ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৭:৪৮ পিএম
আপডেট : ২৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৯:৩৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

নিরাপত্তার দাবিতে বুয়েটে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন

জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। ছবি : কালবেলা
জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বুয়েটের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। ছবি : কালবেলা

ক্যাম্পাসে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন বুয়েটের বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেলে স্মারকলিপি দেওয়ার পর বুয়েট শহীদ মিনারের সামনে সংবাদ সম্মেলন করেন তারা।

স্মারকলিপি দেওয়া শিক্ষার্থীরা বলেন, গত ৩০ মার্চ বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় (বুয়েট) ক্যাম্পাসে ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে শুরু হওয়া আন্দোলনে ইসলামী ছাত্রশিবির ও নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মতো সংগঠনের ইন্ধন রয়েছে বলে দাবি জানিয়েছিলেন মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পাঁচ শিক্ষার্থী।

একইসঙ্গে, ক্যাম্পাসে মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তির হয়ে যিনিই কথা বলছেন, তাকেই ‘ছাত্রলীগ’ ট্যাগ দিয়ে বারবার অত্যাচার ও সামাজিকভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে। এসব অভিযোগের তদন্ত এবং ক্যাম্পাসে নিজেদের জীবনের নিরাপত্তা চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার বরাবর স্মারকলিপি জমা দিয়েছেন তারা।

শিক্ষার্থীরা লিখিত বক্তব্যে অভিযোগ করে বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে একটি নির্দিষ্ট গোষ্ঠীর দ্বারা প্রায়ই অনলাইন ও সরাসরি হেনস্তা বা অপমানের শিকার হয়েছি। গত ২০২৩ সালে সুনামগঞ্জে আটককৃত ২৪ বুয়েট শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে যে মামলা হয়, আমরা একটি মানববন্ধনের মাধ্যমে দোষীদের সুষ্ঠু বিচার প্রার্থনা করি। মানববন্ধনে দাঁড়ানোর কারণে সব ছাত্রদের ডেকে ডেকে জবাবদিহিতা চাওয়া হয় হল বা ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ব্যাচ ও যার যার নিজ নিজ ব্যাচের ছাত্রদের দ্বারা। বিভিন্নভাবে হলে সিট বাতিল অথবা টার্ম বহিষ্কারের ভীতি প্রদর্শন করে অরিত্র ঘোষ এবং মিশু দত্তকে আহসান উল্লাহ হলের কমন রুমে এবং মাঠে জবাবদিহিতা চাওয়া হয়। একই সঙ্গে ক্যাম্পাসে কিছু মানুষ দ্বারা অসংলগ্ন আচরণ আমাদের অপমানের সামিল।

তারা বলেন, রাতে একসঙ্গে কাচ্চি খাওয়ার এক ঘটনাকে কেন্দ্র করে মিথ্যাচারের মাধ্যমে সবার সামনে অপরাধী বানিয়ে আমাদের ওপর যে মব জাস্টিস শুরু করে তা আমরা উপাচার্য বরাবর জমা দিয়েছিলাম। তিনি আমাদের আশ্বাস দিলেও আজ পর্যন্ত তার কোনোরূপ তদন্ত রিপোর্ট বা দোষীদের ওপর শাস্তি আরোপ হতে দেখিনি। যার ফলে, নিপীড়ন ও সামাজিকভাবে আমাদের হেনস্তা করার দিনের পর দিন তারা নতুন নতুন ধরন বের করা শুরু করে। যেমন প্রথমে সব গ্রুপগুলো থেকে বের করে দেওয়া হয়। যাতে আমরা তথ্য ঘাটতির কারণে বিশ্ববিদ্যালয়ের চলমান গতির সঙ্গে খাপ খাইয়ে যেতে না পারি, ক্লাবগুলো থেকে বের করে দিয়ে সাংস্কৃতিক অঙ্গন থেকে দূর করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া, খেলাধুলা এমনকি যে কোনো ধরনের অনুষ্ঠান থেকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে মানসিকভাবে অত্যাচার চালানো এবং স্টাডি ম্যাটেরিয়ালস শেয়ার না করার জন্য ঘোষণা করে একটি দল সাধারণ শিক্ষার্থীদের ওপর তাদের মতামত চাপিয়ে দেয়। কেউ যদি না মানে তাকেও হেনস্তা করা হবে বলে হুমকি পর্যন্ত দেওয়া হয়।

শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, আমরা বুয়েট ক্যাম্পাসে হিজবুত তাহরীর ও শিবিরের মতো মৌলবাদী সংগঠনের সক্রিয়তার ব্যাপারে অভিযোগ করেছিলাম। আমাদের সেই অভিযোগের সত্যতা আজ বুয়েটের সিসিটিভি ফুটেজ দিয়েছে। সেই সিসিটিভি ফুটেজে যাদের দেখা গেছে তাদের বিরুদ্ধে খুব তাড়াতাড়ি ব্যবস্থা নিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের কাছে অনুরোধ জানাই। এ ছাড়াও, টাঙ্গুয়ার হাওরে যারা রাষ্ট্রবিরোধী ষড়যন্ত্রের সঙ্গে সংযুক্ত থাকার মামলার আসামি তাদের সঙ্গে একই ক্যাম্পাসে একসঙ্গে থাকাটা আমাদের জীবনের জন্য হুমকি। জঙ্গিবাদের সিক্রেট গ্রুপে আমাদের নাম ও পরিচয় উন্মোচন আমাদের জন্য ভীতিকর। আমরা ধারণা করি, আমাদের পরিচয় সেখানে উন্মোচিত করার সঙ্গে অবশ্যই বুয়েটের কেউ সংযুক্ত। কে বা কারা এটা করছে এই বিষয়ে লক্ষ্যপাত করার জন্য অনুরোধ জানাই।

প্রসঙ্গত, ২০১৯ সালের অক্টোবরে বুয়েটের এক আবাসিক হলে শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে ছাত্রলীগের এক নেতার কক্ষে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। সেই ঘটনায় ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বুয়েটে নিষিদ্ধ হয় ছাত্র রাজনীতি। এরপর থেকে গত সাড়ে চার বছর এখানে সব সংগঠনের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ ছিল। এর মধ্যেই গত মাসে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি ও দপ্তর সম্পাদকসহ একদল নেতাকর্মী ক্যাম্পাসে প্রবেশ করলে পরের দিন নতুন করে আন্দোলনে নামেন শিক্ষার্থীরা।

তাদের দাবি, বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধিমালা লঙ্ঘন করে পুরকৌশল বিভাগের ২১তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ইমতিয়াজ রাব্বি এ ঘটনার জন্য দায়ী। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন রাব্বির সিট বাতিল করলে বুয়েটে ফের ছাত্ররাজনীতি ফেরানোর দাবিতে সমাবেশ আয়োজন ও এরপর প্রকাশ্যে নেতাকর্মী নিয়ে গত ৩১ মার্চ ক্যাম্পাসে প্রবেশ করে ছাত্রলীগ। এরপরের দিন ছাত্ররাজনীতিতে নিষেধাজ্ঞার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বহিষ্কৃত শিক্ষার্থী রাব্বির হাইকোর্টে করা রিট মামলার প্রেক্ষিতে নিষেধাজ্ঞার রাজনীতি আদেশ স্থগিত করেন বিচারপতি মো. খসরুজ্জামান ও বিচারপতি কে এম জাহিদ সারওয়ারের বেঞ্চ।

অন্যদিকে, গত ৩১ মার্চ থেকে চলতি মাসের ৩ এপ্রিল পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা নিজেদের দাবিতে অনড় থেকে ক্লাস-পরীক্ষায় অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিলেন। এরপর ঈদুল ফিতর ও নববর্ষের ছুটি শেষে গত ১৭, ১৮ ও ২০ এপ্রিল কয়েক ব্যাচের অনুষ্ঠিত পরীক্ষা প্রায় শতভাগ শিক্ষার্থী বর্জন করে। যার প্রেক্ষিতে পূর্ব নির্ধারিত সব পরীক্ষা স্থগিত ঘোষণা করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে প্রধান শিক্ষক বরখাস্ত

তাপপ্রবাহ বইছে ৫৮ জেলায়, ২ দিনের সতর্কবার্তা

ভালোবাসার টানে ঝিনাইদহে ফিলিপাইনের তরুণী

নায়িকা ববি পরেন ২ লাখ টাকার ট্রাউজার

হঠাৎ অবসরের ঘোষণা ভারতীয় অধিনায়কের

ঢাকা ছাড়লেন ডোনাল্ড লু

আর্জেন্টিনার শক্তিশালী দল ঘোষণা

নন-ক্যাডার কোটায় সিনিয়র সহকারী সচিব হলেন ৮ কর্মকর্তা

ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আগুন

গাজার পথে ব্রিটিশ ত্রাণবাহী জাহাজ

১০

আমেরিকায় থেকে গ্রামে গড়ে তুলেছেন গরু-দুম্বার খামার

১১

সৌদি আরবে পৌঁছেছেন ২১০৬৩ হজযাত্রী

১২

পশ্চিমাদের বিরুদ্ধে সম্পর্ক গভীর করতে চীনে পুতিন

১৩

শেখ হাসিনার প্রত্যাবর্তন দিবস / শুক্রবার আ.লীগের একগুচ্ছ কর্মসূচি

১৪

সোনারগাঁয়ে ৫০০ বছরের ঐতিহ্যবাহী ‘পাগলা গাছ’র মেলা

১৫

সুখবর নেই ঢাকার বাতাসে

১৬

সিনিয়র সহকারী সচিব হলেন ২০১ কর্মকর্তা

১৭

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর কাছে তুলাধুনা হলেন নেতানিয়াহু

১৮

ফিলিস্তিনি জনসংখ্যার এই চিত্র কি আল্লাহর রহমত?

১৯

মেসিহীন মায়ামি গোলও পায়নি

২০
X