করোনাভাইরাসের অমিক্রন ভ্যারিয়েন্টের একটি উপধরন হলো এক্সবিবি, যা মূলত BA.2.10.1 এবং BA.2.75- এই দুটি অমিক্রন সাব-ভ্যারিয়েন্টের সংমিশ্রণে গঠিত। এক্সবিবি প্রথম শনাক্ত হয় ২০২২ সালের মাঝামাঝি সময়ে এবং পরে এটি ধীরে ধীরে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে।
এক্সবিবির বৈশিষ্ট্য :
১. এটি অত্যন্ত সংক্রামক একটি উপধরন।
২. এর রয়েছে ইমিউন এস্কেপ ক্ষমতা, অর্থাৎ এটি প্রাকৃতিকভাবে সংক্রমণ থেকে সুস্থ হওয়া ব্যক্তির রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থা কিংবা টিকা নেওয়া ব্যক্তির প্রতিরোধ ক্ষমতাকেও আংশিকভাবে এড়িয়ে যেতে পারে।
৩. তবে এখন পর্যন্ত এ উপধরনের কারণে মারাত্মক অসুস্থতা বা মৃত্যুহার বাড়ার কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, হালনাগাদ বুস্টার ডোজ- বিশেষ করে এক্সবিবি-ভিত্তিক ভ্যাকসিন এই উপধরন থেকে সৃষ্ট গুরুতর অসুস্থতা, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার প্রয়োজন এবং মৃত্যুর ঝুঁকি কমাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে। যদিও এই ভ্যাকসিন সংক্রমণ পুরোপুরি ঠেকাতে সক্ষম নয়, তবে তা জটিলতা হ্রাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
এক্সবিবি থেকে ইতোমধ্যে আরও কয়েকটি উপধরনের সৃষ্টি হয়েছে, যেমন- এক্সবিবি.১, এক্সবিবি.১.৫ এবং সাম্প্রতিক আলোচিত এনবি.১.৮.১। এই ধরনগুলোর মধ্যে কিছু কিছু আরও বেশি সংক্রামক হলেও, টিকা এখনো এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরক্ষা দিচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) এক্সবিবি এবং এর উপধরনগুলোকে Variant of Interest বা Variant Under Monitoring হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে। এর অর্থ হলো, এই ধরনগুলোর ওপর বৈজ্ঞানিক পর্যবেক্ষণ চলছে, কারণ এগুলো ভবিষ্যতে জনস্বাস্থ্যের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে।
এদিকে গ্লোবাল ভাইরাস নেটওয়ার্ক (জিভিএন) জানিয়েছে, যদিও এক্সবিবি উপধরনের সংক্রমণ ক্ষমতা বেশি, তবে এখন পর্যন্ত এটি গুরুতর অসুস্থতা বা মৃত্যুর ঝুঁকি বাড়ায় এমন কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। তবুও সংস্থাটি সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে এবং টিকা গ্রহণে গুরুত্ব দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছে।
সাধারণ মানুষের করণীয় :
১. আপনি টিকার সর্বশেষ ডোজ নিয়েছেন কিনা, তা নিশ্চিত করুন।
২. জনসমাগমপূর্ণ জায়গায় গেলে অবশ্যই মাস্ক পরুন।
৩. উপসর্গ দেখা দিলে করোনা পরীক্ষা করুন এবং প্রয়োজনে আইসোলেশনে থাকুন।
৪. স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা মেনে চলুন।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এক্সবিবি ও এর উপধরনগুলো অমিক্রনের একটি নতুন রূপ হলেও এখন পর্যন্ত এটি গভীর উদ্বেগের কারণ নয়। তবে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, টিকা গ্রহণ এবং সচেতন থাকা- এই তিনটি বিষয়ই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।
টিকা সংক্রান্ত পরামর্শ :
গ্লোবাল ভাইরাস নেটওয়ার্ক (জিভিএন) বলছে, যেহেতু কোভিড-১৯ এর এখনো সম্পূর্ণ প্রতিকার নেই, তাই প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ নেওয়াই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সুপারিশ অনুযায়ী টিকা গ্রহণে কিছু দিক খেয়াল রাখা জরুরি :
১. ৬৫ বছর বা তার বেশি বয়সী এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের জন্য হালনাগাদ বুস্টার ডোজ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।
২. ৬ মাস বয়স থেকে সব বয়সীদের টিকার সম্পূর্ণ ডোজ নেওয়া উচিত।
৩. শিশু ও কিশোরদের জন্য বছরে অন্তত একবার আপডেটেড টিকা দেওয়া প্রয়োজন, কারণ আগের টিকার সুরক্ষা সময়ের সঙ্গে কমে যেতে পারে।
৪. গর্ভবতী নারীদের টিকা নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এতে শুধু মায়ের নয়, নবজাতকেরও প্রথম ৬ মাস পর্যন্ত সুরক্ষা পাওয়া যায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় সংক্রমণের ফলে শিশুর জন্মের আগেই মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে এবং পরবর্তীতে দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্যজটিলতা দেখা দিতে পারে। ফ্লু এবং কোভিড টিকা একসঙ্গে নেওয়া যেতে পারে এবং এতে কোনো গুরুতর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই।
এদিকে দেশে করোনায় আক্রান্তের সংখ্যার হার বাড়তে শুরু করেছে। রোববার (০৮ জুন) স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, এদিন চারজনের করোনাভাইরাস পরীক্ষা করে ৩ জনের শরীরে এ ভাইরাসের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। তবে কোনো মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি। এ অবস্থায় নতুন নির্দেশনা দিয়েছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। সোমবার (০৯ জুন) এক বিজ্ঞপ্তিতে নতুন নির্দেশনা দেয় মন্ত্রণালয়।
এতে বলা হয়েছে, কোভিড-১৯ এ সংক্রমণের হার ঊর্ধ্বগতি বিবেচনা করে জনসমাগমপূর্ণ এলাকায় সবাইকে মাস্ক পরার জন্য অনুরোধ করা হচ্ছে। বিশেষ করে বয়স্ক ও অসুস্থ ব্যক্তিদের এ ধরনের স্থান এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে দেশে ২৩ জন আক্রান্ত হয়েছিলেন। কিন্তু মে মাসে এই সংখ্যা বেড়ে হয় ৮৬। চলতি মাসে করোনায় আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন একজন।
উল্লেখ্য, দেশে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ২০ লাখ ৫১ হাজার ৭৪২ জনে। এরমধ্যে সুস্থ্য হয়েছেন ২০ লাখ ১৯ হাজার ৩৬৩ জন। মারা গেছেন ২৯ হাজার ৫০০ জন।
মন্তব্য করুন