কোরবানির ঈদ মানেই খাবার টেবিলে গরুর মাংসের বাহারি পদের ছড়াছড়ি। গরুর মাংস কী পরিমাণ খাচ্ছেন, তার ওপর নির্ভর করে উপকারিতা এবং অপকারিতা। পুষ্টিবিদরা বলেন, এটি একটি অ্যালার্জিক খাবার। এতে উচ্চমাত্রার প্রোটিন এবং হিম আয়রন আছে। মাংস খেলে প্রায় ৬০ শতাংশ আয়রন শরীর শোষণ করতে পারে। এছাড়া প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে রয়েছে ২৬ গ্রাম প্রোটিন।
পুষ্টিবিদরা জানান, গরুর মাংসে রয়েছে আমাদের শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটিন, ভিটামিনস, মিনারেলস বা খনিজ উপাদান যেমন- জিংক, সেলেনিয়াম, ফসফরাস, আয়রন। আবার ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে ভিটামিন বি২ বি৩, বি৬ এবং বি১২। এছাড়া গরুর মগজ ও কলিজায় প্রোটিন থাকলেও সেটার পরিমাণ কম বরং এর বেশিরভাগ জুড়ে রয়েছে কোলেস্টেরল।
পুষ্টিবিদদের মতে, একজন সুস্থ মানুষের জন্য প্রতিদিন ৫০ গ্রামের মতো প্রোটিন প্রয়োজন, তবে যদি তার কিডনি জটিলতা থাকে তাহলে তিনি প্রতিদিন ২৫ গ্রাম প্রোটিন খাবেন। মানে স্বাভাবিকের চেয়ে অর্ধেক। আবার মেয়েদের মাসিক চলাকালীন কিংবা গর্ভবতী অবস্থায় এই পরিমাণ দ্বিগুণ হয়ে যাবে। অর্থাৎ আদর্শ ওজন ৫০ কেজি হলে তারা ১০০ গ্রাম পর্যন্ত প্রোটিন খেতে পারবেন। যাদের ওজন আদর্শ ওজনের চাইতে কম তাদেরও বেশি বেশি প্রোটিন খাওয়া প্রয়োজন।
তবে কারোই প্রতিদিন ৭০ গ্রামের বেশি এবং সপ্তাহে ৫০০ গ্রামের বেশি প্রোটিন খাওয়া উচিত নয়। প্রতি ১০০ গ্রাম গরুর মাংসে ২৬ গ্রাম প্রোটিন এবং ২ গ্রাম ফ্যাট থাকে। তার মানে প্রতিদিনের এই প্রোটিনের চাহিদা পূরণে কি আপনি ২৭০ গ্রাম মাংস খাবেন? একদমই না। কেননা দৈনিক প্রোটিনের চাহিদা একটি খাবার নয় বরং বিভিন্ন খাবার ও পানীয় দিয়ে আমরা পূরণ করে থাকি।
কোরবানি ঈদের পর পর বেশ কয়েক দিন গরুর মাংস অনেক বেশি খাওয়া হয়। তাই এ সময় প্রোটিন সমৃদ্ধ অন্য খাবার এড়িয়ে চলুন। পুষ্টিবিদরা বলছেন, গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ মাত্রা হল সপ্তাহে ২ দিন, মোট তিন থেকে পাঁচ বেলা খাওয়া। ২ দিনে মোট ১৫৪ গ্রাম গরুর মাংস খেতে পারবেন। সপ্তাহে ওই দুই দিন মাংসের পরিমাণ হবে ১৬ থেকে ২৬ গ্রাম। আরও সহজ করে বললে প্রতি বেলায় ঘরে রান্না করা মাংস ২/৩ টুকরার বেশি খাওয়া ঠিক নয়।
পুষ্টিবিদরা বলছেন, কারো যদি ডায়াবেটিস, হৃদ্রোগ, হাইপার-টেনশন বা কিডনি রোগে আক্রান্ত হন তাহলে চিকিৎসকের কাছে মাংস খাওয়ার পরিমাণটি জেনে নিতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের একটি হেলথ জার্নাল থেকে জানা গেছে, গরুর শরীরের ২টি অংশে চর্বির পরিমাণ অনেক কম থাকে। একটি হল গরুর পেছনের রানের উপরে ফোলা অংশের মাংস যেটাকে রাউন্ড বলা হয় এবং পেছনের দিকের উপরের অংশের মাংস যেটাকে সেরলয়েন বলা হয়। তবে মাংসের বাইরে যে চর্বি লেগে থাকে সেটা রান্নার আগে কেটে ফেলে দিলে কোলেস্টেরলের পরিমাণ উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনা যায়।
এছাড়া রান্না করা গরুর মাংস ফ্রিজে রাখার ওপর বা কিছুক্ষণ ঠান্ডা পরিবেশে রাখলে এর ওপর তেলের একটি আস্তর পড়ে। সেটা ফেলে দিয়েও ফ্যাট অনেকটাই কমানো সম্ভব।
এদিকে অতিরিক্ত গরুর মাংস শরীরের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে বলে জানিয়েছেন পুষ্টিবিদরা। কারণ গরুর মাংসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে সোডিয়াম, যা রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। আর উচ্চ রক্তচাপ থেকে হৃদ্রোগ, স্ট্রোক ও কিডনি জটিলতা দেখা দিতে পারে। গরুর মাংসে যে কোলেস্টেরল থাকে সেটি বেশি বেড়ে গেলে হার্টের শিরায় জমে রক্ত জমাট বাঁধিয়ে দেয়। এতে হার্টে পর্যাপ্ত রক্ত চলাচল করতে পারে না, অক্সিজেনের অভাব হয়। যার কারণে হৃদ্রোগ ও হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বহুগুণে বেড়ে যায়।
আর্কাইভ অব ইন্টারন্যাশনাল মেডিসিনের এক গবেষণায় বলা হয়েছে, যারা গরুর মাংস বেশি খান তাদের ক্যান্সারের ঝুঁকি অনেক বেশি থাকে। এছাড়া গরুর মাংস বেশি খেলে টাইপ-টু ডায়াবেটিস, মুটিয়ে যাওয়া, আরথ্রাইটিস, কোষ্ঠকাঠিন্য, ত্বকের সমস্যা ইত্যাদি নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে।
সবশেষ নিয়ম মেনেই পরিমিত মাত্রায় মাংস খেলে ঝুঁকির পরিমাণ অনেকাংশেই কমানো সম্ভব হবে। নিয়মিত হাঁটা বা ব্যায়াম করা বাদ দেবেন না। পরিমিত, পুষ্টিসমৃদ্ধ, স্বাস্থ্যকর খাবারের সঙ্গে ঈদকে করে তুলুন আনন্দময়।
মন্তব্য করুন