শনিবার ১৩ সেপ্টেম্বর রাত ১০টা ১৫ মিনিটে চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছেন লালন সংগীত শিল্পী ফরিদা পারভীন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তিনি দীর্ঘদিন বিভিন্ন ধরনের শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন। কিডনি জটিলতার কারণে তাকে সপ্তাহে দুদিন ডায়ালাইসিস করাতে হতো। গত ২ সেপ্টেম্বর তাকে মহাখালীর একটি বেসরকারি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়েছিল নিয়মিত ডায়ালাইসিসের জন্য। কিন্তু ডায়ালাইসিসের পর তার শারীরিক অবস্থা খারাপ হয়ে পড়লে চিকিৎসকরা হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। এরপর থেকে তিনি হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ছিলেন। শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হওয়ায় তাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়া হয়। কিন্তু সেখান থেকে আর ফেরা হলও না এই লালন কন্যার। পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন চিরতরে।
আজ সকালে ফরিদা পারভীনের মরদেহ সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখা হয়। সেখানে দুপুর ১২টার দিকে তেজকুনি পাড়ার বাড়ি থেকে ফ্রিজিং গাড়িতে করে তার মরদেহ আনা হয়। শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তার দেহ কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা দেয়। সেখানে কুষ্টিয়া সেন্ট্রাল পৌর গোরস্থানে আজ সন্ধ্যায় দাফন করা হবে বলে কালবেলাকে নিশ্চিত করেন ফরিদা পারভীন এর বড় ছেলে ইমাম নিমেরি উপল। তিনি বলেন, ‘মাকে নিয়ে কুষ্টিয়ার উদ্দেশে রওনা দিচ্ছি। সেখানে জানাজা শেষে কুষ্টিয়া সেন্ট্রাল পৌর গোরস্থানে আজ সন্ধ্যায় দাফন করা হবে। যেখানে এর আগে আমার নানা-নানিকে দাফন করা হয়। সবাই তার আত্মার জন্য দোয়া করবেন।’
কিডনিজনিত জটিলতা ছাড়াও ফরিদা পারভীন ফুসফুসের সমস্যায়ও ভুগছিলেন। এ ছাড়া তার ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও থাইরয়েডজনিত সমস্যাও ছিল।
১৯৫৪ সালে ৩১ ডিসেম্বর নাটোরের সিংড়া থানায় জন্ম নেওয়া ফরিদা পারভীন গানে গানে কাটিয়েছেন ৫৫ বছর। ১৪ বছর বয়সে ১৯৬৮ সালে ফরিদা পারভীনের পেশাদার সংগীতজীবন শুরু হয়। এরপর পার হতে হয় অনেক চড়াই-উতরাই। পারিবারিক সূত্রেই গানের ভুবনে আসা। গানের প্রতি বাবার টান ছিল বেশি। দাদিও গান করতেন। বাবার চাকরির সুবাদে বিভিন্ন জেলায় যেতে হয়েছে তাকে।
সংগীত জগতে ফরিদা পারভীনের পথচলা শুরু ১৯৬৮ সালে, রাজশাহী বেতারের তালিকাভুক্ত শিল্পী হিসেবে। ১৯৭৩ সালে দেশাত্মবোধক গান গেয়ে তিনি খ্যাতি পান। পরবর্তী সময়ে সাধক মোকসেদ আলী শাহর কাছে লালনগীতির তালিম নেন এবং ধীরে ধীরে লালনগীতির জীবন্ত কিংবদন্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। সংগীতে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৮৭ সালে তিনি একুশে পদক পান।
মন্তব্য করুন