

বাংলাদেশ আজ একটি যুগসন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছে। নতুন সম্ভাবনা যেন হাতছানি দিচ্ছে দৃঢ় সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাওয়ার। এমন পরিস্থিতিতে স্বাধীনতার অর্ধশতাব্দী পেরিয়ে রাষ্ট্র, সরকার, জাতীয় প্রতিষ্ঠান ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিয়ে নতুনভাবে চিন্তা করার সময় এসে গেছে। এ জাতীয় রূপান্তরের কেন্দ্রে রয়েছে দেশের তরুণ প্রজন্ম। যারা শুধু শিক্ষার্থী নয়, তারা ভবিষ্যৎ রাষ্ট্র নির্মাতা, সমাজবোধ ও নাগরিক নৈতিকতার ধারক-বাহক। তাই তাদের চিন্তা, প্রত্যাশা, উদ্বেগ এবং রাষ্ট্রচেতনা আজ বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার প্রধান নির্ধারক।
এ বাস্তব প্রেক্ষাপটে শনিবার (২৫ অক্টোবর) বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে দেশের তৃণমূল পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের সরাসরি সংলাপ কেবল রাজনৈতিক আয়োজন ছিল না; এটি ছিল দীর্ঘদিন ধরে হারিয়ে যাওয়া মানুষ ও তাদের নেতার মধ্যে আস্থার সুদৃঢ় সম্পর্কের পুনর্জন্ম। এ দেশে বছরের পর বছর ধরে রাজনৈতিক বিভাজন, দমন-পীড়ন, ভয় আর অবিশ্বাসের সংস্কৃতি তরুণদের রাজনীতি থেকে দূরে ঠেলে দিয়েছিল। কিন্তু সেদিনের সংলাপ দেখাল; রাজনীতি আবারও মানবিক হতে পারে, শ্রবণশীল হতে পারে, আশ্বাসদায়ক হতে পারে এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণের যৌথ চিন্তাক্ষেত্রে রূপ নিতে পারে।
সেখানে ছাত্র-ছাত্রীরা প্রশ্ন করেছিল নিজেদের ভাষায়, নিজেদের স্বপ্ন এবং সংশয়ের কথা জানিয়েছিল আগামীর রাষ্ট্রনায়ককে। একজন ছাত্রী বললেন- তিনি ভবিষ্যতে ডাক্তার হতে চান, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, ঠিক ডা. জুবাইদা রহমানের মতো। কিন্তু অংকে দুর্বল হওয়ায় তার মনে ভয় কাজ করে। একজন শিক্ষার্থীর এমন প্রশ্নে তরুণের আত্মসন্দেহ, প্রতিযোগিতামূলক শিক্ষাব্যবস্থার চাপ এবং স্বপ্নের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিগত দুর্বলতার বাস্তবতা ফুটে ওঠে।
ওই ছাত্রীর প্রশ্নের জবাবে তারেক রহমান হাসিমুখে বললেন, ‘আমিও কিন্তু গণিতে দুর্বল ছিলাম’। এ একটি বাক্য কোনো রাজনৈতিক বক্তব্য নয়; এটি মানুষের সঙ্গে মানুষের সংযোগ, কোমলতা এবং আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে দেওয়ার ভাষা। এরপর তিনি আরও বললেন, ‘পরিশ্রম, ধৈর্য, পরিকল্পনা ও সময়ের বিনিয়োগে যেকোনো কঠিন বিষয় জয় করা সম্ভব।’ একজন নেতার আসল শক্তি এখানেই— তিনি মানুষকে তার নিজের শক্তি চিনিয়ে দেন।
শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এ সংলাপ দেখিয়েছে, তারেক রহমান শিশু, কিশোর এবং তরুণদের ভাষা বোঝেন; তিনি জটিল কথা জটিলভাবে নয় বরং সহজ করে, হৃদয়ের উষ্ণতা এবং দায়িত্ববোধ নিয়ে ব্যাখ্যা করতে পারেন। তার কথায় নেই রাগ, নেই অহংকার; আছে আন্তরিকতা, বিচক্ষণতা এবং নতুন প্রজন্মের প্রতি সীমাহীন আস্থা।
