কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ জুন ২০২৩, ০১:২৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সামাজিক ও খাদ্য নিরাপত্তার এই বাজেট উন্নয়নমুখী: ড. মশিউর রহমান

‘সমৃদ্ধ ও সুষম বাংলাদেশ নির্মাণ: বাজেট ২০২৩-২০২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি : সংগৃহীত
‘সমৃদ্ধ ও সুষম বাংলাদেশ নির্মাণ: বাজেট ২০২৩-২০২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভা। ছবি : সংগৃহীত

জাতীয় বিশ্বিদ্যালয়ের উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. মশিউর রহমান বলেছেন, সামাজিক নিরাপত্তাবেষ্টনী ও খাদ্য নিরাপত্তার এবারের বাজেট উন্নয়নমুখী। এই বাজেটে পুঁজিবাদী নয়, সমৃদ্ধ ও সুষম বাংলাদেশ নির্মাণই মূল লক্ষ্য। এজন্য রাষ্ট্র, সমাজ এবং বাজার—এই তিন নিয়ামকের মাঝে সমন্বয় খুবই জরুরি। গতকাল শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) আয়োজিত ‘সমৃদ্ধ ও সুষম বাংলাদেশ নির্মাণ: বাজেট ২০২৩-২৪’ শীর্ষক আলোচনা সভায় সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন উপাচার্য ড. মশিউর রহমান।

দেশের ভূ-অর্থনীতির বিভিন্ন দিক তুলে ধরে প্রথিতযশা সমাজবিজ্ঞানী ড. মশিউর রহমান বলেন, একটা সময় এই অঞ্চল ছিল অর্থনীতিসহ বিভিন্ন দিক থেকে সমৃদ্ধ। ক্রমান্বয়ে শোষণের যাঁতাকলে আত্মশক্তিকে বিলীন করেছি। আমাদের ঐতিহ্য ছিল, সংস্কৃতি ছিল, অর্থনৈতিক বুনিয়াদ ছিল। মূলত শোষণের যাঁতাকলে এই অঞ্চলের মানুষ আত্ম-প্রবঞ্চনার মধ্যে পড়েছে। গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় কাদা-মাটি-জলে বেড়ে ওঠা বঙ্গবন্ধু বুঝতে পেরেছিলেন এই অঞ্চলের মানুষের স্বাধীনতা দরকার। তিনি এক যুগেরও বেশি সময় কারাগারে থেকে দেশের মানচিত্র এঁকেছেন। বঙ্গবন্ধুর রাষ্ট্র সৃষ্টির বিপ্লবের ধারাবাহিকতায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তাকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। কেন তাকে হত্যা করা হয়েছিল? দ্বিতীয় বিপ্লব ছিল তার বড় শত্রু। দ্বিতীয় বিপ্লবে বঙ্গবন্ধু মূলত চেয়েছিলেন নতুন একটি অর্থনৈতিক কাঠামো গড়তে। তিনি বলেছিলেন প্রচলিত সমাজব্যবস্থা আমি ভেঙে ফেলব। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন এই কাঠামোর অর্থনীতির বুনিয়াদে সংকট আছে। সেই সংকট তিনি ভাঙতে চেয়েছিলেন। এই অঞ্চলে তিনি যে সংবিধানের চার মূলনীতির কথা বলেছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হলো সমাজতন্ত্র। সমাজতান্ত্রিক ধারায় যদি এই অঞ্চলের অর্থনীতি বিন্যাস হতো তাহলে পুঁজিবাদী বিশ্বের জন্য তা হতো ভয়ংকর রকমের অশনি সংকেত।

