

ব্যস্ত জীবনে শরীরের ভেতরে কী চলছে, তা আমরা বেশিভাগ সময়ই বুঝতে পারি না। ক্লান্তি, ওজন বাড়া-কমা, চুল পড়া—এসবকে সাধারণ সমস্যা ভেবে এড়িয়ে যাই। অথচ শরীর নীরবে সংকেত দেয় বড় বড় রোগের। আর আশ্চর্য হলেও সত্য, আপনার চোখ সেই সংকেতগুলোর অন্যতম শক্তিশালী বাহক। অনেক সময় চোখের ছোট পরিবর্তনই বলে দিতে পারে থাইরয়েড গ্রন্থির অবস্থা। বিশেষ করে গ্রেভস রোগ বা থাইরয়েডের অতিসক্রিয়তার ক্ষেত্রে চোখই প্রথম ‘অ্যালার্ম’ বাজায়।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস একটি প্রতিবেদনে জানিয়েছে, চোখের কিছু নির্দিষ্ট পরিবর্তন থাইরয়েড সমস্যার স্পষ্ট ইঙ্গিত দেয়। জানা থাকা জরুরি, কোন লক্ষণ দেখলেই বিশেষজ্ঞের কাছে ছুটে যাবেন।
১. কেন চোখ দেখেই থাইরয়েডের সমস্যা বোঝা যায়?
থাইরয়েডের অতিসক্রিয়তা বা হাইপারথাইরয়েডিজমের একটি বিশেষ রূপ হলো গ্রেভস রোগ। এটি একটি অটোইমিউন রোগ, যেখানে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা ভুলবশত থাইরয়েড গ্রন্থিকে আক্রমণ করে এবং অতিরিক্ত হরমোন তৈরি করে। এই রোগটি প্রায় ৩০ শতাংশ ক্ষেত্রে চোখেও প্রভাব ফেলে, যাকে গ্রেভস অফথ্যালমোপ্যাথি বা থাইরয়েড আই ডিজিজ বলা হয়।
২. হাইপারথাইরয়েডিজমের চোখের লক্ষণ
গ্রেভস রোগে আক্রান্ত ব্যক্তির চোখে নিম্নলিখিত সুস্পষ্ট পরিবর্তনগুলি দেখা যায়—
চোখ কপালে ওঠা : এটি সবচেয়ে স্পষ্ট লক্ষণ। চোখ যেন গর্ত থেকে বেরিয়ে এসেছে বলে মনে হয়। চোখের পেছনে চর্বি এবং পেশী ফুলে যাওয়ার কারণে চোখ সামনের দিকে ঠেলে আসে।
পলক সঙ্কুচিত হওয়া : চোখের পাতা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি ওপরের দিকে উঠে থাকে, যার ফলে চোখকে সব সময় বিস্ফারিত বা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বলে মনে হয়।
শুষ্কতা ও লালভাব : যেহেতু চোখ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি খোলা থাকে, তাই চোখ শুকিয়ে যায়, জ্বালা করে এবং লাল হয়ে যায়।
দ্বৈত দৃষ্টি : চোখের পেশিগুলো ফুলে ও শক্ত হয়ে যাওয়ার কারণে চোখের নড়াচড়ায় ভারসাম্য নষ্ট হয়, যার ফলে অনেকেই দুটি ছবি দেখতে পান।
৩. হাইপোথাইরয়েডিজমের চোখের লক্ষণ
থাইরয়েডের নিষ্ক্রিয়তা বা হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ ততটা নাটকীয় না হলেও, চোখে কিছু পরিবর্তন দেখা যায়-
চোখের চারপাশে ফোলাভাব : শরীরের অন্যান্য অংশের মতো চোখের চারপাশের টিস্যুতে জল জমার কারণে বা এডিমার (Edema) কারণে চোখ ফুলে যায়।
ভ্রু কমে যাওয়া : হাইপোথাইরয়েডিজমে অনেকে ভ্রুর বাইরের দিকের চুল হারিয়ে ফেলেন।
ঝুলে পড়া চোখের পাতা : পেশি দুর্বলতার কারণে চোখের পাতা ঝুলে যেতে পারে।
কখন সতর্ক হবেন এবং কেন পরীক্ষা জরুরি?
চিকিৎসকরা বলছেন, যদিও চোখের লক্ষণগুলো থাইরয়েডের একটি বড় ইঙ্গিত, তবুও এটি সমস্যার একমাত্র নির্ণায়ক নয়। এটি নির্ণয়ের জন্য অবশ্যই রক্ত পরীক্ষা করাতে হবে, যেখানে TSH, T3 এবং T4 হরমোনের মাত্রা পরিমাপ করা হয়।
বিশেষ সতর্কতা
যদি আপনার চোখের কোনো পরিবর্তন হঠাৎ করে দেখা দেয় বা দৃষ্টিশক্তির সমস্যা শুরু হয়, তবে অবিলম্বে একজন এন্ডোক্রিনোলজিস্ট বা চক্ষু বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
হ্যাঁ, চোখ দেখেই থাইরয়েডের সমস্যার একটি বড় ইঙ্গিত পাওয়া যায়, বিশেষত যদি চোখ কপালে ওঠার মতো লক্ষণ দেখা দেয় যা গ্রেভস রোগের সঙ্গে যুক্ত। তবে সঠিক রোগ নির্ণয় এবং চিকিৎসার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ এবং রক্ত পরীক্ষা অপরিহার্য।
মন্তব্য করুন