তাজলিনা শারমিন খান
প্রকাশ : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১১:১৪ পিএম
আপডেট : ০৮ মার্চ ২০২৪, ১১:১৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোম, আছে চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়

প্রতীকী ছবি
প্রতীকী ছবি

সাধারণত প্রতি মাসে নারীদের ডিম্বাশয় থেকে একটি করে ডিম্বাণু পরিপক্ব হয়ে বের হয়ে আসে। যার কারণে নারীদের প্রতিমাসে মাসিকের চক্র ঠিক থাকে। তবে যাদের পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যা থাকে, তাদের ক্ষেত্রে দেখা যায় হরমোনের ভারসাম্যহীনতার কারণে প্রতিমাসে একটি করে ডিম্বাণু পরিপক্ব না হয়ে অনেক ডিম্বাণু একসাথে পরিপক্ব হওয়ার চেষ্টা করে। তবে শেষ পর্যন্ত কোনোটাই খুব বেশি পরিপক্ব হতে পারে না এতে করে ডিম ফুটে বেরিয়ে আসতে পারে না। এই কারণে মাসিক অনিয়মিত হয়ে যায়। এটাকে ‘এন অভুলেটরি’ সাইকেল বলা হয়। এ বিষয়টির সাথে আরও অনেক কিছু জড়িত থাকে। যেমন : এই সমস্যার সাথে তার অনিয়মিত মাসিক হয়, কারও কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় অনেক দেরিতে মাসিক হচ্ছে, অথবা কারও কারও অনেকদিন ধরেই হয় না। এর সাথে তার ওজনাধিক্যের সমস্যা থাকে, অবাঞ্চিত লোমের সমস্যা থাকে। একে সম্মিলিতভাবে বলা হয় পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোম Polycystic ovary syndrome (PCOS)। এর সাথে বন্ধ্যাত্বের বিষয়টিও জড়িত।

PCOS জিনগত সমস্যা হতে পারে এবং সাধারণত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে বাহিত হয়ে পৌঁছায় পরবর্তী প্রজন্মে। PCOS এর চিকিৎসা সাধারণত একেকটি সমস্যা যেমন বন্ধ্যাত্ব, ওজন বৃদ্ধি, ব্রণ ইত্যাদিকে লক্ষ্য করে করা হয়ে থাকে। পলিসিস্টিক ওভারি সিন্ড্রোমের মূল কারণ অজানা। তাই পূর্বে নির্ধারণ করা হলে দীর্ঘমেয়াদি সমস্যা যেমন ডায়াবেটিস, হৃদরোগের ঝুঁকি কমে যায়।

যে সব কারণে POCS এর সমস্যা হতে পারে

প্রথম কারণ হলো ওজন। খাবার যারা ভালোবাসে তাদের হতে পারে। আবার জেনেটিক কারণেও এটি হতে পারে। এছাড়া কিছু অজানা কারণও রয়েছে।

সাধারণত বয়ঃসন্ধিকালীন অবস্থায় যখন থেকে মাসিক শুরু হয়, তার কিছুদিন পর থেকে এই সমস্যা হতে পারে। তবে আমাদের সমস্যা হলো, তখন থেকে আমরা বিষয়টিকে ততটা গুরুত্ব দেই না। পরবর্তীকালে যখন দেখা যায়, বিয়ে হয়ে গেছে বা বিয়ের পর গর্ভধারণ করছে না, তখন রোগী বন্ধ্যাত্বের সমস্যা নিয়ে ডাক্তার দেখাতে গেলে পরীক্ষা করতে গিয়ে দেখা যায় সে পলিসিস্টিক ওভারির সমস্যায় ভুগছে।

