ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ২৬ মে ২০২৪, ১০:১২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

ঢাবি শিক্ষার্থীকে সাইবার বুলিংয়ের অভিযোগ ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে 

অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবি। ছবি : কালবেলা
অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা রবিউল ইসলাম রবি। ছবি : কালবেলা

সম্প্রতি গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংসদের আহ্বায়ক কমিটির সদস্য মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদকে সাংগঠনিক শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করেছে সংগঠনটি। এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে যৌন হয়রানির কারণে তাকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সামাজিক মাধ্যমে অপপ্রচারের মাধ্যমে সাইবার বুলিং করার অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রলীগ নেতার বিরুদ্ধে।

এ ঘটনায় বুলিংয়ের শিকার হওয়া শিক্ষার্থী শঙ্কিত হয়ে শাহবাগ থানায় গতকাল (২৫ মে) একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন, পাশাপাশি আজ রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর বরাবর একটি অভিযোগপত্রও দিয়েছেন। এ ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেতা হলেন- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক রবিউল ইসলাম রবি। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ও সলিমুল্লাহ মুসলিম হলের আবাসিক শিক্ষার্থী।

অন্যদিকে, মুসাদ্দিক বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। তিনি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলের অনাবাসিক। তাকে বিভিন্ন সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘটা নানা অন্যায়-অনিয়ম, গেস্টরুম ও গণরুমের বিরুদ্ধে বিভিন্ন কর্মসূচিতে এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কথা বলতে দেখা যায়। তিনি অনেক সময় ছাত্রলীগেরও সমালোচনা করে থাকেন।

জানা গেছে, গত ২৩ মে ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ’ নামক ফেসবুক গ্রুপে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণরুম-গেস্টরুমের বিরুদ্ধে একটি স্ট্যাটাস দেন মুসাদ্দিক। সেই স্ট্যাটাসের কমেন্ট বক্সে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ তুলেন ছাত্রলীগ নেতা রবি। এরপরের দিন (শুক্রবার) একই অভিযোগ তুলে গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি থেকে মুসাদ্দিককে বহিষ্কারের বিজ্ঞপ্তির ছবি শেয়ার করে গ্রুপটিতে একটি স্ট্যাটাস দেন রবি। এতে তিনি লেখেন, একজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করার জন্য মুসাদ্দিককে বহিষ্কার করা হয়েছে। এমন সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাই।

গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তির আহ্বায়ক কমিটির যুগ্ম সদস্য সচিব আব্দুল হান্নান মাসুদ এই স্ট্যাটাসে মন্তব্যের ঘরে লিখেন, যৌন হয়রানির কোন অভিযোগ গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি পায়নি। মুসাদ্দিককে সংগঠনের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে বহিষ্কার করা হয়েছে।

প্রতিবাদ জানিয়ে সংগঠনটির সদস্য হাসিব আল ইসলাম বলেন, সাংগঠনিক শৃঙ্খলাভঙ্গ ও আদর্শ পরিপন্থি কাজের জন্য তাকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হয়েছে। যৌন হয়রানির কোনো অভিযোগ তার সম্পর্কে আমরা পাইনি। এ রকম পোস্ট করা মানহানির সমতুল্য।

শাহবাগ থানায় করা সাধারণ ডায়েরি ও প্রক্টর বরাবর দেওয়া অভিযোগপত্রে ভুক্তভোগী মুসাদ্দিক বলেন, গত মে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী সংসদ নামক গ্রুপে রবিউল ইসলাম রবি আমাকে উদ্দেশ্য করে কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য সম্বলিত পোস্ট করেন। তিনি ওই পোস্টে গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির একটি বিজ্ঞপ্তি যুক্ত করে তাতে লেখেন, আমি নাকি, একজন ছাত্রীকে যৌন হয়রানি করেছি। যা সম্পূর্ণ বানোয়াট এবং মিথ্যাচার এবং আমার জন্য অত্যন্ত মানহানিকর। পোস্টে উল্লেখিত গণতান্ত্রিক ছাত্র শক্তির সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে অত্যন্ত বিপর্যস্ত। আগামী মাসে আমার সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা অথচ আমার পড়াশোনা অত্যন্ত বাজেভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

কালবেলাকে ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থী বলেন, রবিউল ইসলাম রবি যে অভিযোগ দিয়েছেন তা সম্পূর্ণই মনগড়া, ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা একটা অপবাদ। এ ধরনের কোনো অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে আমার কোনোদিন সংশ্লিষ্টতা ছিল না এবং ভবিষ্যতেও থাকবে না।