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, আজকে কেন ড. ইউনূস তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য। কারণ গরিব মানুষকে লোন দিয়ে সেখান থেকে মুনাফা করে পুঁজির যে বাজার সৃষ্টি হয়; মানুষকে শোষণ করে, মানুষকে ঋণ দিয়ে সেই ঋণ থেকে মুনাফা করে যে ব্যাংক পরিচালিত হয় তাতে পুঁজিবাদী ব্যবস্থার সম্প্রসারণের বিষয়টিই থাকে। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যার নীতিমাল হচ্ছে—প্রান্তিক, নিরণ্ন, অসহায় এমনকি হিজড়া, বেদে, বিধবা থেকে শুরু করে সবার কাছে সেফটি নেট প্রোগ্রাম নিয়ে যাওয়া। একদিকে ঋণের অর্থনীতি, শোষণের অর্থনীতি—অন্যদিকে এই যে ফুড সিকিউরিটি অ্যান্ড স্যোশাল সেফটি—এই দুটি প্রোগ্রামই একটি রাজনীতিবিদের জীবনে বড় বিষয়। একজন মানুষ তার অর্থনীতির পরিকল্পনায় খাদ্য নিরাপত্তা এবং বঞ্চিত মানুষকে টেনে তুলে বাজারে ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করেন। এটি পুঁজিবাদী দেশের পছন্দের জায়গা না। সেকারণে শেখ হাসিনার অর্থনৈতিক নীতিমালা তাদের অপছন্দ। ড. ইউনূসের শোষণের এবং ঋণের অর্থনীতি তাদের পছন্দ।

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য আরও বলেন, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে ছিল মার্কিনিরা। আজও তারা বাংলাদেশের অর্থনীতির বিপক্ষে। ওই পুঁজিবাদী ধারায় একচেটিয়া মনোপলি ক্যাপিটালিস্ট তৈরি হবে, সেটি আমাদের অর্থনৈতিক কাঠামোতে রাখিনি। আমরা একটি সুষম বাংলাদেশ নির্মাণের কথা ভাবছি। সেই সুষম বাংলাদেশ নির্মাণে রাষ্ট্র, সমাজ এবং বাজার নিয়ামক শক্তি। এই বাজারের নিয়ন্ত্রণ এই সময়ে একটি দুঃসাধ্য বিষয়। পুঁজিবাদী বাজার সম্প্রসারণে একচেটিয়া ধনিক শ্রেণি তৈরি হয়। একচেটিয়া ধনিক শ্রেণি তৈরি হলে ওই লুঙ্গি পরা, গেঞ্জি পরা মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্মের কোথায় পরিবর্তন নিশ্চিত হবে? শুধু ধনিক শ্রেণির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য এই রাষ্ট্র নির্মিত হয়নি। সেই কারণে পৃথিবী যখন যুদ্ধের দামামা বাজায় আমরা তখন লাখো শরণার্থীকে আশ্রয় দেই। এতে আমাদের স্বাস্থ্য ঝুঁকি আছে, খাদ্যঝুঁকি আছে। তারপরেও মানবিকতার জায়গা থেকে বাংলাদেশ তাদের আশ্রয় দিয়েছে। এ কারণেই আমরা মানবিকতায় পৃথিবীতে রোল মডেল সৃষ্টি করেছি।

