ইসরায়েলে সেনাবাহিনীতে নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্ক ঘিরে ফের ফাটল ধরেছে প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকারে। জোটের অন্যতম শরিক ধর্মীয় রাজনৈতিক দল ইউনাইটেড টোরাহ জুডাইজম (ইউটিজে) সংসদ ও মন্ত্রণালয় থেকে পদত্যাগ করায় ইসরায়েলি পার্লামেন্টে নেতানিয়াহুর সংখ্যাগরিষ্ঠতা এখন মারাত্মক ঝুঁকিতে।
মঙ্গলবার (১৫ জুলাই) ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম রয়টার্স এক প্রতিবেদনে জানায়, ইউটিজে দলের ছয় সংসদ সদস্য ইতোমধ্যে পদত্যাগপত্র জমা দিয়েছেন, যা ৪৮ ঘণ্টা পর কার্যকর হবে। তারা অভিযোগ করেছেন- সরকার আল্ট্রা-অর্থডক্স ধর্মীয় শিক্ষার্থীদের সেনাবাহিনী থেকে বাদ রাখার প্রতিশ্রুতি রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। ফলে তারা জোটে থাকার যৌক্তিকতা হারিয়েছেন।
এদিকে ইউটিজের আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র ‘শাস’ দলও জোট ছাড়তে পারে এমন গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়েছে। এই দলটিও সরে গেলে নেতানিয়াহুর নেতৃত্বাধীন জোট সরকার সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারাবে।
ইউটিজে সংসদ সদস্যদের পদত্যাগ কার্যকর হতে ৪৮ ঘণ্টা সময় থাকায়, জোট টিকিয়ে রাখতে এবং সরকার পতনের ঝুঁকি এড়াতে নেতানিয়াহুর হাতে এই দুই দিনই শেষ সুযোগ। যদিও সংসদ চলতি মাসের শেষদিকে গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে যাবে, তাই আপাতত সরকার পতনের আশঙ্কা নেই। তবে রাজনীতিতে এ ঘটনাকে নেতানিয়াহুর জন্য এক বড় সতর্ক সংকেত হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
এই রাজনৈতিক সংকটের মধ্যে গাজা যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনাতেও প্রবল চাপের মুখে রয়েছেন নেতানিয়াহু। কাতারের মধ্যস্থতায় ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির একটি পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা চলছে, যাতে হামাসের হাতে থাকা বন্দিদের একটি অংশ মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং গাজায় মানবিক সহায়তা প্রবেশের সুযোগ তৈরি হতে পারে।
তবে যুদ্ধবিরতির বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে নেতানিয়াহুর কট্টর-ডানপন্থি জোটসঙ্গীরা- জাতীয় নিরাপত্তামন্ত্রী ইতামার বেন-গাভির এবং অর্থমন্ত্রী বেজালেল স্মোৎরিচ। তারা যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার পক্ষে থাকলেও মন্ত্রিসভায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে প্রয়োজনীয় সমর্থন রয়েছে বলে জানিয়েছেন নেতানিয়াহুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী টোপাজ লুক।
তিনি আর্মি রেডিওকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেন, সংসদে যদি সঠিক প্রস্তাব আনা হয়, তাহলে প্রধানমন্ত্রী সেটি পাস করাতে সক্ষম হবেন।
উল্লেখ্য, চলমান যুদ্ধে সাধারণ ইসরায়েলিরাও দিন দিন ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন। কারণ, গাজায় হামাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালাতে গিয়ে ইসরায়েল প্রায় ৪৫০ সৈন্য হারিয়েছে, যা সাম্প্রতিক ইতিহাসে নজিরবিহীন। অন্যদিকে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরায়েলি হামলায় এখন পর্যন্ত ৫৮ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন এবং প্রায় পুরো গাজা উপত্যকা পরিণত হয়েছে ধ্বংসস্তূপে।
প্রায় ২০ লাখ মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়েছেন এবং মারাত্মক খাদ্য, পানি ও ওষুধ সংকটে মানবিক বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন তারা। এর মাঝেই সেনাবাহিনীতে নিয়োগ সংক্রান্ত বিতর্ক আরও জটিলতা তৈরি করেছে।
ইসরায়েলের আল্ট্রা-অর্থডক্স ধর্মীয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা দীর্ঘদিন ধরে সামরিক বাহিনীতে নিয়োগ থেকে ছাড় পেয়ে আসছেন। কিন্তু নতুন নিয়োগ বিলের আওতায় তাদের অন্তর্ভুক্ত করার পরিকল্পনা সামনে আসতেই ইউটিজে ও অন্যান্য ধর্মীয় দল তীব্র বিরোধিতা শুরু করে।
এই ইস্যুই এখন নেতানিয়াহু সরকারের রাজনৈতিক টালমাটাল অবস্থার কেন্দ্রে রূপ নিয়েছে।
মন্তব্য করুন