বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০০৮, ২০১৪ এবং ২০১৮-এর নির্বাচনী ইশতেহারে ঘোষিত দীর্ঘমেয়াদি কর্মপরিকল্পনাগুলোর ধারাবাহিকতা দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনী ইশতেহারেও রক্ষিত হয়েছে। এবারের নির্বাচনী ইশতেহারে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে ১১টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ ১১টি বিশেষ বিষয়ের প্রতিটির গুরুত্ব অপরিসীম। প্রতিটি নির্বাচনী ইশতেহারেই জাতির সামনে একটা আশাজাগানিয়া ও অনুপ্রেরণামূলক স্লোগান তুলে ধরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) সকালে জাতীয় প্রেস ক্লাবের মাওলানা মোহাম্মদ আকরাম খাঁ হলে আয়োজিত ‘আওয়ামী লীগের ইশতেহার- স্মার্ট বাংলাদেশ’ শীর্ষক সেমিনারে ওঠে আসে এসব তথ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বয়ে গঠিত গবেষণাভিত্তিক সংগঠন এডুকেশন, রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট ফোরাম অব বাংলাদেশ (ইআরডিএফবি) এ সেমিনারের আয়োজন করে।
সেমিনারে বক্তারা বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে ইশতেহারের স্লোগান ছিল ‘দিনবদলের সনদ’। ২০১৪ সালের দশম সংসদ নির্বাচনের ইশতেহারে স্লোগান ছিল ‘এগিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশ’। ২০১৮ সালে ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ স্লোগান ছিল ইশতেহারে। ২০১৮ সালের সেই ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ ইশতেহারে ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ ও ২১০০ সালের মধ্যে নিরাপদ ব-দ্বীপ গড়ে তোলার পরিকল্পনা দেওয়া হয়েছিল। অতীতের ন্যায় এবারও তরুণ সমাজকে কাজে লাগিয়ে তারুণ্যনির্ভর একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে আওয়ামী লীগ।
সেমিনারে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমেরিটাস অধ্যাপক ড. আতিউর রহমান বলেন, আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষ্যে ঘোষিত এ ইশতেহার একটি সামগ্রিক ইশতেহার। এ ইশতেহার নিঃসন্দেহে আমাদের উন্নয়ন পরম্পরার গল্প। এ ইশতেহার প্রমাণ করে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা কোনো চ্যালেঞ্জকে ভয় পায় না। সকল বাধা অতিক্রম করে শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বের ফসল আজকের এ বিশ্বে অবাক করা বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে আমাদের যে চ্যালেঞ্জগুলো রয়েছে তার নির্দেশ এবং তা সমাধানের কর্মকৌশলও রয়েছে এ ইশতেহারে। প্রযুক্তির ওপর জোড় দিয়ে কর্মসংস্থান বৃদ্ধি এবং মুদ্রাস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে এ ইশতেহার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে এতে কোনো প্রকার সন্দেহের অবকাশ নেই।
সেমিনারে প্রধান বক্তা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. শেখ হাফিজুর রহমান (কার্জন) বলেন, প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার গত ১৫ বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফসল আজকের এ বদলে যাওয়া বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক খাতে বাংলাদেশের যে অর্জন তা অভূতপূর্ব। শেখ হাসিনার জাদুকরী নেতৃত্বে গত ১৫ বছরের বাংলাদেশের মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি, বাজেটের আকার বৃদ্ধি, শিক্ষার হার বৃদ্ধি, দারিদ্র্যের হার হ্রাস, গড় আয়ু বৃদ্ধি, মেয়েদের ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি, শিশু এবং মাতৃমৃত্যু হার হ্রাস ইত্যাদির মাধ্যমে দরিদ্র একটি বাংলাদেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তর করেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগের এ নির্বাচনী ইশতেহার ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট অর্থনীতি, স্মার্ট সরকার, স্মার্ট নাগরিক ও স্মার্ট সমাজ- এ চারটি পিলারের সমন্বয়ে একটি স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে নিঃসন্দেহে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) সদস্য ও ইআরডিএফবির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. সাজ্জাদ হোসেন বলেন, আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার বাংলাদেশের তরুণ সমাজকে শিক্ষা-দিক্ষা, জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ করে করে ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে একটি আধুনিক এবং স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে আমাদের এ তরুণ সমাজ ভোটের মাধ্যমে শেখ হাসিনাকে নির্বাচিত করে ইশতেহারে ঘোষিত পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের মাধ্যমে শেখ হাসিনার স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ তথা বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য (রুটিন দায়িত্ব) ও ইআরডিএফবির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বদরুজ্জামান ভূঁইয়া বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের শাসনামলে দুর্নীতিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ থেকে ডিজিটাল বাংলাদেশে রূপান্তরের মূল নায়ক বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনার দীর্ঘ ১৫ বছরের কঠোর পরিশ্রমের ফল আজকের এ ডিজিটাল বাংলাদেশ। এবারের লক্ষ্য ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা। সে লক্ষ্যেই নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণা করেছে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ। আমাদের সকলের উচিত আসন্ন নির্বাচনে বিপুল ভোটে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে পুনরায় নির্বাচিত করে স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে শেখ হাসিনাকে সহায়তা করা।
সেমিনারের শুরুতে উদ্বোধনী বক্তব্য রাখেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ। সেমিনারে বিশেষ অতিথি ছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ কিউ এম মাহবুব, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম, চাঁদপুর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নাছিম আখতার, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. কামাল উদ্দিন আহাম্মদ।
মন্তব্য করুন