বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ খ্যাত অভিনেতা আমির খান আবারও আলোচনার কেন্দ্রে। ব্যক্তিগত জীবনে অনেক নারীর সঙ্গে তার নাম জড়িয়েছে। এরপর বিবাহ, সন্তানের দায়িত্ব, সম্পর্কের ভাঙাগড়া, সব পেরিয়ে এবার খোলাসা করলেন নিজের ব্যক্তিগত গল্প। গোপন অনুভূতির দরজা খুলে ভারতীয় এক গণমাধ্যমে জানালেন প্রেম, বিয়ে আর বিচ্ছেদের অজানা কাহিনী। শুরুতে মুখ খুলতে না চাইলেও অবশেষে শেয়ার করলেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সত্যগুলো, যা শুনে হতবাক তার ভক্তরা। খবর: ফিল্মফেয়ার
জীবনের শুরুতে রিনা দত্তকে ভালোবেসে প্রথম বিয়ে করেন তিনি। এ সংসারে জুনায়েদ ও ইরা খান নামে দুটো সন্তান রয়েছে। রিনার সঙ্গে বিচ্ছেদের পর কিরণ রাওকে বিয়ে করেন আমির। এ সংসারে আজাদ খান নামে একটি পুত্রসন্তান রয়েছে। তবে দুটো সংসারই ভেঙে গেছে তার। আমির এখন গৌরি স্প্রাটের সঙ্গে লিভ-ইন সম্পর্কে রয়েছেন। সাক্ষাৎকারে একটি সম্পর্ক কীভাবে সুস্থ রাখা যায় এ বিষয়ে আমিরকে প্রশ্ন করলে তিনি বলেন, ‘আমি কে যে উপদেশ দেব? সম্পর্কের দিক থেকে আমি খুব একটা সফল নই। কিন্তু হ্যাঁ, বিবাহবিচ্ছেদের পরও আমার সম্পর্কগুলো ভাঙেনি, এটাই তো এক ধরনের সাফল্য।‘
এদিকে কয়েক বছর আগে থেরাপি শুরু করার পর তার জীবনের মোড় ঘুরে যায়। এ বিষয়ে অভিনেতা বলেন, “তার আগে আমি সবসময় ভাবতাম কেউ আমাকে বুঝতে পারছে না। মনে হতো দোষটা অন্যদের। কিন্তু থেরাপি আমাকে বুঝিয়েছে, সুখ কারো হাতে নয়, নিজের হাতেই।”
ভুল মানুষ বেছে নিলে জীবনে দুঃখ অনিবার্য। এ তথ্য উল্লেখ করে আমির খান বলেন, 'আপনি যখন কোনো সম্পর্কে জড়ান, তখন আপনি কাউকে বেছে নিচ্ছেন জীবনের পথে হাতে হাত রেখে চলার জন্য। যদি ভুল মানুষকে বেছে নেন, তাহলে দুঃখ অনিবার্য। থেরাপি আমাকে সেই ‘রেড ফ্ল্যাগ’ চিনতে শিখিয়েছে। এখন আমি কারো সঙ্গে দুই মিনিট কথা বললেই ১৫-২০টা ‘রেড ফ্ল্যাগ’ ধরতে পারি আর সঙ্গে সঙ্গে সরে আসতে পারি।'
সফল সম্পর্কের জন্য আমির খান তিনটি নিয়ম মানার পরামর্শ দিয়েছেন। এগুলো হলো, সততার সঙ্গে এগিয়ে যান, ভাবনা-চিন্তা করে আপনি আপনার সঙ্গী বেছে নিন এবং নিজের আবেগগত আচরণগুলো বুঝতে শিখুন।
এরপর আফসোস করে আমির খান বলেন, ইচ্ছা হয়, যদি ১৮ বছর বয়সেই থেরাপি শুরু করতাম। তাহলে বুঝতাম আমার মধ্যেই কী ঘাটতি ছিল। থেরাপি অন্য মানুষকে নয়, আপনাকেই চিনিয়ে দেয়।
কোনো সম্পর্কে জড়ানোর আগে নিজের প্রস্তুতি খুব জরুরি বলে মনে করেন আমির খান। তার মতে, 'যদি আমি নিজেই ট্রিগার হই আর সেই রাগ অন্যের উপর ঝাড়ি, তাহলে দোষ কাকে দেব? থেরাপি আমাদের বুঝতে সাহায্য করে, আমরা আদৌ একজন সঙ্গী চাই কি না। নাকি আগে নিজেকে গড়ে তোলা জরুরি। অনেক সময় আপনি বুঝতে পারেন, আপনি একা থাকতেই পছন্দ করেন। কিংবা প্রথমে নিজের কিছু সমস্যার সমাধান দরকার। এটা আপনাকে আবেগগত দায়িত্বশীলতা শেখায়।'
সমাজে পরিণত মানুষ হতে শেখানো হয় না বলে মনে করেন আমির খান। তার ভাষায়, 'আমরা ডাক্তার বা ইঞ্জিনিয়ার হতে প্রশিক্ষণ নিই। কিন্তু একজন পরিণত মানুষ হতে শেখানো হয় না। থেরাপি সেই হারিয়ে যাওয়া প্রশিক্ষণ হতে পারে।'
তরুণ প্রজন্মকে সম্পর্ক সম্পর্কে যথাযথ গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে আমির খান বলেন, 'সম্পর্ক হওয়া উচিত ইতিবাচক, সুস্থ, এবং সহায়ক, যা আপনাকে জীবনের মানে দেয়। কিন্তু আপনি যদি নিজেকে মূল্য না দেন, তাহলে অন্য কাউকে কীভাবে আপনার সেরাটা দেবেন?'
সহজ ও আন্তরিক বার্তা দিয়ে আমির খান বলেন, নিজেকে মূল্য দিন। আপনার সঙ্গীকেও মূল্য দিন। আর সবার হাতে হাত রাখতে যাবেন না। তার আগে বলুন, ‘তোমার রেড ফ্ল্যাগগুলো দেখাও।
মন্তব্য করুন