জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) কলা ও মানবিক অনুষদের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের গ্রাফিতি মুছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ব্যঙ্গচিত্র অঙ্কনের প্রতিবাদে ও জড়িতদের শাস্তিসহ তিন দফা দাবিতে টানা চতুর্থ দিনের মতো আমরণ অনশন করছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের দুই নেতা। তবে অনশনে শারীরিক অবস্থার অবনতি হলেও চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান তারা।
অনশনরত দুজন হলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিক্স বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি এনামুল হক এবং বাংলা বিভাগের ৪৪তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের উপশিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক রিয়াজুল ইসলাম।
চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে অনশনকারী এনামুল হক বলেন, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমি কোনো চিকিৎসা নেব না। এক্ষেত্রে যদি মরণ হয় তবুও আমি চিকিৎসা নেব না।
এদিকে আজ দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা কেন্দ্রের উপপ্রধান মেডিকেল অফিসার ডা. রিজওয়ানুর রহমান পরপর দুবার চিকিৎসার জন্য গেলে তারা চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানান।
ডা. রিজওয়ানুর রহমান বলেন, আমি দুপুরে দুবার তাদের চিকিৎসার জন্য গিয়েছি। প্রথমবার তাদের দেখে বুঝলাম শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। একজনের ডিহাইড্রেশন হয়েছে। তবে তারা আমাকে ঠিকমতো চিকিৎসা দিতে দেয়নি। পরেরবার যখন গিয়েছিলাম তখন তারা আমাকে চলে যেতে বলে এবং তারা চিকিৎসা নেবে না বলে জানায়। এক্ষেত্রে রোগী যদি চিকিৎসা নিতে অস্বীকৃতি জানায় তাহলে তো আমার কিছু করার থাকে না।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অবমাননাকারীদের অবিলম্বে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা, বিশ্ববিদ্যালয় ও জাতীয় আইনে জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা এবং দীর্ঘদিন পার হলেও জড়িতদের ব্যবস্থা গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের উদাসীনতা তদন্ত করার তিন দফা দাবিতে অনশনে বসেন তারা।
অনশনের বিষয়ে এনামুল হক এনাম বলেন, বঙ্গবন্ধুর ছবি মুছে ফেলার ৮ দিন পরই তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। প্রশাসনের উচিত ছিল মুছে ফেলার সঙ্গে সঙ্গেই ব্যবস্থা নেওয়া। যেহেতু ছবি মুছে ফেলার সঙ্গে জড়িতরা বিষয়টি স্বীকার করেছেন সেহেতু উচিত ছিল তৎক্ষণাৎ ব্যবস্থা নেওয়া। প্রশাসন এত দেরিতে তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু করায় আমার সংশয় ছিল বিচারেও গড়িমসি হতে পারে। এজন্য আমি শুরু থেকেই অনশনে বসেছি। দাবি মেনে না নেওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাব।
গ্রাফিতি মুছে ফেলার ঘটনায় গত ১৩ ফেব্রুয়ারি রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক আব্দুল্লাহ হেল কাফীকে আহ্বায়ক করে চার সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক খন্দকার শামীম আহমেদ ও চারুকলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এম এম ময়েজউদ্দীন। এ ছাড়া কমিটিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন-২) এ বি এম আজিজুর রহমানকে সদস্য-সচিব করা হয়েছে।
তদন্তের অগ্রগতি সম্পর্কে তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক আবদুল্লাহ হেল কাফী জানান, তদন্তের কাজ খুব দ্রুত চলছে। আশা করি আগামী ২০ তারিখ আমরা একটা ফলাফল জানাতে পারব।
সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর আ স ম ফিরোজ-উল-হাসান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। ব্যাঙ্গচিত্রটি মুছে এরইমধ্যে বঙ্গবন্ধুর ছবি আঁকা হয়েছে। এটাও তদন্তের একটি প্রক্রিয়া। আশা করছি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে পারব।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানবিক অনুষদ ভবনের দেয়ালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের একটি দেয়ালচিত্র আঁকা ছিল। তবে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া ধর্ষণকাণ্ডের পর গত ৭ ফেব্রুয়ারি রাতে সেখানে বঙ্গবন্ধুর দেয়ালচিত্র মুছে একটি গ্রাফিতি অঙ্কন করে ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের একাংশের নেতাকর্মীরা। পরে ১৩ ফেব্রুয়ারি গ্রাফিতিটি মুছে দেওয়া হয়।
মন্তব্য করুন