কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১০ মার্চ ২০২৪, ০৪:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

তৃতীয় ‘থ্যালাসেমিয়া পেশেন্টস অ্যান্ড প্যারেন্টস' মিট-আপ

তৃতীয় ‘থ্যালাসেমিয়া পেশেন্টস অ্যান্ড প্যারেন্টস' মিট-আপ। ছবি : সৌজন্য
তৃতীয় ‘থ্যালাসেমিয়া পেশেন্টস অ্যান্ড প্যারেন্টস' মিট-আপ। ছবি : সৌজন্য

বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভে জমকালো আয়োজনের মধ্য দিয়ে গত ৮ মার্চে অনুষ্ঠিত হয়েছে উই আর নট এলোন (আমরা একা নই)- WANA আয়োজিত তৃতীয় থ্যালাসেমিয়া পেশেন্টস অ্যান্ড প্যারেন্টস' মিট-আপ ২০২৪। অনুষ্ঠানে দেশের নানা প্রান্ত থেকে বিপুলসংখ্যক থ্যালাসেমিয়া রোগী ও তাদের অভিভাবকগণ অংশগ্রহণ করেন। অংশগ্রহণকারীরা সেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারগণকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ পান।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বরগুনা-২ আসনের সংসদ সদস্য সুলতানা নাদিরা। বিশেষ অতিথি ছিলেন অধ্যাপক ওয়াকার আহমেদ খান। অনুষ্ঠানে কী-নোট স্পিকার হিসেবে বক্তব্য রাখেন অধ্যাপক ডা. মো. বেলায়েত হোসেন।

বিশেষ এই আয়োজনে প্রধান বক্তার বক্তব্যে ডা. মো. বেলায়েত হোসেন থ্যালাসেমিয়া রোগীদের সামগ্রিক শারীরিক, সামাজিক ও আর্থিক সমস্যা এবং ভয়াবহতার চিত্র তুলে ধরেন। থ্যালাসেমিয়া আক্রান্ত পরিবারের দুর্দশার কথা উল্লেখ করে তিনি বর্তমান সরকারকে প্রতিটি বিভাগ ও জেলা পর্যায়ে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা কেন্দ্র স্থাপনের অনুরোধ জানান এবং ওষুধ ও চিকিৎসার খরচ বহনে সরকারকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের ১০ থেকে ১২% মানুষ অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি জনগণ এই রোগের বাহক যাদের বিয়ের আগে হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস টেস্ট করে তাদের সন্তানদের এই রোগ থেকে বাঁচানোর সুযোগ আছে। এ রোগ প্রতিরোধে উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে। প্রতিটি জেলা সরকারি হাসপাতালে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য অন্তত দুটি শয্যা সংরক্ষিত রাখার দাবি জানান তিনি। কবিরাজ ও হোমিওপ্যাথি চিকিৎসকদের মিথ্যা আশ্বাসে কোনো রোগীকে বিভ্রান্ত হয়ে ভুল চিকিৎসা না নেওয়ার জন্য সতর্ক করেন তিনি।

ওয়ানার সভাপতি কামরুন নাহার মুকুল সংগঠনটির পক্ষ থেকে রোগীদের দাবি-দাওয়া পেশ করেন যার মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশের প্রতিটি রক্ত পরিসঞ্চালন কেন্দ্রে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য নিরাপদ রক্ত সঞ্চালনের ব্যবস্থা, থ্যালাসেমিয়ার জন্য সকল প্রকার ওষুধ বিনামূল্যে বা ভর্তুকি মূল্যে নিশ্চিত করাসহ অন্যান্য দাবি।

অনুষ্ঠানে WANA-এর আগামীদিনের জন্য কর্মপরিকল্পনা ঘোষণা করে, যার মধ্যে রয়েছে ঢাকার বাইরের কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে সচেতনতামূলক কর্মসূচি, বিভিন্ন সমাজসেবা সংস্থা এবং বিভিন্ন পেশাজীবীদের সহায়তায় যৌথভাবে দেশের বিভিন্ন স্থানে সচেতনতামূলক কর্মসূচি পরিচালনা করা, বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সাথে সংযোগ স্থাপন করে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসার মান উন্নয়ন, থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচি এবং রোগীর পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ডোনার পুল তৈরি, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও গণমাধ্যমের মাধ্যমে সচেতনতামূলক প্রচার, সব ধর্মের ধর্মীয় উপাসনালয়ে ধর্মীয় নেতাদের সহায়তায় সচেতনতামূলক প্রচার, যাকাত এবং অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমে দরিদ্র থ্যালাসেমিয়া রোগীদের আর্থিক সহায়তা প্রদান এবং রোগীদের জন্য কর্মমুখী প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা।

