

অ্যাজমা হলো এমন একটি অবস্থা যেখানে আপনার শ্বাসনালি সংকীর্ণ হয়ে যায়, ফুলে যায় এবং অতিরিক্ত মিউকাস তৈরি হতে পারে। এর ফলে শ্বাস নিতে কষ্ট হতে পারে বা বুক চাপা লাগা, কাশি এবং হুইজিং (শ্বাস ফেলার সময় শব্দ) হতে পারে। সাধারণ অ্যাজমার ট্রিগার বা উসকানি হতে পারে এলার্জি (যেমন পোষা প্রাণী বা পরাগ), ধোঁয়া, ঠান্ডা আবহাওয়া, ব্যায়াম, তীব্র গন্ধ বা মানসিক চাপ।
অ্যাজমা একটি দীর্ঘমেয়াদি (ক্রনিক) অবস্থা যা আপনার শ্বাসনালির প্রদাহ ঘটায়। এই প্রদাহের কারণে শ্বাসনালি নির্দিষ্ট ট্রিগারে প্রতিক্রিয়া দেখায়। চিকিৎসা ছাড়া এই আক্রমণ প্রাণহানির কারণ হতে পারে।
আরও পড়ুন : যে ভুলে চা হয়ে যায় বিষ, সতর্ক হোন আজই
আরও পড়ুন : সুগারই হতে পারে হার্টে ব্লকেজের কারণ, কীভাবে ?
বিশ্বের অনেক মানুষের অ্যাজমা আছে। এটি আনেক সময় শিশু অবস্থায় হলেও প্রাপ্তবয়স্ক না হলে বোঝা যায় না। কখনো কখনো এটিকে ‘ব্রঙ্কিয়াল অ্যাজমা’ বলা হয়।
অ্যালার্জি-সংশ্লিষ্ট অ্যাজমা: যখন এলার্জি অ্যাজমার উপসর্গ সৃষ্টি করে
কাশি-ভেরিয়েন্ট অ্যাজমা: যখন কেবল কাশিই একমাত্র উপসর্গ
ব্যায়াম-উদ্ভূত অ্যাজমা: যখন ব্যায়াম অ্যাজমা উপসর্গ শুরু করে
পেশাগত অ্যাজমা: যখন কাজের সময় শ্বাসপ্রশ্বাসে নেওয়া কিছু পদার্থ অ্যাজমা তৈরি করে বা আক্রমণ সৃষ্টি করে
অ্যাজমা-COPD ওভারল্যাপ সিনড্রোম (ACOS): যখন অ্যাজমা এবং ক্রনিক অবস্ট্রাকটিভ পালমোনারি ডিজিজ (COPD) উভয়ই থাকে
অ্যাজমার উপসর্গ
- শ্বাসকষ্ট
- হুইজিং (সিসির মতো শব্দ)
- বুকের চাপ, ব্যথা বা অস্বস্তি
- কাশি
কেউ কেউ সবসময়ই অ্যাজমায় ভুগতে পারেন (স্থায়ী অ্যাজমা)। আবার কেউ কেউ আক্রমণের মধ্যে নয়, মাঝে মাঝে ভালো বোধ করতে পারেন (আন্তঃমিত অ্যাজমা)।
অ্যাজমার কারণ
বিশেষজ্ঞরা পুরোপুরি নিশ্চিত নন অ্যাজমার কারণ কী। তবে, আপনি বেশি ঝুঁকিতে থাকতে পারেন যদি:
- আপনার এলার্জি বা অ্যাকজিমা থাকে
- বিষাক্ত পদার্থ, ধোঁয়া বা সেকেন্ড হ্যান্ড/থার্ড হ্যান্ড স্মোকের সংস্পর্শে আসা
- আপনার বাবা-মায়ের মধ্যে কারও এলার্জি বা অ্যাজমা থাকে
- শিশুকালে বারবার শ্বাসনালির সংক্রমণ (যেমন RSV) হয়েছে
অ্যাজমার ট্রিগার
যা কিছু অ্যাজমার উপসর্গ শুরু করে বা খারাপ করে, তাকে ট্রিগার বলে। সাধারণ ট্রিগারগুলো হলো:
