

‘ফুল অউর পাত্থর’ ক্যারিয়ারের প্রথম বড় হিটের নামটিই যেন তার ব্যক্তিত্বের রূপক, পাথরের মতো গঠনে অটল দৃঢ়তা, আর কোমলতায় মোড়া এক অনন্য নায়ক-চরিত্র। বলছি সদ্য প্রয়াত হিম্যান খ্যাত বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্র দেওলের কথা।
গত শতকের ছয়ের দশকের মাঝামাঝি রুপালি পর্দায় আবির্ভূত হয়ে ধর্মেন্দ্র হয়ে উঠেছিলেন সেই সময়ের অবিসংবাদিত সুপারস্টার, তখনো বলিউডে আত্মপ্রকাশ করেনি রাজেশ খান্নার ‘রোমান্টিক রাজত্ব’ কিংবা অমিতাভ বচ্চনের ‘অ্যাংরি ইয়াং ম্যান’ যুগ।
কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিগ বি-র বিস্ময়কর উত্থান যেন ধর্মেন্দ্রর আলোকে আড়াল করল। যেমন ভারতীয় ক্রিকেটে শচীন–সৌরভদের ঝলমলে যুগের আড়ালে নিঃশব্দে ভরসা হয়ে থেকেছেন রাহুল দ্রাবিড়, তেমনি বলিউডের অন্ধকারে আলো জ্বেলেও মিস্টার ডিপেন্ডেবল হয়ে থাকলেন ধর্মেন্দ্র। তার অভিনয়, ব্যক্তিত্ব ও সময়-অতিক্রমী জনপ্রিয়তা—সব মিলিয়ে ধর্মেন্দ্র শুধু এক নায়ক নন, ভারতীয় সিনেমার এক শক্তিশালী প্রতীক।
এখন ভক্ত মনে প্রশ্ন উঠতে পারে কত বড় তারকা ছিলেন ধর্মেন্দ্র? এই হিসাবটা হিসেব করে বের করা কঠিন কিন্তু একটা ধারণা দেওয়া যেতে পারে।
অমিতাভ-ধর্মেন্দ্রর জীবনের সবচেয়ে বড় হিট ‘শোলে’। ১৯৭৫ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত এই ছবিতে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক কে পেয়েছিলেন? উত্তরটা কিন্তু ধর্মেন্দ্রই। ততদিনে অমিতাভ স্টার হয়ে উঠলেও সুপারস্টার হতে পারেননি। মূলত পরপর সাফল্যের মধ্যে দিয়ে গিয়ে ‘মুকাদ্দার কা সিকান্দার’ (১৯৭৮) ছবির পরই সুপারস্টার হয়ে ওঠেন বিগ বি। অন্যদিকে সঞ্জীবকুমার কিন্তু ততদিনে বিরাট জনপ্রিয়। কিন্তু এদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পেইড অভিনেতা ছিলেন ধর্মেন্দ্র।
তিনি পেয়েছিলেন দেড় লাখ টাকা। অন্যদিকে ‘ঠাকুর সাহাব’ সঞ্জীব কুমার পেয়েছিলেন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা। অমিতাভ পান ১ লাখ। হেমার পারিশ্রমিক ছিল ৭৫ হাজার। ৩৫ হাজার টাকা পেয়েছিলেন জয়া বচ্চন। এ ছাড়া একেবারেই নতুন ‘গব্বর’ আমজাদ খান ৫০ হাজার।
এদিকে বলিউডের ইতিহাসে সাফল্যের বিচারে স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে রাজেশ খান্নার নাম। টানা ১৭টি হিট ছবি দিয়েছিলেন ‘কাকাজি’। ১৯৬৯ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত পাওয়া এই সাফল্য তাকে ১৯৮৭ সাল পর্যন্ত সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অভিনেতা করে রেখেছিল। অমিতাভের মহাতারকা হয়ে ওঠাও রাজেশের এই সাফল্যকে প্রতিস্থাপিত করতে পারেনি। এই সাফল্যের ভিড়ে ধর্মেন্দ্রকে আলাদা করে সরিয়ে না রেখে উপায় নেই। ১৯৬০ সালে ক্যারিয়ার শুরু। যদিও প্রথম ছবি ‘দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে’ সাফল্যের মুখ দেখেনি। সাফল্যের জন্য ধর্মেন্দ্রকেও করতে হয় অপেক্ষা।
এরপর ১৯৬৬ সালে ‘ফুল অউর পাত্থর’ ধর্মেন্দ্রকে একটা স্থায়ী জায়গা করে দিল। তার আগেই অবশ্য ‘আয়ি মিলন কি বেলা’র মতো ছবি মুক্তি পেয়ে গেছে। এরপর একে একে ‘অনুপমা’, ‘সত্যকাম’, ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’, ‘সীতা অউর গীতা’ ‘সমাধি’, ‘জুগনু’, ‘ইয়াদো কি বারাত’-এর সাফল্য ‘শোলে’-র মহাসাফল্যের আগেই ধর্মেন্দ্রকে সুপারস্টার করে তুলেছে। অবশ্য সেই সময় ধর্মেন্দ্রর শরীরে সামান্য বয়সের ছাপ পড়তে শুরু করেছে। কেননা তিনি ততদিনে চল্লিশে পা রেখেছেন।
কিন্তু ‘ড্রিম গার্ল’, ‘শালিমার’-এর মতো সফল ছবি এরপরও করেছেন ধর্মেন্দ্র। আটের দশক পেরিয়ে এসে ১৯৯০ সালেও ‘নাকাবন্দি’, ‘হামসে না তাকরানা’ কিংবা ১৯৯২ সালে ‘তাহালকা’ বাণিজ্যিক সাফল্য পেয়েছে।
অর্থাৎ তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে বলিউডে সাফল্যে ধরে রেখেছিলেন এই গুণী অভিনেতা। এরপর প্রধান চরিত্র থেকে নিজেকে সরিয়ে নেন ধর্মেন্দ্র। তিনি মোটামুটি সাতান্নতেই নায়ক হওয়া ছেড়ে দেন। এরপরও অবশ্য ছবি করেছেন।
এমনকী, ২০২৩ সালে ‘রকি অউর রানি কি প্রেমকাহিনি’তে অভিনয় করে বেশ সাড়া ফেলেছেন ধর্মেন্দ্র।
মৃত্যুর আগে ধর্মেন্দ্র সবশেষ অভিনয় করেন শ্রীরাম রাঘবন এর পরিচালনায় নির্মিত সিনেমা ইক্কিস- এ।
এ চলচ্চিত্রটিতে ধর্মেন্দ্রর পাশাপাশি অভিনয় করেন জয়দীপ আহলাওয়াত, অগস্ত্য নন্দসহ অনেকে। ছবিটি মুক্তি পাবে চলতি বছরের ২৫ ডিসেম্বর।
মন্তব্য করুন