শিক্ষার্থীদের দাবির মুখে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের চুক্তিভিত্তিক সিনিয়র সচিব সিদ্দিক জোবায়েরকে বদলি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করেছে সরকার। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কোনো কর্মকর্তাকে বদলি করার নজির অতীতে খুব বেশি দেখা যায়নি। বিশ্লেষকদের ভাষ্য, তাকে একটি নির্দিষ্ট বিভাগের জন্যই চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সেখানে তাকে রাখা না হলে তার নিয়োগ বাতিল হওয়ার কথা। কিন্তু সরকার নিয়োগ বাতিল না করে কেন তাকে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করেছে সেটি নতুন রহস্যের জন্ম দিচ্ছে।
বুধবার (২৩ জুলাই) তাকে বদলি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সিনিয়র সচিব (চুক্তিভিত্তিক) হিসেবে সংযুক্তি দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। ফলে নতুন করে তিনি কি আবারও অন্য কোনো মন্ত্রণালয় কিংবা বিভাগের দায়িত্ব পাচ্ছেন কি না তা নিয়ে জল্পনা কল্পনা তৈরি হয়েছে।
জনপ্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, সিদ্দিক জোবায়েরকে হয়তো অন্য কোথাও পদায়ন দেওয়া হবে। এমন চিন্তা থেকে তার নিয়োগ এখনো বাতিল করেনি সরকার। আবার তার পদায়ন অন্য কোথাও নাও হতে পারে। এটি সরকারের ইচ্ছার উপরই নির্ভর করছে। বলতে গেলে সিদ্দিক জোবায়েরকে নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি নিজেও এ নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছেন।
গত সোমবার (২১ জুলাই) রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্ত হয়ে শিক্ষার্থী, শিক্ষক ও অভিভাবকরা হতাহত হন। পরের দিনের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিতের তথ্য জানানো হয় সোমবার রাত ৩টার দিকে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে ওই তথ্য জানান। পরদিন সকালে পরীক্ষার কেন্দ্রে গিয়ে শিক্ষার্থীরা জানতে পারেন তাদের পরীক্ষা স্থগিত। এ নিয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন তারা। প্রতিবাদে সচিবালয় ঘেরাও এবং এক পর্যায়ে সচিবালয়ের ভেতরে ঢুকে ব্যাপক ভাঙচুর চালান রাজধানীর বিভিন্ন কলেজের শিক্ষার্থীরা। তারা শিক্ষা উপদেষ্টা সিআর আবরার ও শিক্ষা সচিব সিদ্দিক জোবায়েরের পদত্যাগ দাবি করেন। পরে তাদের দাবির মুখে তথ্য উপদেষ্টা জানান, সিদ্দিক জোবায়েরকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। বুধবার (২৩ জুলাই) তাকে প্রত্যাহার না করেই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্তি দিয়ে বদলি করেছে সরকার।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সাবেক সচিব ও জনপ্রশাসন বিশ্লেষক কালবেলাকে বলেন, সরকার চাইলে যেমন চুক্তি বাতিল করতে পারে, তেমনি তাকে অন্য কোথাও পদায়নও দিতে পারে। কারণ তাকে সিনিয়র সচিব হিসেবেই চুক্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল। সুতরাং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে সংযুক্ত করায় আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন যুগ্মসচিব বলেন, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্ত সিদ্দিক জোবায়েরের চুক্তি বাতিলই সমাধান। কারণ তিনি মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের জন্যই নিয়োগ পেয়েছিলেন। কেন কি কারণে তাকে জনপ্রশাসনে সংযুক্তি দেওয়া হলো তা বোধগম্য নয়। অতীতে কোনো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের কর্মকর্তাকে এভাবে জনপ্রশাসনে বদলি করা হয়নি। সুতরাং সিদ্দিক জোবায়েরের বদলি নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিবে। সরকার কেন বারবার এসব বিতর্ক কাঁধে তুলে নিচ্ছে, কারা এসব বুদ্ধি দিচ্ছে তা নতুন করে প্রশ্নে জন্ম দিচ্ছে।
গত বছরের ২৪ অক্টোবর দুই বছরের জন্য সিনিয়র সচিব পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেয়েছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব সিদ্দিক জোবায়ের। ২০১৯ সালে বিদুৎ বিভাগ থেকে অতিরিক্ত সচিব হিসেবে অবসরে যান জোবায়ের।
মন্তব্য করুন