- এলার্জি: পরাগ, ধুলো, পোষা প্রাণীর রুক্ষ ত্বক, অন্যান্য বায়ুর মাধ্যমে ছড়ানো অ্যালার্জেন
- ঠান্ডা বাতাস, বিশেষ করে শীতে
- ব্যায়াম, বিশেষ করে শক্তিশালি বা ঠান্ডা আবহাওয়ায় করা খেলা
- ছাঁচ (মোল্ড), এমনকি যদি আপনি এলার্জিক না হন
- পেশাগত সংস্পর্শ: কাঠের গুঁড়া, ময়দা, আঠা, ল্যাটেক্স, নির্মাণসামগ্রী
- শ্বাসনালী সংক্রমণ: সর্দি, ফ্লু ও অন্যান্য শ্বাসনালী সংক্রমণ
- ধোঁয়া: ধূমপান, সেকেন্ডহ্যান্ড বা থার্ডহ্যান্ড স্মোক
- মানসিক বা শারীরিক চাপ
- তীব্র রাসায়নিক বা গন্ধ: পারফিউম, নখের পালিশ, বাড়ির ক্লিনার, এয়ার ফ্রেশনার
- বায়ুর বিষাক্ত পদার্থ: ফ্যাক্টরির ধোঁয়া, গাড়ির ধোঁয়া, বন আগুনের ধোঁয়া
মনে রাখবেন, অ্যাজমার ট্রিগার কখনও সঙ্গে সঙ্গে শুরু হতে পারে, আবার কখনও কয়েক ঘণ্টা বা দিন পর আক্রমণ দেখা দিতে পারে।
অ্যাজমার জটিলতা: অ্যাজমা এমন ধরনের আক্রমণ ঘটাতে পারে যা চিকিৎসায়ও ঠিক হয় না (স্ট্যাটাস অ্যাজমাটিকাস)। এতে আপনার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ পর্যাপ্ত অক্সিজেন পায় না, যা প্রাণঘাতী হতে পারে।
আপনি কীভাবে ভালো থাকতে পারেন?
নিয়মিত কিছু অভ্যাসে অ্যাজমার উপসর্গ কমানো বা এড়ানো যেতে পারে:
সম্ভব হলে ট্রিগার এড়ান। উপসর্গ জার্নাল রাখলে কোন জিনিস উপসর্গ বাড়ায় তা বোঝা সহজ হয়। আপনার সক্ষমতার মধ্যে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকুন। ডাক্তার কী পরামর্শ দেন তা জানুন। পালমোনারি রিহ্যাব প্রোগ্রাম সাহায্য করতে পারে। ধূমপান বা ভেপিং করবেন না। ইনহেলার বা ওষুধ ঠিকমতো ব্যবহার করতে না পারলে ডাক্তারকে জানান।
আরও পড়ুন : হার্ট অ্যাটাক ও হঠাৎ কার্ডিয়াক অ্যারেস্টের পার্থক্য জানুন
আরও পড়ুন : মোবাইল ব্যাংকিং ব্যবহারে সচেতন হোন
কেউ কেউ সারাজীবন অ্যাজমার সঙ্গে বসবাস করেন, আবার কেউ প্রাপ্তবয়স্কে হঠাৎ নিজের এই রোগ সম্পর্কে জানেন। আপনার ট্রিগার খুঁজে বের করা ও শ্বাস নিয়ন্ত্রণের উপায় খুঁজে বের করতে সময় লাগতে পারে। চিকিৎসকের কথা মেনে কাজ করলে এটি সহজ হয়। অধিকাংশ মানুষ তাদের অ্যাজমার উপসর্গ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারে এবং তাদের পছন্দের কাজ চালিয়ে যেতে পারে।
সূত্র : ক্লিভল্যান্ড ক্লিনিক
মন্তব্য করুন