে সম্বোধন করি কিন্তু শান্ত আমার কথা না শুনে চোখে ঘুষি মারে। ঘুষির আঘাতে আমি মাটিতে লুটিয়ে পড়লে বেধড়ক মারতে থাকে আমাকে। তখন গোলাম রসূল এসে ছাড়িয়ে দিয়ে আমাকে রক্ষা করে। হাতে কামড় দেওয়ার বিষয় অস্বীকার করে বলেন, এগুলো সব বানোয়াট। দরকার হলে ফরেনসিক রিপোর্ট করে দেখুন।
ববির বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ও বিভাগের ছাত্র উপদেষ্টা পম্পা রানী মজুমদার বলেন, এই ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা আমাদের শিক্ষার্থী। তাদের সঙ্গে আমার মৌখিকভাবে কথা হয়েছে। আমরা চাই সব শিক্ষার্থী ভালো থাকুক। এখন বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ থাকায় কোনো শিক্ষক বরিশালে নেই। খুব শিগগিরই আমরা বিষয়টির সমাধান করবো।
এই বিষয়ে জানতে চাইলে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. আব্দুল কাইউম বলেন, আমাকে সেদিন রাত ১২টার দিকে এক শিক্ষার্থী ফোন করে বলেছিলেন আমাদের এক শিক্ষার্থী খুব অসুস্থ। অ্যাম্বুলেন্স প্রয়োজন। আমি অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়েছিলাম। সকালে জানতে পারি মারামারি হয়েছিল। আমি তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি।
কোনো অভিযোগ পেয়েছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি কোনো লিখিত বা আনুষ্ঠানিক অভিযোগ পাইনি। অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেব। শিক্ষার্থীদের সমস্যা সমাধানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন সব সময় তাদের পাশে আছে।
মন্তব্য করুন