উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাছে বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান দুর্ঘটনায় আহত হওয়া প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী নাফি (৯) মৃত্যুবরণ করেছে। এর আগে একই ঘটনায় তার বোন নাজিয়াও মারা যায়।
মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাত ১২টা ১৫ মিনিটে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় নাফি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করে।
নাজিয়া ও নাফি বাবা-মায়ের সঙ্গে উত্তরা কামারপাড়া এলাকায় বসবাস করত। নাজিয়া তৃতীয় শ্রেণিতে ও নাফি প্রথম শ্রেণিতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে পড়াশোনা করত।
রাতে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জাতীয় বার্ন প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের আবাসিক সার্জন ডা. শাওন বিন রহমান। তিনি বলেন, উত্তরায় বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় দগ্ধ নাফি রাতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আইসিইউতে মারা যায়। তার শরীরের ৯৫ শতাংশ ফ্লেইম বার্ন হয়েছিল। এর আগে গতকাল রাত ৩টার দিকে তার বোন নাজিয়া মারা যায়। তার শরীরের ৯০ শতাংশ বার্ন হয়েছিল। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত আমাদের এখানে ১১ জন শিক্ষার্থী-শিক্ষক মারা গেল। এ ছাড়া ঢাকা মেডিকেলের বার্নে এক শিক্ষার্থীর মৃত্যু হয়।
আইএসপিআর মঙ্গলবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৩১ জনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হালনাগাদ তালিকায় ২৭ জন নিহতের কথা বলা হয়, যাদের মধ্যে ২৩ জন শিশু। রাতে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৩২-এ পৌঁছায়।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম সাংবাদিকদের জানান, নিহতদের মধ্যে অনেকের পরিচয় শনাক্ত করা হয়নি। ২০টি মরদেহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে, ৬টি রাখা হয়েছে সিএমএইচের মর্গে। নিহত বৈমানিক ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট তৌকির ইসলামের মরদেহ রাজশাহীতে দাফন করা হয়েছে।
আইএসপিআরের তালিকা অনুযায়ী এ ঘটনায় মোট আহত হয়েছেন ১৬৫ জন। তাদের মধ্যে কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালে ৮, বার্ন ইনস্টিটিউটে ৪৬, ঢাকা মেডিকেলে ৩, সিএমএইচে ২৮, লুবনা জেনারেল হাসপাতালে ১৩, উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে ৬০, উত্তরা ক্রিসেন্ট হাসপাতালে ১, শহীদ মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১, ইউনাইটেড হাসপাতালে ২ এবং কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে ৩ জন চিকিৎসাধীন।
জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি রোগীদের মধ্যে দুজনকে কেবিনে স্থানান্তর করা হলেও এইচডিইউতে থাকা অন্তত ১০ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। আরও ৩০ জন গুরুতর অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
আহতদের চিকিৎসায় দেশের শীর্ষ চিকিৎসাবিশেষজ্ঞরা কাজ করছেন। বিশেষ করে শিশুরোগ-বিশেষজ্ঞদের চিকিৎসাপদ্ধতিতে বিশেষভাবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। সরকার জানিয়েছে, আহতদের উন্নত চিকিৎসায় সিঙ্গাপুর থেকে চিকিৎসক আনাও হচ্ছে।
জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সঙ্গে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতালের একটি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) রয়েছে। সেই সূত্রে যোগাযোগ করে রোগীদের কেস রিপোর্ট পাঠানো হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টার বিশেষ সহকারী অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান জানান, ওই হাসপাতাল থেকে একজন সিনিয়র কনসালট্যান্ট ও দুই নার্স মঙ্গলবার (২২ জুলাই) রাতে ঢাকায় পৌঁছাবেন।
এদিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, আহতদের চিকিৎসায় চীন, ভারত ও জাপান সহযোগিতার আগ্রহ প্রকাশ করেছে। তারা দ্রুত কী ধরনের চিকিৎসাসহায়তা প্রয়োজন, তা জানাতে বাংলাদেশকে অনুরোধ করেছে।
মন্তব্য করুন