উপাচার্য ড. মশিউর রহমান বলেন, যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সেদিন বঙ্গবন্ধু হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিল। তার প্রধান কারণ এই অঞ্চলে বঙ্গবন্ধু ঘোষিত সুষম বণ্টনের অর্থনীতির সমাজ কাঠামো, রাষ্ট্রকাঠামো গড়ে উঠলে তা পুঁজিবাদী অর্থনীতির জন্য হতো বড় অন্তরায়। সেকারণেই বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল পাকিস্তান। এর বেনিফিসিয়ারি ছিল সামরিক শাসকরা। তারা একইভাবে দুর্নীতিগ্রস্ত অর্থনীতি কাঠামো গড়তে চেয়েছিল। এরফলে তৈরি হয়েছে ধনিক শ্রেণি। অসম, বৈষম্যপূর্ণ সমাজ। এরপর দীর্ঘদিন সামরিক শাসনের যাঁতাকলে ছিলাম আমরা। মুক্তিটি কোন পথে এলো? বঙ্গবন্ধুকন্যা যেদিন দেশে ফিরে আসলেন। সেদিন তিনি কেন স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বললেন না। ডিজিটাল বাংলাদেশের কথা বললেন না। সেদিন তিনি বললেন ভোট এবং ভাতের অধিকারের কথা। আসলে বঙ্গবন্ধুকন্যাকে প্রথমে স্মার্ট বাংলাদেশের ভিত্তি তৈরি করতে হয়েছিল। তিনি প্রথমে ভোট এবং ভাতের অধিকার প্রতিষ্ঠা করলেন। এরপর তিনি সামরিক শাসনের অবসান ঘটিয়ে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করলেন। এরপর তিনি ধীরে ধীরে অর্থনৈতিক বুনিয়াদ গড়েছেন। আজকে ২০২৩ সালে তিনি এসে স্মার্ট বাংলাদেশের কথা বলছেন। এর মধ্যে চারটি কম্পোনেন্ট রয়েছে—স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট, স্মার্ট সোসাইটি। এর মধ্য দিয়েই তৈরি হবে মুক্তিযুদ্ধের আধুনিক প্রজন্ম, যারা বিশ্বে মাথা উঁচু করে দাঁড়াবে।

আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপাচার্য প্রফেসর ড. সত্য প্রসাদ মজুমদার, প্রধান আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর প্রফেসর ড. আতিউর রহমান। আলোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন। এ ছাড়া অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) উপউপাচার্য প্রফেসর ড. আব্দুল জব্বার খান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর ড. মো. বদিউজ্জামান ভুঁইয়া প্রমুখ।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

‘দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ চাওয়া মোটেই স্বাভাবিক বিষয় না’

‘সাংবাদিক নাসিরুল আলম ছিলেন আদর্শের বাতিঘর’

‘তারেক রহমানকে নিয়ে উপদেষ্টা খলিলুর রহমানের বক্তব্যে মানুষ বিস্মিত’

পাক-কূটনীতিককে ২৪ ঘণ্টার আল্টিমেটামে বহিষ্কার করল ভারত

পদত্যাগ করলেন কুয়েটের অন্তর্বর্তী উপাচার্য

কেউ কেউ তরুণদের বিপথগামী করার চেষ্টা করছে : মুন্না

লাহোরে ফিরলেন রিশাদ, তিন বাংলাদেশি এক ফ্র্যাঞ্চাইজিতে!

আদালতের রায়ে জনগণের বিজয় হয়েছে : ফখরুল

হারানো বিড়ালের জন্য পুরস্কার ঘোষণা

বাংলাদেশকে কোনো পরাশক্তির ছায়া-যুদ্ধক্ষেত্র করতে দেওয়া যাবে না: এবি পার্টি

১০

শুধু হৃদয় ভাঙা নই, আমি ক্ষুব্ধ, লজ্জিত: বাঁধন

১১

ইশরাকের সমর্থকদের উচ্ছ্বাস, দুই উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি

১২

কুমিল্লা সীমান্তে নারী-শিশুসহ ১৩ জনকে পুশইন

১৩

বলিউডকে বিদায় বললেন সুনীল কন্যা আথিয়া শেঠি

১৪

২০২৫: ফুটবলের শিরোপা খরা কাটানোর বছর

১৫

ইশরাকের শপথ আটকাতে আপিল করবেন রিটকারীর আইনজীবী

১৬

জরুরি সংবাদ সম্মেলন ডেকেছে বিএনপি

১৭

সিনেমা থেকে বাদ দীপিকা পাডুকোন

১৮

মমতাজের ওপর ডিম ও জুতা নিক্ষেপ

১৯

লজ্জার সিরিজ হারের পর আত্মসমালোচনায় লিটন

২০
X