কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৫ অক্টোবর ২০২৫, ১০:৩০ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

শিক্ষক দিবসে ক্যানসারে নিভল ‘জালাল স্যারের’ প্রাণ

জালাল উদ্দিন। ছবি : সংগৃহীত
জালাল উদ্দিন। ছবি : সংগৃহীত

বিশ্ব শিক্ষক দিবসে দুরারোগ্য ক্যানসারের আক্রান্ত হয়ে না-ফেরার দেশে চলে গেলেন শিক্ষক জালাল উদ্দিন (৫৫)। প্রায় ৩২ বছর ধরে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ গড়তে নিজেকে উৎসর্গ করেন তিনি। মরণব্যাধি ক্যানসার শরীরে বাসা বাঁধলেও এক দিনের জন্যও ছুটি নেননি স্কুল থেকে। আজ ৫ অক্টোবর বিশ্ব শিক্ষক দিবসে চির ছুটি নিয়েই পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করলেন নিবেদিতপ্রাণ এই শিক্ষক।

জানা যায়, জালাল উদ্দিন পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার মুসুল্লীয়াবাদ একে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। নিয়মিত স্কুলে উপস্থিত থেকে শত শত শিক্ষার্থীকে জ্ঞানের আলোয় আলোকিত করার দায়িত্ববোধ ও নিষ্ঠার জন্য বহুবার পেয়েছেন সততার পুরস্কার। সবাই তাকে ভালোবেসে ডাকেন ‘জালাল স্যার’।

পরিবার সূত্রে জানা যায়, দুই বছর আগে জালাল উদ্দীনের শরীরে ধরা পড়ে মরণব্যাধি ক্যানসার। তার একমাত্র ছেলে জহিরুল ইসলাম সৈকত বলেন, দীর্ঘদিন ক্যানসারের সঙ্গে লড়াই করে আজ দুপুর ৩টায় বাবা শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করেন। তার মৃত্যুর খবরে সহকর্মী, প্রাক্তন ও বর্তমান শিক্ষার্থীদের মধ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও অনেকেই তাকে স্মরণ করে শোক প্রকাশ করছেন।

শিক্ষক জালাল উদ্দীনের ছেলে জহিরুল ইসলাম সৈকত বলেন, আমি বাবার একমাত্র সন্তান। আমি বাবার স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেছি, কিন্তু স্কুলে কখনো ছেলে হিসেবে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাইনি। আমি পুরো স্কুলজীবনে বাবার একজন ছাত্র হিসেবেই ছিলাম সবার মতো।

তিনি আরও বলেন, আমার বাবা স্কুল থেকে কখনো তার সরকারি পাওনা (সিএল) ছুটি গ্রহণ করেননি। আমি বাবাকে বলতাম, বাবা, আপনি ছুটি নিন, তাহলে তো আমরা দাদার বাড়ি, নানার বাড়ি বেশি বেড়াতে পারব। কিন্তু বাবা বলতেন, ‘আমি আমার চাকরিজীবনের একটি দিনও ছাত্র-ছাত্রীদের বাইরে কাটাতে চাই না।’

বাবার শারীরিক অবস্থার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, দুই বছর আগে যখন বাবার শরীরে ফুসফুসে ক্যানসার ধরা পড়ে। তখন ক্যানসার চতুর্থ ধাপে চলে গিয়েছিল। হাসপাতাল থেকে যখন বাড়িতে আসতাম বাবাকে নিয়ে, তখনো প্রতিদিন স্কুলে যেতেন অসুস্থ শরীর নিয়ে।

প্রিয় শিক্ষককে নিজ চোখে এক নজর দেখতে আসা সাবেক শিক্ষার্থী খেংশে রাখাইন বলেন, আমি স্যারকে সব সময় দেখতাম ঝড় বৃষ্টির মধ্যেও সব সময় স্কুলে আসতেন। স্যার অনেক প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ ছিলেন, স্কুলের আঙিনায় সবসময় বিভিন্ন ধরনের গাছ লাগাতেন তিনি। যদিও স্যার একজন ইংরেজি শিক্ষক ছিলেন। কিন্তু ইংরেজি শিক্ষার পাশাপাশি নৈতিক শিক্ষা দিতেন সবসময়। আজকে আমি বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা করছি, এটা সম্পূর্ণ তার অবদান- বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

