

চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনের ইতিহাসে স্নেহময়ী মা, সাহসী নারী ও মঞ্চের অনবদ্য শিল্পী হিসেবে যিনি দীর্ঘ এক শতাব্দী ধরে দর্শকের মনে জায়গা করে নিয়েছিলেন— সেই বরেণ্য মার্কিন অভিনেত্রী জুন লকহার্ট আর নেই।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) রাত ৯টা ২০ মিনিটে যুক্তরাষ্ট্রের সান্তা মনিকার নিজ বাড়িতে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি। তার বয়স হয়েছিল ১০০ বছর। বার্ধক্যজনিত কারণে স্বাভাবিকভাবেই মৃত্যু হয়েছে বলে জানিয়েছে তার পরিবার। মৃত্যুর সময় পাশে ছিলেন কন্যা জুন এলিজাবেথ ও নাতনি ক্রিস্টিয়ানা। খবরটি প্রথম প্রকাশ করে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক জনপ্রিয় গণমাধ্যম পিপল।
১৯২৫ সালের ২৫ জুন নিউইয়র্কে জন্মগ্রহণ করেন জুন লকহার্ট। তিনি ছিলেন কানাডিয়ান-আমেরিকান অভিনেতা জিন লকহার্ট এবং ইংলিশ অভিনেত্রী ক্যাথলিন লকহার্ট দম্পতির একমাত্র কন্যা।
মাত্র আট বছর বয়সে মঞ্চে অভিনয়ের মাধ্যমে শুরু হয় তার শিল্পযাত্রা। ১৯৪৭ সালে মাত্র ২২ বছর বয়সে অভিনয় করেন নাটক ‘ফর লাভ অর মানি’-তে। সেই নাটকের অভিনয়ের জন্যই তিনি অর্জন করেন ‘টনি অ্যাওয়ার্ড’— ‘সেরা নবাগত অভিনেত্রী’ হিসেবে। একই পারফরম্যান্সের জন্য পান ‘থিয়েটার ওয়ার্ল্ড অ্যাওয়ার্ড’।
জুন লকহার্টের চলচ্চিত্রে অভিষেক হয় মাত্র ১৩ বছর বয়সে। ১৯৩৮ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত ‘আ ক্রিসমাস ক্যারল’ চলচ্চিত্রে ছোট্ট চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে বড় পর্দায় আসেন তিনি। দুই বছর পর ‘অল দিস, অ্যান্ড হ্যাভেন টু’ এবং আরও বেশ কিছু চলচ্চিত্রে কাজ করে ধীরে ধীরে নিজের জায়গা তৈরি করেন হলিউডে।
তবে তার প্রকৃত জনপ্রিয়তা আসে টেলিভিশন সিরিজ ‘ল্যাসি’-এর মাধ্যমে। ১৯৫৮ সালে সিরিজটির পঞ্চম মৌসুমে ‘রুথ মার্টিন’ চরিত্রে অভিনয় শুরু করেন জুন লকহার্ট, যা টিভি ইতিহাসে অন্যতম স্নেহময়ী মাতৃত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে আজও স্মরণীয়। পরে ১৯৬৫ সালে বিজ্ঞানকল্পধর্মী সিরিজ ‘লস্ট ইন স্পেস’-এ তিনি একজন স্ত্রী, মা ও মহাকাশ অভিযাত্রীর চরিত্রে অভিনয় করে নতুন মাত্রা যোগ করেন নিজের ক্যারিয়ারে।
দীর্ঘ অভিনয়জীবনে জুন লকহার্ট মঞ্চ, টেলিভিশন ও সিনেমা— সবক্ষেত্রেই নিজের প্রতিভার ছাপ রেখেছেন। তার কর্মজীবন ছুঁয়েছে আট দশক, যা অনেকের কাছেই হলিউডের ইতিহাসে এক অনন্য রেকর্ড।
ব্যক্তিজীবনে জুন লকহার্ট ১৯৫১ সালে জন এফ ম্যালোনিকে বিয়ে করেন। এই দম্পতির দুই কন্যা— অ্যান ক্যাথলিন ও জুন এলিজাবেথ। ১৯৫৯ সালে তাদের বিচ্ছেদ ঘটে। একই বছর তিনি জন লিন্ডসেকে বিয়ে করলেও ১৯৭০ সালে সে সংসারও ভেঙে যায়। এরপর আর বিয়ে করেননি এই কিংবদন্তি অভিনেত্রী।
এক শতাব্দীর জীবন ও শিল্পযাত্রা শেষ হলো নিঃশব্দে। তবে জুন লকহার্টের অভিনয়, তার মায়াময় মুখ আর অসংখ্য স্মরণীয় চরিত্র চিরকাল বেঁচে থাকবে দর্শকের হৃদয়ে— যেমন আলো জ্বেলে থাকে এক পুরোনো টিভি পর্দার শেষ দৃশ্য।
মন্তব্য করুন