জাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৯ জুন ২০২৪, ০৫:৫৮ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

জাবিতে লেক ভরাট করে ভবন নির্মাণের পাঁয়তারা

বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মেইন বার্ডস’ খ্যাত লেক ভরাট করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছবি : কালবেলা
বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মেইন বার্ডস’ খ্যাত লেক ভরাট করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ছবি : কালবেলা

দৃষ্টিনন্দন লেক আর সবুজে ঘেরা প্রকৃতির মাঝে অতিথি পাখির কোলাহল আর বন্যপ্রাণীর অভয়ারণ্য হিসেবে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় বেশ পরিচিত। কিন্তু মাস্টারপ্ল্যান ছাড়াই একের পর এক ভবন নির্মাণে বর্তমানে প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে।

কোনোরকম পরিকল্পনা ছাড়াই বন উজাড় করে ভবন নির্মাণ যেন এখানে অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। এবার তার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে লেক ভরাট করে নতুন কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণ।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালে ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন’ প্রকল্পটি জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) পাস হয়। সে সময় মাস্টারপ্ল্যান না থাকায় পরিবেশবাদী সংগঠন ও সচেতন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জোরালো আন্দোলন ও প্রতিবাদ গড়ে তুললেও তা উপেক্ষা করে প্রশাসন প্রকল্পে ১ হাজার ৪৪৫ কোটি টাকা ব্যয়ে ২১টি অবকাঠামো নির্মাণ শুরু করে। ইতোমধ্যে ছয়টি ১০ তলাবিশিষ্ট হলের নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে।

এসব ভবন নির্মাণ করতে গিয়ে ৩ হাজারের বেশি গাছ কাটার পর এবার লেক ভরাট করতে শুরু করেছে প্রশাসন। মহাপরিকল্পনা (মাস্টারপ্লান) না করে যত্রতত্র গাছ কেটে ও লেক ভরাট করে ভবন না করতে গত কয়েক বছর ধরে আন্দোলন করে আসছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের একটি অংশ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবনের জন্য ৪৭ কোটি ৯৮ লাখ ৯৭ হাজার ৩৮৮ টাকা ব্যয়ে ছয় তলা ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। জায়গাটির পশ্চিম পাশে লেক এবং পূর্ব পাশে মূল সড়ক এবং দক্ষিণ পাশে নতুন প্রশাসনিক ভবন রয়েছে। গত ২ জুন ভবনটি নির্মাণ করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘মেইন বার্ডস’ খ্যাত লেকের পাশেই প্রায় ২০০ গাছ কাটার পর এবার লেকের একাংশ ভরাট করা শুরু করেছে প্রশাসন।

এ ভবনটি ছাড়াও ভারত এবং বাংলাদেশের যৌথ অনুদানের মোট ৯৭ কোটি ৮৯ লাখ ১৭ হাজার টাকা ব্যয়ে ১২০ কাটা জমির ওপর চারুকলা অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন করা হবে। এটি তৈরির সময়ও লেকের অপরপাশ ভরাটের আশঙ্কা রয়েছে।

পরিবেশ সংরক্ষণ আইন (২০১০ সালে সংশোধিত) অনুযায়ী, যে কোনো ধরনের জলাশয় ভরাট করা নিষিদ্ধ। জলাধার সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী, কেউ আইনের বিধান লঙ্ঘন করলে অনধিক পাঁচ বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা যাবে। শাস্তি প্রদানের পাশাপাশি আইন অমান্যকারীর নিজ খরচে সেটি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে দেওয়ার বিধানও আছে।

লেক সংরক্ষণ কমিটির অন্যতম সদস্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক মো. জামাল উদ্দীন বলেন, আমি নিজে জায়গাটি পরিদর্শন করেছি। লেকের একটি অংশ ভরাট করে ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয়েছে সেটি আইনত অবৈধ এবং দণ্ডনীয় অপরাধ। এভাবে লেক ভরাট করে ভবন নির্মাণ করার বিরূপ প্রভাব বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট সকলের ওপর পড়বে। যার দায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বছরের শেষের দিকে উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম একটি মহাপরিকল্পনা তৈরি করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এ জন্য একটি টেকনিক্যাল ম্যানেজমেন্ট কমিটি (টিএমসি) করা হয়েছিল। তবে সেটি বাস্তবায়ন হওয়ার আগেই আরও কয়েকটি স্থাপনা নির্মাণের আয়োজন করেছে কর্তৃপক্ষ।

