প্রাণ ভিক্ষার আবেদন নাকচ হয়ে যাওয়ায় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সাবেক অধ্যাপক এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলার দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে আর কোনো বাঁধা থাকল না। চলতি মাসের যে কোনো সময়ই হতে পারে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত এই আসামির।
কারাবিধি অনুযায়ী, আগামী ২৫ জুলাই থেকে ১ আগস্টের মধ্যে ফাঁসি কার্যকরের কথা। তবে ২৫ জুলাইয়ের পর চলতি মাসেই যে কোনো দিন রাতে ফাঁসি কার্যকর করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্রে জানা গেছে।
ফাঁসির আসামিরা হলেন, রাবির ভূতত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের তৎকালীন সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মো. মহিউদ্দিন ও ড. তাহেরের বাসার তত্ত্বাবধায়ক জাহাঙ্গীর আলম। ২০০৮ সালে নিম্ন আদালতে মামলার রায় ঘোষণার পর থেকেই তারা রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে আছেন। তাদের কনডেম সেলে রাখা হয়েছে।
কারাগারের জেলার নিজাম উদ্দিন জানান, মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন করেছিলেন। আবেদন নাকচের চিঠি সম্প্রতি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে এসে পৌঁছেছে। নাকচের চিঠি কারাগারে পৌঁছার পর কারাগারে ফাঁসি কার্যকরের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এখন উপরের নির্দেশনা ও কারাবিধি অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকর করা হবে।
রাজশাহীর ডিআইজি (প্রিজন) কামাল হোসেন বলেন, ‘প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচ করার ফলে দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরে সব বাধা শেষ হয়েছে। তবে ফাঁসি কার্যকরের আগে জেল কোড অনুযায়ী কিছু প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। এ ক্ষেত্রে আদেশপ্রাপ্তির ২১ থেকে ২৮ দিনের মধ্যে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়। তার আগে আত্মীয়-স্বজনকে শেষ দেখা করার সুযোগ দিতে হয়।’
রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) সাবিহা সুলতানা জানান, প্রাণভিক্ষার আবেদন নাকচের চিঠি হাতে পাওয়ার পর মৃত্যুদণ্ড কার্যকরে আর আইনি কোনো বাধা নেই। কাজেই এখন জেল কোড অনুযায়ী ফাঁসি কার্যকরের উদ্যোগ নেবে কারা কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রাবি শিক্ষকদের পশ্চিমপাড়া আবাসিক কোয়ার্টারের পেছন থেকে ২০০৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারি অধ্যাপক তাহের আহমেদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ৩ ফেব্রুয়ারি তার ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ থানায় অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। আসামিদের স্বীকারোক্তি অনুযায়ী, অধ্যাপক তাহের বিভাগের একাডেমিক কমিটির প্রধান ছিলেন। একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মিয়া মো. মহিউদ্দিন অধ্যাপক পদে পদোন্নতির জন্য কমিটির সুপারিশ চেয়ে আসছিলেন। কিন্তু বাস্তব কারণে অধ্যাপক তাহের সুপারিশ করেননি। মূলত পদোন্নতি না পেয়ে ক্ষুব্ধ হয়ে মিয়া মহিউদ্দিন তাঁকে হত্যার পরিকল্পনা করেছিলেন।
এই মামলার বিচার শেষে ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর আদালত চারজনকে ফাঁসির আদেশ ও দুজনকে খালাস দেন। ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামিরা আপিল করেন। এতে দুজনের সাজা কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড করা হয়। এ দুজন হলেন, কেয়ারটেকার জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের স্ত্রীর ভাই আব্দুস সালাম। অন্য দুজনের সাজা বহাল থাকে।
এরপরও ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুজনকে বাঁচাতে স্বজনেরা নানা আইনগত প্রক্রিয়া চালিয়ে যান। অধ্যাপক তাহেরের মেয়ে সেগুফতা আহমেদও আসামিদের সাজা বহাল রাখতে এই মামলার আইনজীবী হিসেবে লড়ে যান। শেষ পর্যন্ত দুই আসামির ফাঁসি কার্যকরের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ায় তিনি বলেন, ‘রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে এটি একটি নৃশংস ঘটনা। আমরা আমার বাবার খুনিদের ফাঁসি কার্যকর দেখার অপেক্ষায় আছি।’
আসামি মিয়া মহিউদ্দিনের পরিবারের পক্ষ থেকে অবশ্য কেউ কথা বলতে চাননি। মহিউদ্দিনের স্ত্রীর ভাই ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগের অধ্যাপক নির্ঝর রহমান বলেন, ‘আমরা এখন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত। এ বিষয়ে এখন কোনো কথা বলতে চাই না।’
মন্তব্য করুন