চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) নিরাপত্তা দপ্তর থেকে জিহাদি বই উদ্ধার করেছে প্রক্টরিয়াল বডি। এ বিষয়ে (২৫ মে) শনিবার তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে বলে জানিয়েছে চবি প্রশাসন।
এর আগে রোববার (১৯ মে) নিরাপত্তা দপ্তরের ঊর্ধ্বতন সহকারীর টেবিল থেকে এসব বই উদ্ধার করেন প্রক্টরিয়াল বডির সদস্যরা।
শুক্রবার (২৪ মে) তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি কালবেলাকে জানিয়েছেন চবির ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার কে এম নূর আহমদ। তিনি বলেন, এ বিষয়ে একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। আগামীকাল এ নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। জানা গেছে, গত ১৯ মে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা দপ্তরে বহিরাগত বেপরোয়া মোটরসাইকেলের চালকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে যান কিছু শিক্ষার্থী। এ সময় তারা নিরাপত্তা দপ্তরের দ্বিতীয় তলায় ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের টেবিল ও বুক শেলফে জিহাদি বই দেখতে পান। তাৎক্ষণিক তারা এ বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে অবহিত করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর রিফাত রহমানের নেতৃত্ব অভিযান চালিয়ে এসব জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়। পরদিন (২০ মে) নিরাপত্তা দপ্তরে উপস্থিত শিক্ষার্থীরা প্রক্টর অফিসে গিয়ে নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়া ও ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের বিরুদ্ধে জামায়াত সংশ্লিষ্টতার প্রমাণ সংযুক্ত করে লিখিত অভিযোগ দেন।
এর আগে বৃহস্পতিবার (২৩ মে) বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের ১৫ থেকে ২০ নেতাকর্মী দুপুর ১টার দিকে প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়ার কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। পরে সহকারী প্রক্টর লিটন মিত্র ও হেলাল উদ্দিন আহমেদ গিয়ে গোলাম কিবরিয়াকে উদ্ধার করেন।
অভিযোগের বিষয়ে ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুল হুদা লোটাস বলেন, আমরা ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের বেপরোয়া মোটরসাইকেলের বিরুদ্ধে অভিযোগ দিতে নিরাপত্তা দপ্তরে যাই। সেখানে গিয়ে দেখি ঊর্ধ্বতন সহকারী ফেরদৌসের টেবিলে অসংখ্য জিহাদি বই। পরে আমরা প্রক্টর স্যারকে অবহিত করি। কিন্তু সেখানে গিয়ে আমরা এরকম অনাকাঙ্ক্ষিত চিত্র দেখতে পাবো ভাবিনি। সেখানে কিছু জিহাদি ও আবুল আলা মওদুদীর বই দেখতে পাই। এরপরে তাৎক্ষণিক প্রক্টর স্যারকে অবহিত করলে সেখান থেকে এই জিহাদি বইগুলো উদ্ধার করেন।
এ ছাড়াও নিরাপত্তা দপ্তরের ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌস লোকজনকে টাকা ধার দেওয়ার বিনিময়ে সুদ নিয়ে থাকেন। এ কাজে বিনিয়োগ রয়েছে নিরাপত্তা দপ্তরের প্রধান ও ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার।
বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক একাধিক কর্মচারী অভিযোগ করে জানান, ১০ হাজার টাকা এক সপ্তাহের জন্য নিলে বিনিময়ে সুদ দিতে হয় এক হাজার। ১ লাখ টাকায় সপ্তাহ শেষে সুদ দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌসের কাছ থেকে এই সুদের হারে ঋণ নিয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মচারীরা। ২০ হাজারের উপরে ঋণ নিতে গেলে অনুমোদন লাগে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার। ঋণ গ্রহণের সময় নির্দিষ্ট অংকের চেক নিয়ে থাকেন ঊর্ধ্বতন সহকারী মো. ফেরদৌস। সুদের এই ব্যবসা গোটা ক্যাম্পাসজুড়ে ‘ওপেন সিক্রেট’। মাঝে মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় নিরাপত্তা দপ্তরে সুদ আদায় নিয়ে দ্বন্দ্ব হলে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার নেতৃত্বে বসতো বৈঠক। সুদ আদায়ে নিরাপত্তা প্রধান হিসেবে অসহায় কর্মচারীদের উপর ভয়ভীতি দেখিয়ে চাপ তৈরি করার অভিযোগও রয়েছে ডেপুটি রেজিস্ট্রার গোলাম কিবরিয়ার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে নিরাপত্তা দপ্তর প্রধান গোলাম কিবরিয়ার মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও সাড়া পাওয়া যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. ওয়াহিদুল আলম বলেন, কয়েকজন শিক্ষার্থীর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে নিরাপত্তা দপ্তরের একজন ঊর্ধ্বতন সহকারীর টেবিল থেকে জিহাদি বই উদ্ধার করা হয়েছে। তারা নিরাপত্তা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমার কাছে অভিযোগ করেছে। আমি তাদেরকে রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ দিতে বলেছি। যেহেতু কর্মকর্তা, কর্মচারীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, সেহেতু এই বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষই সিদ্ধান্ত নেবে।
মন্তব্য করুন