তিনি আরও বলেন, গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তিসহ কোনো ধরনের রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আমার সংশ্লিষ্টতা অতীতে কোনোদিন ছিল না, বর্তমানেও নেই। তবে একজন ক্যাম্পাস এক্টিভিস্ট হিসেবে যে কোনো অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানানোকে আমি আমার নৈতিক দায়িত্ব বলে মনে করি। সে কারণে সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্র ফেডারেশন, ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ইউনিয়নসহ যে কোনো সংগঠন বা কেউ কোনো অন্যায়ের প্রতিবাদ জানালে আমি তার সঙ্গে সংহতি প্রকাশ করি। এ কারণে ছাত্র শক্তি বা বিভিন্ন সংগঠন আমাকে তাদের সংগঠনে অন্তর্ভুক্ত করতে চেয়েছে। গণতান্ত্রিক ছাত্রশক্তি আমাকে কখন তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করেছে সে ব্যাপারে আমি জানিই না আর কেন বহিষ্কার করেছে সে ব্যাপারেও কিছু জানি না। আমার ধারণা, তাদের সাংগঠনিক নিয়মনীতির সঙ্গে আমার এক্টিভিটি না মেলার কারণে আমাকে বহিষ্কার করেছেন। কিন্তু তারা নিজেরাও এ ব্যাপারে একমত যে, যৌন হয়রানি বা এ ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে আমার কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। এটাকে পুঁজি করেই রবিউল ইসলাম রবি আমার নামে এসব অপপ্রচার চালিয়েছে। আমি তার বিরুদ্ধে আইনগত পদক্ষেপ নিব।

অভিযুক্ত রবিউল ইসলাম রবি কালবেলাকে বলেন, আমি প্রথমে যেভাবে শুনেছিলাম, সেভাবেই পোস্ট করেছিলাম। পরে যখন জানতে পারলাম বিষয়টি সত্য নয়, তখন ডিলিট দিয়েছি।

এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, মুসাদ্দিক নামে এক শিক্ষার্থীর কাছ থেকে আমরা একটি অভিযোগ পেয়েছি। এটা নিয়ে আমরা কাজ করব এবং খোঁজ-খবর নিয়ে ব্যবস্থা নিব।

তিনি আরও বলেন, আমরা সাধারণত যে অভিযোগগুলো পাচ্ছি তার অধিকাংশই সাইবার ইস্যু সংবলিত। আমার মনে হয়, এ বিষয়ে জোরালোভাবে কাজ করতে আমাদের কিছু নীতিমালা ও আলাদা টিম গঠন সম্পর্কে ভাবতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বদলে গেল বিপিএল শুরুর সময়

তিন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে সিইসির বৈঠক রোববার

বিএনপি সব ধর্মের সমান অধিকার প্রতিষ্ঠার রাজনীতি করে : ড. মারুফ

মস্তকবিহীন মরদেহ উদ্ধার, মিলল চাঞ্চল্যকর তথ্য

সেনা কর্মকর্তাসহ ১৭ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের আদেশ আজ

মিরপুরে এনসিপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলা

বগুড়ায় স্কুলছাত্র নিখোঁজ

ভেনেজুয়েলা উপকূলে আরেক তেল ট্যাংকার জব্দ করল যুক্তরাষ্ট্র

গাজায় সংযম দেখানোর আহ্বান যুক্তরাষ্ট্রসহ চার দেশের 

সুখবর পেলেন ছাত্রদল নেতা

১০

দক্ষিণ লেবাননে ইসরায়েলের ড্রোন হামলা

১১

২১ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

১৩

সীমান্তে বাঘ আতঙ্ক, সত্যি নাকি গুজব

১৪

নদীর পাড়ে ব্যবসায়ীর মরদেহ, পকেটে মদপানের লাইসেন্স 

১৫

হাদির মরদেহ জন্মভূমিতে না নেওয়ায় মর্মাহত এলাকাবাসী 

১৬

ফেরি থেকে নদীতে পড়ল ৫ যানবাহন, ৩ মরদেহ উদ্ধার

১৭

অস্ত্র-গুলিসহ শীর্ষ সন্ত্রাসী বুইস্যা গ্রেপ্তার

১৮

প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারে হামলার ঘটনায় অনলাইন এডিটরস অ্যালায়েন্সের নিন্দা

১৯

আ.লীগ নেতা ক্যাপ্টেন এম মোয়াজ্জেম আটক

২০
X