মুসুল্লীয়াবাদ এ কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. ফখরুল ইসলাম বলেন, ‘জালাল স্যার আমাদের স্কুলের গর্ব ছিলেন। কঠিন শারীরিক অসুস্থতা না আসা পর্যন্ত কেউ ভাবতেই পারেনি, এমন মানুষ কখনো বিছানায় পড়বেন। কিন্তু বাস্তবতা তো মেনে নিতেই হবে। ৩২ বছরের চাকরিজীবনে গত ২০ বছরে (সিএল) সরকারি পাওনা ছুটি নেননি। তার হাজিরা খাতায় কোনো অনুপস্থিতি নেই। তিনি যতটুকু জানতেন তা শিক্ষার্থীদের মাঝে মনপ্রাণ উজাড় করে বিলিয়ে দিতেন। তিনি এমন একজন মানুষ, তার ক্যানসার ধরা পড়ার পর আমরা তাকে সহযোগিতা করতে চাইলেও রাজি হননি। তার যতটুকু আছে, তাতেই সন্তুষ্ট থেকেছেন। তার মৃত্যুতে শোকের ছায়া নেমে এসেছে উপকূলের শিক্ষাঙ্গনে।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম বলেন, আমি বহু বছর ধরে মুসুল্লীয়াবাদ এ কে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ইংরেজি শিক্ষক মো. জালাল উদ্দীন স্যারকে চিনি। তিনি একজন সত্যিকারের আদর্শবান শিক্ষক। ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জীবনে স্যারের ভূমিকা অতুলনীয়।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

আগামী ৫ দিন আবহাওয়া কেমন থাকবে, জানাল অধিদপ্তর

শ্বশুরবাড়িতে গাছে ঝুলছিল জামাইয়ের মরদেহ 

হিসাবরক্ষণ পদে নিয়োগ দিচ্ছে আড়ং

ইরানের হাতে আসছে ‍রুশ অস্ত্র, মধ্যপ্রাচ্যে কী হতে যাচ্ছে?

নারী বিশ্বকাপের জন্য ২১ সদস্যের দল ঘোষণা ব্রাজিলের

‘সহজক্যাশে’ লেনদেনে বাংলাদেশ ব্যাংকের সতর্কবার্তা

রেড ক্রিসেন্টে চাকরির আবেদন করুন অনলাইনে

মহাসড়কে গাড়ি থামিয়ে সেই ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ২

অভিজ্ঞতা ছাড়াই নিয়োগ দিচ্ছে আরএফএল

সেভ দ্য চিলড্রেনে চাকরির সুযোগ

১০

ফের মা হতে চলেছেন ভারতী সিং

১১

টিকা থেকে একটি শিশুও যেন বাদ না যায় : স্বাস্থ্য উপদেষ্টা 

১২

কোন রক্তের গ্রুপে স্ট্রোকের ঝুঁকি বেশি, জানুন কী বলছে গবেষণা

১৩

ধোপাদিঘিতে মাছ মরে ছড়াচ্ছে দুর্গন্ধ, ওয়াকওয়ে বন্ধ ঘোষণা

১৪

জামায়াত আমিরের সঙ্গে ঢাকার আবাসিক সমন্বয়কারীর সাক্ষাৎ

১৫

চ্যাটজিপিটিতে নতুন ফিচার চালু

১৬

যমুনায় হুহু করে বাড়ছে পানি, দুশ্চিন্তায় চরের কৃষক

১৭

মশার কয়েলের বিকল্প বের করলেন খুবি শিক্ষার্থীরা

১৮

ভারত-পাকিস্তান ম্যাচে রানআউট বিতর্কে যা বলল ক্রিকেট আইনপ্রণেতা সংস্থা

১৯

সুষ্ঠু নির্বাচনকে জীবনের শেষ সুযোগ হিসেবে নিয়েছি : সিইসি

২০
X