রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষার প্রকাশিত ফলে কম নম্বর দেওয়ার অভিযোগ তুলেছেন ভর্তিচ্ছু অনেক শিক্ষার্থী। কলা, আইন, সামাজিকবিজ্ঞান, চারুকলা অনুষদভুক্ত বিভাগগুলো এবং শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউট এই ইউনিটের অন্তর্ভুক্ত। কম নম্বর দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ পাওয়া গেছে অন্তত অর্ধশত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী ফল চ্যালেঞ্জ করে পুনঃমূল্যায়নের জন্য লিখিত আবেদন করেছেন। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও চলছে জোর সমালোচনা।
জানা গেছে, গত ৬ মার্চ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩-২৪ সেশনের স্নাতক প্রথমবর্ষের এ ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয় গত ১৩ মার্চ। সেদিন রাবির জনসংযোগ দপ্তর থেকে পাঠানো বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়- এ ইউনিটের মোট পরীক্ষার্থী ৭৪ হাজার ৭৮৫ জনের মধ্যে ৬৮ হাজার ৬০৭ জন পরীক্ষায় উপস্থিত হয়। এর মধ্যে ২৬ হাজার ৫৯১ জন পাস করে। মোট পরীক্ষার্থীর মধ্যে পাসের হার ৩৮ দশমিক ৭৬ শতাংশ।
ভর্তিচ্ছুদের অভিযোগ, পরীক্ষার পর তারা বিভিন্ন কোচিংয়ের বই ও পাঠ্যবই থেকে প্রশ্নোত্তর খুঁজে বের করেছেন। কিন্তু প্রকাশিত ফলে তারা প্রত্যাশিত নম্বর পাননি। তারা বলছেন, প্রকাশিত ফলে ৫ থেকে ২২ নম্বর পর্যন্ত পার্থক্য হয়েছে। যা অপ্রত্যাশিত অ্যাখ্যা দিয়ে ফল পুনঃমূল্যায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
খুলনা থেকে ভর্তিচ্ছু সাদিয়া আক্তার বর্ষা কালবেলাকে বলেন, পরীক্ষা দিয়ে আসার পর প্রশ্নের উত্তর মিলিয়ে দেখি ৭৮ পাব। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখি ৬৩ নম্বর পেয়েছি। ফলে আমি হয়েছি ৪৭৭তম। কিন্তু ঠিকমতো উত্তরপত্র মূল্যায়ন হলে আমার ৫০এর মধ্যে থাকার কথা। ৪-৫ নম্বর এদিক-সেদিক হতেই পারে, কিন্তু ১৫ নম্বর কম কীভাবে হয়? আমার মনে হয়, প্রতি প্রশ্নের মান ১ ধরে ওএমআর মূল্যায়ন করা হয়েছে। তাছাড়া এমনটা হওয়ার কথা নয়।
তরিকুল ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, প্রশ্নের উত্তর মিলিয়ে দেখেছি ৬৫ নম্বর পাওয়ার কথা। কিন্তু ফল প্রকাশের পর দেখি ৪৯ পেয়েছি। যা খুবই অপ্রত্যাশিত। যেসব প্রশ্নের উত্তরে সন্দেহ রয়েছে সেগুলো বাদ দিলেও ৬০ এর বেশি পাওয়ার কথা। তিনি বলেন, ৭০টা প্রশ্নের উত্তর করেছি, যার মধ্যে ভুল হয়েছে ১৬টি। শতভাগ নিশ্চিত হয়েই বলছি, উত্তরপত্র মূল্যায়নে কোনো সমস্যা হয়েছে।
সুমাইয়া খাতুন নামে এক শিক্ষার্থী বলেন, উত্তরপত্র যাচাই করে দেখেছি ৫০ এর বেশি পাওয়ার কথা। কিন্তু আমি পেয়েছি ২৬.২৫ নম্বর। আমাকে পরীক্ষায় অকৃতকার্য দেখানো হয়েছে। কয়েক নম্বর এদিক-সেদিক হতেই পারে, তাই বলে ২২ নম্বর কম কীভাবে হয়? তারা নম্বর যোগ করার ক্ষেত্রে ভুল করে থাকতে পারে।
মো. শরীফুল ইসলাম নামের একজন শিক্ষার্থী বলেন, যেসব প্রশ্নে সন্দেহ রয়েছে সেগুলো বাদ দিলেও ৬০ পাওয়ার কথা। কিন্তু ফলে এসেছে ৪৯। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে এমনটি হয়েছে। সেজন্য আমি ফল পুনঃমূল্যায়নের আবেদন করেছি।
তৌফিক ইসলাম নামের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমার ৭০ নম্বর আসার কথা। এটা বহুভাবে মিলিয়ে দেখেছি। এর কম আসার সম্ভাবনা নেই। কিন্তু আমি পেয়েছি ৬১। এতে আমি অনেক পিছিয়ে পড়েছি। এজন্য ফল পুনঃমূল্যায়নের আবেদন করেছি। কিন্তু সেই আবেদন গ্রহণেও তাড়া গড়িমসি করেছে।
জানতে চাইলে ‘এ’ ইউনিটের সমন্বয়ক একরাম উল্যাহ কালবেলাকে বলেন, আমরা ২০-২৫ বার উত্তরপত্র যাচাই করে দেখেছি। কিন্তু ফল প্রদানে কোনো সমস্যা হয়েছে বলে মনে হয়নি। প্রকাশিত ফলে কোনো শিক্ষার্থীর প্রতি বৈষম্যও করা হয়নি। তারপরও শিক্ষার্থীরা যদি মনে করে তাদের কম নম্বর দেওয়া হয়েছে, তারা চ্যালেঞ্জ করতে পারে। তারা লিখিত অভিযোগ জমা দিলে তাদের ওএমআর শিট পুনরায় যাচাই করা হবে।
এদিকে রাবিতে বিগত সময়ে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছেন এমন অনেক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, তারা যখন পরীক্ষা দিয়েছেন তখনো ফল নিয়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে একই সমস্যা হয়েছিল। কিন্তু অভিযোগ নিয়ে গেলেও কর্তৃপক্ষ ভুলভাল বুঝিয়ে ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছিল। কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দেওয়া একজন শিক্ষার্থী কালবেলাকে বলেন, আমি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০১৮-১৯ সেশনে ‘এ’ এবং ‘বি’ ইউনিটে ভর্তি পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এ ইউনিটে ফল ঠিক আসলেও বি ইউনিটে প্রত্যাশিত ফলের সাথে বড় তারতম্য ছিল। প্রতি বছরই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষায় ব্যাপারটি লক্ষ্য করে আসছি। এ বছরও এমনটাই ঘটেছে অনেকের সাথে।
মন্তব্য করুন