

হঠাৎ চোখের পাতা কেঁপে উঠছে, পায়ের পেশিতে টান পড়ছে কিংবা বিশ্রাম নেওয়ার সময়ও হাত-পা অদ্ভুতভাবে কাঁপছে—এমন অভিজ্ঞতা অনেকেরই হয়েছে। এসব হলে স্বাভাবিকভাবেই ভয় কাজ করে। মনে প্রশ্ন জাগে, বড় কোনো রোগের লক্ষণ নয় তো?
তবে চিকিৎসকদের মতে, শরীরের পেশি হঠাৎ কাঁপা বা টুইচিংয়ের বেশিরভাগ কারণই গুরুতর নয়। তবুও কিছু লক্ষণ আছে, যেগুলো অবহেলা করা ঠিক নয়। টাইমস অব ইন্ডিয়া–র প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন—কেন পেশি কাঁপে এবং কোন পরিস্থিতিতে চিকিৎসকের কাছে যাওয়া প্রয়োজন।
চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় পেশি কাঁপাকে বলা হয় ফ্যাসিকুলেশন। এটি পেশির খুব ছোট ও অনিচ্ছাকৃত সংকোচন, যা ত্বকের নিচে হালকা কাঁপুনি বা লাফানোর মতো দেখা যায়। চোখের পাতা, হাত, পা, বাহু এমনকি জিহ্বাতেও এটি হতে পারে। সাধারণত কোনো স্নায়ু হঠাৎ সক্রিয় হয়ে গেলে এমনটা ঘটে। বেশিরভাগ সময় এটি শরীরের স্বাভাবিক প্রতিক্রিয়া।
মানসিক চাপ ও উদ্বেগ : অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা বা টেনশন স্নায়ুকে বেশি সংবেদনশীল করে তোলে। ফলে পেশি কাঁপতে পারে। চাপ কমলে এই সমস্যা অনেক সময় নিজে থেকেই সেরে যায়।
অতিরিক্ত ক্যাফেইন গ্রহণ : চা, কফি বা এনার্জি ড্রিংক বেশি খেলে স্নায়ু উত্তেজিত হয়। এতে চোখ বা পায়ের পেশি কাঁপতে পারে। ক্যাফেইন কমালে কয়েক দিনের মধ্যেই উপশম হয়।
ঘুমের অভাব ও ক্লান্তি : পর্যাপ্ত ঘুম না হলে স্নায়ু ও পেশি বিশ্রাম পায় না। এর ফলে বিশেষ করে মুখ, হাত ও পায়ে কাঁপুনি দেখা দিতে পারে।
অতিরিক্ত ব্যায়াম বা পরিশ্রম : ভারী ব্যায়াম বা দীর্ঘ সময় শারীরিক পরিশ্রম করলে পেশি ক্লান্ত হয়ে পড়ে। এতে সাময়িকভাবে পেশি কাঁপতে পারে, যা বিশ্রামে সেরে যায়।
পানিশূন্যতা ও ইলেকট্রোলাইটের ঘাটতি : শরীরে পানি, সোডিয়াম, পটাশিয়াম বা ম্যাগনেসিয়ামের ভারসাম্য নষ্ট হলে পেশি কাঁপা বা খিঁচুনি হতে পারে।
প্রয়োজনীয় পুষ্টির অভাব : ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি ও ভিটামিন বি১২-এর ঘাটতিও পেশি কাঁপার একটি সাধারণ কারণ।
কিছু মানুষের ক্ষেত্রে সপ্তাহ বা মাস ধরে শরীরের বিভিন্ন জায়গায় পেশি কাঁপতে থাকে, যদিও তারা খুব বেশি ক্লান্ত বা দুশ্চিন্তায় নেই। একে বলা হয় বেনাইন ফ্যাসিকুলেশন সিনড্রোম (BFS)। এটি কোনো ভয়ংকর স্নায়ুরোগ নয় এবং জীবনঝুঁকিও তৈরি করে না। এই অবস্থায় পেশির শক্তি সাধারণত স্বাভাবিকই থাকে। তবে অযথা দুশ্চিন্তার কারণে সমস্যা আরও বাড়তে পারে।
পেশি কাঁপা বেশিরভাগ সময় ক্ষতিকর না হলেও নিচের লক্ষণগুলো দেখা দিলে দেরি না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি:
- কাঁপুনির সঙ্গে পেশির দুর্বলতা দেখা দিলে
- পেশির আকার ধীরে ধীরে ছোট হতে থাকলে
- কাঁপুনি একটি জায়গায় সীমাবদ্ধ থেকে ক্রমে বাড়তে থাকলে
- জিহ্বায় দীর্ঘদিন ধরে কাঁপুনি থাকলে
- বিশ্রাম, ভালো ঘুম ও ক্যাফেইন কমানোর পরও কয়েক সপ্তাহ বা মাস ধরে সমস্যা না কমলে
প্রয়োজনে চিকিৎসক রক্ত পরীক্ষা, ভিটামিন ও ইলেকট্রোলাইট টেস্ট বা ইএমজি করার পরামর্শ দিতে পারেন।
হঠাৎ পেশি কাঁপা মানেই যে বড় কোনো রোগ, তা নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে এটি ব্যস্ত জীবন, মানসিক চাপ, ঘুমের অভাব বা পানিশূন্যতার ফল। পর্যাপ্ত পানি পান, সঠিক খাবার, ভালো ঘুম এবং চাপ নিয়ন্ত্রণ করলেই অনেক সময় সমস্যার সমাধান হয়। তবে শরীর যদি বারবার সতর্ক সংকেত দেয়, তাহলে তা অবহেলা না করে চিকিৎসকের কাছে যাওয়াই বুদ্ধিমানের কাজ।
মন্তব্য করুন