কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২০ জুন ২০২৫, ০৪:১৪ এএম
আপডেট : ২০ জুন ২০২৫, ০৭:৪৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

দেশের সাড়ে ৪ কোটি মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত

গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার ডে উপলক্ষে আয়োজিত জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভায় বক্তারা। ছবি : কালবেলা
গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার ডে উপলক্ষে আয়োজিত জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভায় বক্তারা। ছবি : কালবেলা

দেশে প্রায় ৪ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। এদের মধ্যে অন্তত এক কোটি মানুষ লিভার সিরোসিস বা ক্যান্সারের ঝুঁকিতে রয়েছেন। অতিরিক্ত কার্বোহাইড্রেটভিত্তিক খাবার গ্রহণ, হাঁটা-চলার অভাব এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনের অভাবে এ রোগ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

বৃহস্পতিবার (১৯ জুন) ‘কম খাই, হাঁটি বেশি, ফ্যাটি লিভার দূরে রাখি’ প্রতিপাদ্যে বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের সুপার-স্পেশালাইজড হাসপাতালে অষ্টম গ্লোবাল ফ্যাটি লিভার ডে উপলক্ষে আয়োজিত জনসচেতনতামূলক আলোচনা সভায় বক্তারা এসব তথ্য জানান।

বিশেষজ্ঞরা বলেন, ফ্যাটি লিভার এখন ভাইরাসজনিত প্রদাহকেও ছাড়িয়ে গেছে। এটি শুধু লিভারের প্রদাহই সৃষ্টি করে না বরং ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা কমিয়ে দেয়, ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। দেশে প্রতি তিনজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের একজন ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত। নির্ণয় ও নিয়ন্ত্রণ ছাড়া এ রোগ বিপজ্জনক পর্যায়ে গিয়ে ন্যাশে পরিণত হয়, যা লিভার সিরোসিস ও ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের স্বাস্থ্য উপদেষ্টা ও বাংলাদেশ একাডেমি অব সায়েন্সেসের ফেলো অধ্যাপক ডা. এ এস এম মতিউর রহমান বলেন, একটি ভয়ংকর বিপর্যয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা দেখছি ফ্যাটি লিভার ভাইরাল হেপাটাইটিসকেও ছাড়িয়ে গেছে। অথচ আমরা এখনো ফ্যাটি লিভারকে সাইলেন্ট ডিজিজ মনে করে অবহেলা করছি। এটা শুধু একজন ব্যক্তির সমস্যা নয়, এটা অর্থনীতি, সমাজ ও পরবর্তী প্রজন্মের স্বাস্থ্য-নিরাপত্তার সমস্যা।

তিনি আরও বলেন, ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে মাল্টি-সেক্টরাল অ্যাপ্রোচ দরকার। শুধু চিকিৎসক বা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় দিয়ে এটা সম্ভব নয়। খাদ্যনীতি, নগর পরিকল্পনা, শিক্ষা ব্যবস্থা সব জায়গায় পরিবর্তন আনতে হবে। শিশুদের স্কুলে খেলার সুযোগ না থাকলে তারা বড় হয়ে স্থূলতা ও লিভার রোগে আক্রান্ত হবেন।

বারডেম হাসপাতালের লিভার বিশেষজ্ঞ ও সেমিনারের প্রধান বক্তা ডা. মো. গোলাম আযম বলেন, আমরা দীর্ঘদিন ধরে ফ্যাটি লিভারকে হালকা করে দেখেছি। অথচ এখন দেখা যাচ্ছে, এ একটি রোগ ডায়াবেটিস, হার্ট অ্যাটাক এমনকি ক্যান্সারের শেকড় তৈরি করছে। সমস্যা হচ্ছে ৯০ শতাংশ রোগী জানেই না তাদের এই রোগ আছে। কারণ কোনো লক্ষণ থাকে না। যখন বুঝতে পারে, তখন লিভার অনেকটাই নষ্ট।