প্রধান অতিথি সুলতানা নাদিরা, এমপি থ্যালাসেমিয়া প্রতিরোধে জনসচেতনতা সৃষ্টির আহ্বান জানান। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থ্যালাসেমিয়া বাহক দম্পতিদের জন্য বিনামূল্যে গর্ভস্থ ভ্রূণ পরীক্ষা এবং থ্যালাসেমিয়া রোগীদের জন্য একটি জাতীয় নিবন্ধন কর্মসূচি গ্রহণ করার প্রতিশ্রুতি দেয়। সরকার ঘোষণা করেছে ২০২৮ সালের মধ্যে বাংলাদেশ থেকে থ্যালাসেমিয়া নির্মূল করা হবে। তিনি এই লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন যে, জাতীয় পর্যায়ে সকল থ্যালাসেমিয়া রোগীর নিবন্ধন সমাজের সকল ক্ষেত্রে থ্যালাসেমিয়া রোগীদের অংশগ্রহণ এবং কর্মসংস্থানসহ সকল ক্ষেত্রে তাদের বিশেষ সুবিধা প্রদানকে সহজতর করবে। তিনি এই রোগীদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার এবং কম খরচে নিরাপদ রক্ত সঞ্চালন ও ওষুধ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। তিনি বিয়ের বয়সের আগেই স্কুল/কলেজ পর্যায়ে হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস পরীক্ষার মাধ্যমে থ্যালাসেমিয়ার বাহক শনাক্ত করার জন্য সাধারণ জনগণকে আহ্বান জানান যাতে সঠিক কাউন্সেলিংয়ের মাধ্যমে সন্তানের ভবিষ্যতের জন্য অভিভাবকদের সচেতন সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হয়।

অনুষ্ঠানের অতিথি ডা. মোহাম্মদ সরোয়ার হোসেন তার বক্তব্যে থ্যালাসেমিয়া নিয়ে তার গবেষণার কথা উল্লেখ করে বলেন, গবেষণায় দেখা গেছে বাংলাদেশের থ্যালাসেমিয়া রোগীদের ৬৩ শতাংশ মা বিষণ্ণতায় ভোগেন। বাংলাদেশে অসংক্রামক রোগের মধ্যে থ্যালাসেমিয়া সবচেয়ে বিপজ্জনক বলে উল্লেখ করেন তিনি।

অধ্যাপক ওয়াকার আহমেদ খান তার বক্তব্যে বাংলাদেশে থ্যালাসেমিয়া চিকিৎসা ও প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনার ব্যর্থতার কথা তুলে ধরে বলেন, হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস ও ডিএনএ ল্যাব সুবিধা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এ ব্যাপারে সরকার এগিয়ে আসবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।

থ্যালাসেমিয়া যোদ্ধাদের সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান অধ্যাপক ডা. তাসনিম আরা। তিনি থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত পরিবারের সকল সদস্যকে হিমোগ্লোবিন ইলেক্ট্রোফোরেসিস পরীক্ষা করার পরামর্শ দেন। তিনি থ্যালাসেমিয়াকে আশীর্বাদ হিসেবে বিবেচনা করার জন্য এবং থ্যালাসেমিয়া কোনো বাধা নয় বলে বিশ্বাস করে তাদের সন্তানদের সঠিকভাবে গড়ে তোলার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।

২০২১ সালে ওয়ানার যাত্রা শুরু হওয়ার পর থেকে, তারা প্রতি বছর মিট-আপ প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করে আসছে। এটি তৃতীয় থ্যালাসেমিয়া পেশেন্টস' মিট-আপ। ২৫ ডিসেম্বর ২০২১-এ প্রথমটি আয়োজন করা হয়েছিল, যেখানে শতাধিক রোগী, অর্ধশত থ্যালাসেমিয়া পরিবারের সদস্য এবং কিছু বিশিষ্ট চিকিৎসকসহ ২০০ জনেরও বেশি অংশগ্রহণকারী উপস্থিত ছিলেন। ৩ ফেব্রুয়ারি-২০২৩ দ্বিতীয় মিট-আপ প্রোগ্রামটি সাজানো হয়েছিল, যেখানে আরও বেশি মানুষ অংশগ্রহণ করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিশ্বনবী (সা.) যে কারণে কবুতরকে শয়তান বলেছেন

খালাস পেয়ে ইমন বললেন, ‘বিজয় পেয়েছি, আলহামদুলিল্লাহ’

সন্ধ্যার মধ্যে ৬০ কিমি বেগে ঝড়ের আভাস

বলিউডের নতুন জুটি সালমান-রাশমিকা

মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান হলেন তৃতীয় লিঙ্গের বর্ষা

বিধ্বস্ত প্রশিক্ষণ বিমানের এক পাইলট নিহত

মানুষের বিরোধিতা করতে গিয়েই মাছের এই পরিণতি!

যুদ্ধবিরতি প্রতিষ্ঠায় ইসরায়েলকে ছাড় দিতে নারাজ ফিলিস্তিনি যোদ্ধারা

সিটি ব্যাংকে চাকরি, কর্মস্থল ঢাকা

সরকারি খরচে হজে যাচ্ছেন কতজন?

১০

সোহেল চৌধুরী হত্যা / আজিজ মোহাম্মদ ভাইসহ ৩ জনের যাবজ্জীবন

১১

চিত্রনায়ক সোহেল চৌধুরী হত্যা মামলার রায় পড়া শুরু

১২

জমজম কূপের ভেতরের রহস্য অবাক করল ডুবুরিদের

১৩

অনেক নারী আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে : প্রভাস

১৪

কেন ১৫০০ বছর ধরে কাবার চাবি এই সাধারণ পরিবারের কাছে?

১৫

মার্কিন দূতাবাসের দিকে গণসংহতির মিছিল

১৬

মালয়েশিয়ায় গিয়ে নিখোঁজ আলমগীর

১৭

হাইকোর্টে প্রার্থিতা ফিরে পেলেন মৌলভীবাজারের তাজ

১৮

রাজধানীতে জামায়াতের বিক্ষোভ

১৯

পুরো দলের রান মাত্র ১২

২০
X