ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষে 'বিজ্ঞান ইউনিট'-এর ১ম বর্ষ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট প্রোগ্রামের ভর্তি পরীক্ষা শুরুর আগে এক কেন্দ্রে কিছু ভর্তিচ্ছু সঙ্গে করে মোবাইল ফোন নিয়ে ঢুকার পর সেগুলো শিক্ষক পরিচয়ে জমা নেওয়ার নাম করে তা চুরির ঘটনা ঘটেছে। এতে অন্তত ১০ শিক্ষার্থীর ১০টি মোবাইল আত্মসাৎ করা হয়েছে বলে ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে।
শুক্রবার (১ মার্চ) বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম পরীক্ষা কেন্দ্র মোকাররম ভবন সংলগ্ন বিজ্ঞান পাঠাগারের নিচতলার সেকেন্ড ইয়ার ক্লাসরুমে এবং ফার্মেসি বিল্ডিংয়ের ৪১৩নং কক্ষে এ ঘটনা ঘটে।
ঘটনার অন্যতম ভুক্তভোগী হলেন কুমিল্লা থেকে আসা তোফায়েল আহমেদ তুষার নামে এক ভর্তিচ্ছু। তার পরীক্ষার হল ছিল বিজ্ঞান পাঠাগারের নিচতলার সেকেন্ড ইয়ার ক্লাসরুমে। মোবাইলটি হারানোর পর তিনি শাহবাগ থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।
ঘটনার বর্ণনায় তুষার কালবেলাকে বলেন, শুক্রবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞান ইউনিটের ভর্তি পরীক্ষা ছিল। ফার্মেসি ভবনের ৪১৩ নম্বর কক্ষ এবং বিজ্ঞান পাঠাগারের নিচতলার সেকেন্ড ইয়ার ক্লাসরুম থেকে পরীক্ষা শুরু হওয়ার আগে এক ব্যক্তি শিক্ষক সেজে আমাদের ১০ জন ভর্তিচ্ছুর মোবাইল নিয়ে যায়। তিনি আমাদের কাছে শিক্ষক দাবি করেন এবং যেহেতু মোবাইল ফোন নিয়ে পরীক্ষা দেওয়া যাবে না তাই মোবাইলগুলো উনার কাছে রাখার জন্য বলেন।
তুষার আরও বলেন, উনি আমাদের কাছ থেকে নাম, মোবাইল নম্বর নিয়ে আমাদের মোবাইলগুলো নিয়ে যান। আমরা পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে দেখি ওই লোক আর সেখানে নেই। তখন আমরা সবাই একসঙ্গে হলে দায়িত্বরত শিক্ষকদেরকে বিষয়টি জানাই। তারা আমাদের বললেন যে, তারা কোনো সাহায্য করতে পারবেন না। হেড অফিসার রোববারে আসবে, তখন এসে কথা বলতে বললেন তারা।
তুষার বলেন, প্রতিটা হলের সামনে সিসি টিভি ক্যামেরা ছিল। আমরা তাদেরকে বললাম সিসি টিভি ক্যামেরার ফুটেজটা আমাদের দেখাতে বা তাদের নিজেদের দেখতে। তাহলে অন্তত ওই লোকটাকে শনাক্ত করা যাবে। কিন্তু দায়িত্বরত শিক্ষকরা এ ব্যাপারে কোনো সহযোগিতা করেননি। তারা বলেছেন, থানায় গিয়ে জিডি করতে। পরে আমরা ১০ জন শাহবাগ থানায় গেলাম এবং পুলিশকে বিষয়টি জানালাম। পুলিশ বলল তারাও এ ব্যাপারে আমাদেরকে কোনো সাহায্য করতে পারবে না। যা করার বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকদের সঙ্গে কথা বলে মোবাইল বের করতে বলল তারা। আমরা প্রায় ৩ ঘণ্টা থানায় ছিলাম। কিন্তু, কোনো সাহায্য পাই নাই। তবে মোবাইল হারিয়েছে এ রকমটা উল্লেখ করে আমি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেছি।
পরীক্ষার হলে মোবাইল কেন নিয়ে এসেছিলেন এমন প্রশ্নের জবাবে ভুক্তভোগী এ শিক্ষার্থী বলেন, আমার বাসা কুমিল্লায়। সেই কুমিল্লা থেকে পরীক্ষা দিতে আসছি আমরা কয়েকজন বন্ধু। আমাদের সঙ্গে কোনো অভিভাবক নিয়ে আসতে পারিনি এবং আমাদের ধারণা ছিল আমাদের মোবাইলগুলো শিক্ষকদের কাছে জমা দিয়ে আমরা পরীক্ষা দিতে পারব। কারণ, এর আগে অন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় শিক্ষকদের কাছে মোবাইল রেখে পরীক্ষা দিয়েছিলাম। এ জন্য আমরা ভাবছি, এখানেও এটা করা যাবে।
ঘটনা প্রসঙ্গে 'বিজ্ঞান ইউনিট' ভর্তি পরীক্ষার সমন্বয়কারী ও ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. হাফিজ মুহম্মদ হাসান বাবু কালবেলাকে বলেন, আমি শুনেছিলাম যে, শিক্ষক পরিচয় দিয়ে এক লোক কয়েকজন শিক্ষার্থীর মোবাইল ফোন নিয়ে গেছে। এ সম্পর্কে আমাকে একজন জানিয়েছিল। তবে যে শিক্ষার্থীরা এ ঘটনার ভুক্তভোগী তারা আমাদের কাছে কোনো লিখিত অভিযোগ দেয়নি। আমি তাদেরকে বলব যে, তারা ওই পরীক্ষার কেন্দ্র প্রধান বরাবর একটি লিখিত অভিযোগ দিক, তারপর তদন্ত অনুযায়ী আমরা যে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এ ব্যাপারে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকেও অবহিত করতে পারে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. মো. মাকসুদুর রহমান বলেন, এটি অত্যন্ত দুঃখজনক একটি ঘটনা। ওই ভবনগুলোতে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। সেগুলোর মাধ্যমে তাকে শনাক্তকরণের চেষ্টা করা হবে। সে যদি আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের কেউ হয়, তাহলে তো তাকে খুব সহজেই শনাক্ত করা যাবে। ঘটনাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত করা হবে এবং জড়িত ব্যক্তির বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ধরনের ঘটনাগুলো যেন কোনোভাবেই আর না ঘটে সেটাই আমরা চাই। এটা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তির সঙ্গে সম্পর্কিত।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. সীতেশ চন্দ্র বাছার বলেন, এ ঘটনায় তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তদন্ত কমিটি করে সিসিটিভি ফুটেজের মাধ্যমে এ কালপ্রিটকে শনাক্ত করে ব্যবস্থা নিতে পারব বলে আমি মনে করি। এ বিষয়ে আমি উপাচার্য মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলব। তিনি প্রক্টরিয়াল বডিকে হয়তো প্রয়োজনীয় ইন্সট্রাকশন দিবেন। আমার মনে হয়, ঘটনায় জড়িতকে কোনোভাবেই ছাড় দেওয়া ঠিক হবে না। কারণ, সে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাবমূর্তিকে ক্ষুণ্ণ করেছে, আমাদের শিক্ষক সেজে এটা করেছে। এজন্য এ জায়গাটায় আমাদের কঠোর হওয়া বাঞ্ছনীয়।
মন্তব্য করুন