ব্রেস্ট ক্যান্সার বা স্তন ক্যান্সার আজকের দিনে একটি খুবই পরিচিত স্বাস্থ্য সমস্যা। এটি মূলত নারীদের মধ্যে বেশি দেখা গেলেও পুরুষদেরও এই রোগ হতে পারে। অনেক সময় শুরুতে তেমন কোনো লক্ষণ বোঝা যায় না। কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে রোগটি জটিল হতে পারে। এজন্য এই ক্যান্সার সম্পর্কে আগে থেকেই জানা, লক্ষণ চিনে নেওয়া এবং নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো খুবই জরুরি। সচেতন থাকলেই রোগটি দ্রুত ধরা সম্ভব এবং চিকিৎসার ফলও ভালো পাওয়া যায়।
চলুন প্রথমেই জেনে নিই ব্রেস্ট ক্যান্সার কী?
ব্রেস্ট ক্যান্সার তখনই হয়, যখন স্তনের কোষগুলো অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যেতে থাকে। এতে স্তনের ভেতরে একটি চাকা বা গাঁট তৈরি হয়, যেটা এক্স-রে বা অনেক সময় হাত দিয়েও বোঝা যায়। যদি শুরুতেই ধরা না পড়ে তাহলে এই ক্যান্সার শরীরের অন্য অংশে ছড়িয়ে পড়তে পারে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের সাধারণ লক্ষণগুলো
- সবার ক্ষেত্রে লক্ষণ একরকম নাও হতে পারে। কেউ কেউ শুরুর দিকে কিছুই টের পান না। নিচে কিছু সাধারণ লক্ষণ দেওয়া হলো:
- স্তন বা বগলের নিচে নতুন কোনো গাঁট বা চাকা অনুভব হওয়া
- স্তনের কোনো অংশে ফোলাভাব বা মোটা মনে হওয়া
- স্তনের চামড়া কুঁচকে যাওয়া বা ডিম্পল পড়ে যাওয়া
- স্তনের বা বোঁটার চামড়া লাল হওয়া বা খোসপাঁচড়ার মতো হওয়া
- বোঁটা থেকে দুধ ছাড়া অন্য কিছু (যেমন রক্ত) বের হওয়া
- স্তনের আকৃতি বা আকারে পরিবর্তন
- স্তনের কোনো অংশে ব্যথা অনুভব হওয়া
এই লক্ষণগুলো সব সময় ক্যান্সার বোঝায় না, তবে এমন কিছু হলে অবশ্যই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া দরকার।
কাদের বেশি ঝুঁকি থাকে?
সবার ক্ষেত্রে ঝুঁকি একরকম নয়। কিছু ঝুঁকি কমানো যায়, আবার কিছু নিয়ন্ত্রণে রাখা যায় না। যেমন:
বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে ঝুঁকিও বাড়ে
পরিবারের ইতিহাস: মা, বোন বা নিকট আত্মীয়ের ব্রেস্ট ক্যান্সার থাকলে ঝুঁকি বাড়ে
জেনেটিক কারণ: বিশেষ কিছু জিন (যেমন BRCA1, BRCA2) থাকলে ক্যান্সারের সম্ভাবনা বেশি
হরমোনজনিত কারণ: খুব অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হওয়া, দেরিতে মেনোপজ হওয়া বা হরমোন থেরাপি নেওয়া
জীবনযাপন: ধূমপান, অতিরিক্ত মদ্যপান, স্থূলতা, ব্যায়ামের অভাব
প্রসব ও মাতৃত্ব: ৩০ বছর পরে প্রথম সন্তান নেওয়া বা সন্তান না নেওয়া
কীভাবে রোগ নির্ণয় করা হয়?
ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় করার জন্য কিছু পরীক্ষা করা হয়—
ম্যামোগ্রাম: স্তনের এক্স-রে, যা ক্যান্সার ধরতে সাহায্য করে
আল্ট্রাসাউন্ড: গাঁট থাকলে সেটা ভালোভাবে দেখা যায়
বায়োপসি: স্তন থেকে কোষ নিয়ে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়
MRI স্ক্যান: ঝুঁকি বেশি থাকলে এই পরীক্ষা করা হয়
চিকিৎসার পদ্ধতি
রোগের ধরন, স্তর ও রোগীর স্বাস্থ্যের ওপর নির্ভর করে চিকিৎসা হয়। কিছু সাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি:
অপারেশন: গাঁট বা আক্রান্ত অংশ কেটে ফেলা (ল্যাম্পেকটমি বা মাসটেকটমি)
রেডিয়েশন: ক্যান্সার কোষ ধ্বংস করতে রেডিওথেরাপি
কেমোথেরাপি: ওষুধ দিয়ে ক্যান্সার কোষ মেরে ফেলা বা কমানো
হরমোন থেরাপি: ক্যান্সার কোষ যাতে হরমোন না পায়, সেই ব্যবস্থা
টার্গেট থেরাপি: ক্যান্সার কোষের নির্দিষ্ট অংশে কাজ করে এমন ওষুধ
ইমিউনোথেরাপি: শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দিয়ে ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই
প্রতিরোধও আগেই জানা সম্ভব কি?
সব ব্রেস্ট ক্যান্সার প্রতিরোধ করা না গেলেও কিছু কাজ করলে ঝুঁকি কমানো যায়:
- ওজন ঠিক রাখা
- নিয়মিত ব্যায়াম করা
- অ্যালকোহল কম খাওয়া
- ধূমপান না করা
- সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ানো
- নিয়মিত চিকিৎসা পরীক্ষা ও ম্যামোগ্রাম করা
৪০ বছর বয়সের পর থেকেই নিয়মিত ম্যামোগ্রাম করার পরামর্শ দেওয়া হয়। তবে যাদের ঝুঁকি বেশি, তাদের আগে থেকেই শুরু করা দরকার।
ব্রেস্ট ক্যান্সার একটি মারাত্মক রোগ হলেও আগেভাগে ধরা পড়লে পুরোপুরি ভালো হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। তাই নিজের শরীরের প্রতি সচেতন থাকা, নিয়মিত চেকআপ করানো এবং যে কোনো অস্বাভাবিক পরিবর্তন হলে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে যাওয়া খুবই জরুরি। সচেতন থাকুন, সুস্থ থাকুন।
মন্তব্য করুন