এরই মধ্যে জলাশয় ভরাট করে নতুন কলা ও মানবিক অনুষদের সম্প্রসারিত ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করেছে প্রশাসন। আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের মাস্টারপ্লানের দাবি বর্তমান প্রশাসন তোয়াক্কা না করে নির্বিচারে গাছ কেটে যত্রতত্র ভবন নির্মাণের পর এবার জলাশয়ের দিকে নজর দিয়েছেন। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ ইতোমধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে। লেক ভরাট করে ভবন নির্মাণের কারণে নতুন সংকট সৃষ্টি হবে বলে তাদের আশঙ্কা।

ছাত্র ইউনিয়ন জাবি সংসদের সভাপতি আলিফ মাহমুদ বলেন, অর্থলিপ্সু বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যত্রতত্র অযাচিত ভবন নির্মাণের প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। একের পর এক বন উজাড় করার পর এবার তারা লেকগুলোর দিকে কুদৃষ্টি দিয়েছে। আমরা বারবার লেক পরিষ্কারের কথা বললেও প্রশাসন সেসব আমলে না নিয়ে উল্টো লেক ভরাটের পাঁয়তারা শুরু করেছে। এভাবে চলতে থাকলে অচিরেই এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ ধ্বংস হয়ে যাবে।

কলা ও মানবিক অনুষদের ডিন অধ্যাপক মো. মোজাম্মেল হক বলেন, আমি এখনো সেখানে যাইনি। জায়গা পরিদর্শন করে তারপর এ বিষয়ে কথা বলতে পারব। তার আগে কোনো বক্তব্য দিতে চাই না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিকতর উন্নয়ন প্রকল্প পরিচালক মো. নাসিরউদ্দীন বলেন, এ বিষয়ে আমার টেকনিক্যাল টিমের পরামর্শ ছাড়া কথা বলতে পারব না। তাদের সঙ্গে বসে আলাপ করে বিষয়টি জানার চেষ্টা করব। তবে এমনটি হওয়া কাম্য নয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘ভারতে পরমাণু হামলা চালাও, ট্রাম্পকে হত্যা করো’ লেখা বন্দুক দিয়ে হামলা

এসএসসি পাসেই জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরি

ইউআইইউতে রিসার্চ অ্যান্ড ইনোভেশন সপ্তাহ অনুষ্ঠিত

শহীদ কাদরী: নগরসভ্যতার অন্তরালে এক কবির অনন্ত যাত্রা

ডাকসু ও হল সংসদ নির্বাচনে ১০ দফা ইশতেহার ঘোষণা ছাত্রদলের

ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি রিসার্চ সোসাইটির আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু

নববধূর আত্মীয়ের হাতে বরের মৃত্যু, আনন্দ প্রকাশেই ছুড়েছিলেন গুলি

জাতীয় পর্যায়ে কোরআন প্রতিযোগিতায় প্রথম বাউফলের বুশরা

১৮ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বুয়েটের সব পরীক্ষা স্থগিত

বিইউবিটিতে ‘সেরা শিক্ষক পুরস্কার ২০২৫’ প্রদান 

১০

নামাজরত ব্যক্তির কতটুকু সামনে দিয়ে হাঁটা যাবে?

১১

‘কমপ্লিট শাটডাউনে’ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলো

১২

‘মঞ্চ ৭১’র অনুষ্ঠানে উত্তেজনা : লতিফ সিদ্দিকীসহ কয়েকজন আটক

১৩

মেসিকে নয়, আর্জেন্টাইন লিগে নেইমারকেই চান ডি মারিয়া

১৪

সাবিলা নূর কেন চুপ ছিলেন?

১৫

এক যুগ পর বাড়ি ফিরলেন ওমান ফেরত মানসিক ভারসাম্যহীন সুমন

১৬

এইডস রোগীদের বাঁচাতে টিকা আনছে রাশিয়া

১৭

বিদেশি শিক্ষার্থী ও সাংবাদিকদের মার্কিন ভিসা নিয়ে দুঃসংবাদ

১৮

পরিচালক নয়, সভাপতি হয়েই বিসিবিতে ফিরতে চান তামিম

১৯

তিশাকে কোলে তুলতে গিয়ে হাত ভেঙেছিল: তৌসিফ মাহবুব

২০
X