বহুল আলোচিত ও প্রশংসিত এ সংলাপের আরও একপর্যায়ে একজন ছাত্র জানতে চাইলেন, তারেক রহমানের প্রতিশ্রুতিগুলো কি নিছক রাজনৈতিক বক্তব্য, নাকি বাস্তবায়নের জন্য তার সুস্পষ্ট রূপরেখা আছে। বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি ও বাস্তবতার মধ্যে দূরত্ব মানুষকে হতাশ করেছে। তাই এ প্রশ্ন শুধু জিজ্ঞাসা ছিল না, ছিল প্রজন্মের অন্তর্গত ক্ষত থেকে উদ্ভূত সংশয়।
এবার ওই ছাত্রের প্রশ্নের জবাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান স্পষ্ট করলেন, ‘যে প্রতিশ্রুতি বাস্তবতার ভিতের উপর দাঁড়ায় না, তা রাজনীতি নয়; তা প্রতারণা।’ পাশাপাশি তিনি তুলে ধরলেন, রাষ্ট্রের কাঠামোগত পুনর্গঠনের ধারণা, প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণ, শিক্ষায় আধুনিক বিনিয়োগ, দক্ষতা ভিত্তিক কর্মসংস্থান, সুশাসন, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা এবং দুর্নীতিমুক্ত প্রতিষ্ঠান গঠনের প্রতিশ্রুতি।
অর্থাৎ তার প্রতিশ্রুতি কেবল ভাষণের অলংকার নয়; তার ভিত্তি আছে বাস্তব জ্ঞান, রাষ্ট্রচিন্তা ও নীতিনির্ধারণী অভিজ্ঞতায়।
কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে সেদিন আমরা একজন নেতাকে দেখিনি শুধুই বক্তৃতা দিতে; দেখেছি একজন চিন্তাশীল রাষ্ট্রনায়ককে, যিনি শোনেন, বোঝেন, বিশ্লেষণ করেন এবং সমাধানের দিকে পথ দেখান। তিনি শিক্ষার্থীদের সামনে ছিলেন বক্তা হিসেবে নয়; ছিলেন অভিভাবক, পথপ্রদর্শক এবং এক আন্তরিক মানবিক উপস্থিতি হিসেবে। এখানেই তার নেতৃত্বের স্বাতন্ত্র্যবোধ।
বাংলাদেশের ইতিহাসে সংকট যখনই তীব্র হয়েছে, নতুন নেতৃত্বের উদ্ভব ঘটেছে। আজকের সংকট কেবল রাজনৈতিক নয়; এটি নৈতিক সংকট, রাষ্ট্রচিন্তার সংকট, ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনার সংকট। এ অবস্থায় দেশের তরুণরা দেখছে, তারেক রহমান শুধু একটি রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধি নন; তিনি বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রযাত্রার চিন্তাগত, নৈতিক এবং সাংগঠনিক কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। তার নেতৃত্বের ভিত্তি ক্ষমতা নয়; মানুষ।
তারেক রহমান প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ঘৃণা ছড়ান না; তিনি বিভাজন নয়, পুনর্নির্মাণের ভাষায় কথা বলেন। আজকের বিশ্বে অগ্রসর রাষ্ট্রনেতাদের বৈশিষ্ট্য তিনটি- প্রজ্ঞা, সৌজন্য ও কৌশল; এই তিনটিই তার ভাষা এবং আচরণে দৃশ্যমান। তাই দেশের তরুণরা আজ বলছেন, তিনি ভবিষ্যতের রাষ্ট্রনায়ক। তিনি কেবল একটি নাম নন; তিনি একটি দিকনির্দেশনা, একটি সম্ভাবনা, একটি নৈতিক আস্থা। তিনি সেই নেতা, যিনি তরুণদের হাত ধরেছেন এবং বলছেন, ‘ভবিষ্যৎ তোমাদের, আমি তোমাদের সঙ্গে আছি।’
বাংলাদেশের আগামী পথরেখা আজ তরুণদের হাতে অংকিত হচ্ছে। আর সেই পথরেখার সূচনাবিন্দুতে দাঁড়িয়ে আছেন তারেক রহমান। একজন নেতা যিনি শোনেন, বোঝেন এবং নেতৃত্ব দেন মানবতা আর মানবিকতার প্রশস্ত ভিত্তির ওপর।
লেখক : ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) ড. একেএম শামছুল ইসলাম
মন্তব্য করুন