শোকের ছায়া নেমে এসেছে দেশের সংগীত অঙ্গনে। ১৮ এপ্রিল সকালে সুনামগঞ্জের ছাতকে বাস ও সিএনজি অটোরিকশার মুখোমুখি সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন প্রতিভাবান তরুণ সংগীতশিল্পী ও গীতিকার পাগল হাসান। তার এমন অকাল মৃত্যুতে হৃদয় কাঁদছে সহকর্মী, ভক্তদের ও প্রিয়জনদের। তার এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না সংগীতশিল্পী আসিফ আকবর। তাইতো মনের কষ্ট, রাগ ক্ষোভ সব প্রকাশ করলেন নিজের মতো করে। প্রতিশ্রুতি দিলেন লেবানন থেকে বেঁচে ফিরলে যাবেন তার কবর জিয়ারত করতে।
লম্বা স্ট্যাটাসের শুরুতেই হাসানের সঙ্গে নিজের প্রথম পরিচয় ও সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে আসিফ লিখেছেন, ‘বাংলাদেশের সবচেয়ে জনপ্রিয় রাষ্ট্রীয় হত্যাকাণ্ড সড়ক দুর্ঘটনায় আজ নিহত হলো পাগল হাসান। তরুণ টগবগে সুনামগঞ্জের ছেলেটা গীতিকার সুরকার গায়ক হিসেবে ছিল অমিত প্রতিভার অধিকারী। মানুষ মইরা গেলে কদর বাইড়া যায়, বাইচ্চা থাকতে নিকৃষ্ট কয় মরলে শ্রেষ্ঠ পদক পায়- মূলত, এই গানটির মাধ্যমেই তার সঙ্গে সখ্যতা আমার। সৎ স্পষ্টবাদী বন্ধুবৎসল হাসান কথা বলেতো সিলেটের একসেন্টে। আফনে বারিত যাইবেন, ঘরে হাই কমোড লাগাইসি। নতুন ঘর বানাইসি, পানি কমলে যাইবেন। দুজনার ব্যস্ততায় আর যাওয়া হয়নি।’
এরপর হাসানের চিন্তাভাবনা ও দর্শনের প্রশংসা করে এই শিল্পী আরও লিখেছেন, ‘হাসান মতিউর রহমান- নিজেকে পাগল হাসান নামে শুনতেই পছন্দ করত। তার কথাবার্তা চিন্তাভাবনার দর্শন ছিল উচ্চ মার্গীয়। সে বলত- গরিবই গরিবরে মারে! অনেক গবেষণা করে দেখলাম তার কথাই সঠিক। বাংলাদেশে তোলোরে ভাই ফুটবলের জোয়ার- এটাই ছিল তার কথা সুরে গাওয়া শেষ গান। সে ছিল আর্জেন্টিনার ক্রেজি সাপোর্টার, গানের মধ্যেও আর্জেন্টিনার প্লেয়ারের নাম বেশি ঢুকিয়েছে, তার আনন্দের কথা ভেবে টুঁ শব্দও করিনি। আরেকটা গান করে রেখেছে- পাগলও বানাইয়া সুখী হইসোনি গো প্রিয়া। তাকে বলেছি গানটা তুইই গা, আমি প্রিয়া নিয়ে আর গাইব না।’
এরপর নিজেদের ঘোরাঘুরি একটি স্মৃতি তুলে ধরে আসিফ তার আত্মার শান্তি কামনা করে লিখেছেন, ‘একদিন বলল- ভাই কোনোদিন সাগর দেখসি না। নিয়ে গেলাম পতেঙ্গা, গভীর সাগরে চলে গেলাম স্পিডবোটে। সে কী আনন্দ তার ! সে ভাবতো খুব শক্তিশালী মানুষ আমি, ভাবতো আমাকে দিয়ে সব সম্ভব! বোকা ছেলে ! একসাথে কেরাম খেলতাম, আমাকে একটা গেম নীলে দিয়ে ভয়ে আর খেলতে চাইতো না! অফিসে পাশের রুমে দোতারা একটা নিয়ে উদাস মনে গান গাইতেই থাকতো, আমি শুনতাম নিজের রুম থেকে। একদিন বেগমকে ফোনে বলছিলাম টাকা লাগবে, সে বাইরে বের হয়ে বুথ থেকে টাকা তুলে এনে দিয়ে বললো লাগলে আরও দিবে, আমিতো অবাক !! এরকম হাজারো স্মৃতি আমাদের। তোর মৃত্যুর খবরে অনেকদিন পর অনেক কাঁদলাম ভাই আমার, আরও অনেক কাঁদবও। দোয়া করি- মহান আল্লাহ তোর আত্মার শান্তি দিন। তোর স্ত্রী আর ছেলে দুটোকে এই শোক বইবার শক্তি দিন। আমিন।’
স্টাটাসের শেষ অংশে এই শিল্পী প্রতিশ্রুতি দিয়ে লিখেছেন, ‘আজ লেবানন সফরে যাচ্ছি ভাই, বেঁচে ফিরলে যাব তোর আসল বাড়ি জিয়ারত করতে, আল্লাহর হাতে সোপর্দ। আমিন’পাগল হাসানের জনপ্রিয় লেখা ও সুরকরা গানের তালিকায় রয়েছে ‘জীবন খাতা’, ‘আসমানে যাইয়ো না রে বন্ধু’, ‘আমি এক পাপিষ্ঠ বান্দা’, ‘রেলগাড়ির ইঞ্জিন’সহ অসংখ্য গান রচনা করেছেন পাগল হাসান। জনপ্রিয় ব্যান্ডদল লালনের জন্যও ৩টি গান লিখেছিলেন। ব্যান্ডটির ‘রুহানি’, ‘পাগলা ঘোরা’, আর ‘পাগল চিনে না’ গানের গীতিকার ও সুরকার তিনি।
মন্তব্য করুন