যেহেতু PCOS নিরাময় যোগ্য সেজন্য অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিৎ যখনই এ ধরনের বিষয়গুলো দৃষ্টিগোচর হয়। যেহেতু একজন মেয়ের জন্য মাসিক অনেক বড় ব্যাপার, তার স্বাভাবিক জীবন ধারণের জন্য, গর্ভাবস্থার জন্য, মানসিক শান্তির জন্য। এ কারণে যদি কারও মাসিক অনিয়মিত থাকে, যদি সেটা দেড় মাসের বেশি থাকে, যদি সেটা দেড় মাস থেকে দুই মাস পরপরও হয় তারপরও অবশ্যই উচিত চিকিৎসকের কাছে যাওয়া। আবার যদি কারও ক্ষেত্রে দেখা যায় হঠাৎ করে ওজন বেড়ে যাচ্ছে, তখন সেক্ষেত্রেও তাকে সতর্ক হওয়া উচিত।

PCOS-এর সম্ভাব্য লক্ষণসমূহ

১. শরীরের বিভিন্ন অংশে অপ্রয়োজনীয় চুল গজানো যেমন– মুখমণ্ডল, স্তন, হাত কিংবা পায়ের পাতায়। ২. প্রতিনিয়ত চুল পড়া বা চুলের ঘনত্ব হালকা হতে থাকা। ৩. ত্বক অতিরিক্ত তেলতেলে হওয়া বা ব্রণ হওয়া। ৪. শরীরের বিভিন্ন অংশের ত্বক কালো হয়ে যেতে থাকা যেমন–হাত কিংবা স্তনের নিচের ত্বকে, গলার পেছনের অংশে, কুঁচকিতে কালো দাগ ইত্যাদি। ৫. ঘুমে সমস্যা হওয়া কিংবা সারাক্ষণ দুর্বলতা অনুভব করা। ৬. মাথাব্যথা। ৭. পিরিয়ডকালীন সময়ে অতিরিক্ত রক্ত যাওয়া। ৮. অনিয়মিত পিরিয়ড হওয়া। ৯. গর্ভধারণে সমস্যা হওয়া। ১০. ওজন বাড়তে থাকা।

চিকিৎসা ও প্রতিরোধের উপায়

যদি কারও কেবল মাসিকের সমস্যা থাকে তবে তাদের জন্য প্রথম চিকিৎসা হলো ওজন কমিয়ে ফেলা। এটার জন্য সে ব্যায়াম করতে পারে। হাঁটতে পারে। প্রয়োজনে ডায়েটেশিয়ানের পরামর্শ নিতে পারে। মূলতঃ পলিসিস্টিক ওভারিয়ান সিন্ড্রোমে ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্স হয়ে যায়। এর জন্য হাইপার এন্ড্রোজেনিজম হয়। এন্ড্রোজেন হচ্ছে, পুরুষ হরমোন। মেয়েদের শরীরের যদি পুরুষ হরমোনের পরিমাণ বেড়ে যায়, তখনই দেখা যায় ওজন বাড়তে থাকে, লোম গজাতে থাকে, মাসিক অনিয়মিত হতে থাকে। তখন তাদেরকে ব্যায়ামের পাশাপাশি মেটফরমিন নামের একটি ওষুধ দেওয়া যায়। যেটা তার এন্ড্রোজেনের মাত্রাকে কমিয়ে দেয়। যখনই এন্ড্রোজেনের মাত্রা কমে যায় তখনই এই উপসর্গগুলো ঠিক হয়ে যায়। যদি ঠিক সময়ে নেওয়া হয় তাহলে ডিম্বাণুর পরিপক্বতা ঠিক থাকে, মাসিক নিয়মিত হয়ে যায়। আর যদি কারও বন্ধ্যাত্বের সমস্যা থাকে তবে তাদের ক্ষেত্রে ল্যাপরোস্কপি করানো হয়।

ল্যাপরোস্কপিতে ছোটো ছোটো অনেক সিস্টকে পাংচার (টুকরো) করে দেওয়া যায়। এতে করে ভেতরে যে বাড়তি এন্ড্রোজেন থাকে, সেটি বের হয়ে যায়। এর ফলে হরমোনের ভারাসাম্যহীনতা ঠিক হয়ে গিয়ে মাসিক ঠিক হয়ে যায়। দেখা যায় ল্যাপরোস্কপি করার পর খুব দ্রুতই সন্তান ধারণ সম্ভব হয়।

PCOS যারা ভোগেন তাদের জন্য এটা প্রতিরোধের প্রথম উপায় হলো ওজন কমানো। এছাড়াও চিকিৎসার সঙ্গে সঙ্গে, PCOS থাকা মহিলাদের স্বাস্থ্যকর আহার এবং ব্যায়াম একান্ত প্রয়োজন। ওজন ঝরে হরমোনের ভারসাম্য ফিরে আসতে পারে এবং তা মাসিক চক্র নিয়মিত হয়ে উঠতে সাহায্য করে।

রোগী যদি মনোকষ্ট বা অবসাদে ভোগেন, তবে PCOS এর নিয়ন্ত্রণ প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে পড়ে। কখনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের সাহায্য প্রয়োজন হতে পারে, তাই নিজের সমস্যা চেপে না রেখে, অবসাদে ভুগলে কোনো মনোরোগ বিশেষজ্ঞের শরণাপন্ন হোন। নিজের মনোবল ও উপযুক্ত চিকিৎসা নিয়ে PCOS কে সারিয়ে তোলা কোনো কঠিন বিষয় নয়।

লেখক: তাজলিনা শারমিন খান, নিউট্রিশনিস্ট ও ডায়েটিশিয়ান কনসেল হেলথ, ক্লে বিউটি অ্যান্ড স্পা, জেনারেল মেম্বার অ্যাট বাফনা

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ঢাকায় গাইবেন আতিফ আসলাম, আয় যাবে জুলাই শহীদদের পরিবারে

ঢাকা-৭ আসনে ৩১ দফার প্রচারণা মীর নেওয়াজের

গভীর রাতে সাংবাদিক সোহেলকে তুলে নিয়ে গেছে ডিবি

বাংলাদেশের কাছে হারের পর যা বললেন ভারতের কোচ

ভারতের বিপক্ষে জয় ক্যারিয়ারের সেরা মুহূর্তের একটি : হামজা চৌধুরী

হাসিনাকে ফেরাতে দিল্লিকে চিঠি দিচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়

রাজধানীতে রাতে গাড়িতে আগুন

পিপি কার্যালয়ের সামনে পটকা ফুটিয়ে ভীতির চেষ্টা

গভীর রাতে রাজধানীতে মার্কেটে আগুন

বাংলাদেশ দলকে জামায়াত আমিরের অভিনন্দন

১০

টানা ২ দফায় স্বর্ণের দাম কত কমলো দাম?

১১

বাংলাদেশ ব্যাংকের মতিঝিল কার্যালয়ে বন্ধ হচ্ছে ৫ সেবা

১২

পারিবারিক নির্যাতনের শিকার ঝালকাঠির শিশু রাইসার পাশে তারেক রহমান

১৩

ভারতকে হারিয়ে হামজাদের জন্য ২ কোটি টাকার তাৎক্ষণিক বোনাস

১৪

২২ বছর পর বাংলাদেশের ভারত বধে তারেক রহমানের অভিনন্দন

১৫

কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে আ.লীগ নেতার মৃত্যু

১৬

তারেকের দল নিয়ে যে তথ্য দিল ইসি

১৭

জনগণের ভালোবাসাই আমার শক্তি : ফারুক

১৮

কালবেলা-এসএমসি ডায়াপার গোলটেবিল বৈঠক / সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সম্ভব শিশুর নিউমোনিয়া প্রতিরোধ

১৯

তিউনিসিয়ার বিপক্ষে যে একাদশ নিয়ে মাঠে নামতে পারে ব্রাজিল

২০
X