তিনি আরও বলেন, দেশে প্রতি তিনজনে একজনের ফ্যাটি লিভার রয়েছে। যারা দিনে পাঁচ ঘণ্টার বেশি বসে থাকেন, বাইরের খাবার খান, হাঁটাচলা করেন না তাদের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। আমরা রোগ হলে চিকিৎসা খুঁজি, কিন্তু এখন সময় প্রতিরোধে বিনিয়োগ করার।

বাংলাদেশ মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও হেপাটোলজি সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. শাহিনুল আলম বলেন, স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়, অফিস থেকে বাসা সবখানে হাঁটার ব্যবস্থা না থাকলে, খেলাধুলার পরিবেশ না থাকলে শুধু ওষুধ বা সচেতনতা দিয়ে কিছু হবে না। আমরা চাই, নতুন প্রজন্ম যেন ওজন নয়, স্বাস্থ্যকে মূল্য দেয়। এজন্য পলিসি-লেভেলে পরিবর্তন দরকার। পুষ্টিকর খাবার সহজলভ্য করতে হবে। ট্রান্স ফ্যাট, চিনি, লবণ বেশি এমন খাবারকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, খাদ্য প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে বাধ্য করতে হবে তারা যেন শুধু মুনাফার জন্য বিষ বানিয়ে না ছাড়ে। যারা দিনে অন্তত ৫ ঘণ্টা বসে থাকেন, বাইরের ভাজা খাবার খান এবং দেহচর্চা কম করেন, তাদের ফ্যাটি লিভারের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি। বিশেষ করে যারা অধিক পরিমাণে ভাত ও কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ খাবার খান কিন্তু পর্যাপ্ত হাঁটাচলা করেন না তাদের এ রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশি।

ডা. শাহিনুল আলম বলেন, ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধই প্রধান চিকিৎসা। মাত্র একটি পরীক্ষা করেই এই রোগ চিহ্নিত করা সম্ভব। কিন্তু সচেতনতার অভাবে দেশের লাখ লাখ মানুষ জানেই না, তাদের লিভার ধীরে ধীরে নষ্ট হচ্ছে। আমরা যদি এখনই সচেতন না হই, আগামী প্রজন্মের স্বাস্থ্যঝুঁকি ভয়াবহ রূপ নিতে বাধ্য।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন অধ্যাপক ডা. দেওয়ান সাইফুদ্দিন আহমেদ, ডা. তানভির আহমাদ, ডা. আবু হেনা আবিদ জাফর, ডা. এস কে বাহার হোসেন, ডা. আব্দুল্লাহ আল মাহমুদ, প্রফেসর ফিরোজ আমিন, মো. মাসুদ আলম, গায়ক আগুনসহ বিভিন্ন পর্যায়ের বিশিষ্টজন।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতায় এনসিপিকে কঠিন মূল্য চুকাতে হবে : সামান্তা শারমিন 

হিন্দু-মুসলিম বড় বিষয় নয়, আমরা সবাই বাংলাদেশি : সেলিমুজ্জামান

সিরিয়ার শ্রমবাজার এখন কেমন?

ইসলামিয়া চক্ষু হাসপাতালে চাকরির সুযোগ

পশ্চিমা চাপকে ‘সরাসরি লড়াই’ বললেন ইরানের প্রেসিডেন্ট

শিশুরা মাটি খুঁড়তেই বেরিয়ে এলো মানুষের মাথার খুলি

নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা অপু গ্রেপ্তার

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকার মার্কেট বন্ধ

সেন্টমার্টিনগামী জাহাজ চলাচলে নতুন সিদ্ধান্ত

ভ্রমণকালে ব্যাগে একটি টেনিস বল রাখলে কী হয়, জানলে অবাক হবেন

১০

খালেদা জিয়া সংকটময় মুহূর্ত পার করছেন : ডা. জাহিদ

১১

২৮ ডিসেম্বর : আজকের নামাজের সময়সূচি

১২

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলল হাদির নামে ‘চিরকুট’

১৩

জামায়াতে ইসলামীকে ডাকসু নেতার অনুরোধ

১৪

শাহবাগে উপস্থিত হয়ে যে আশ্বাস দিলেন ডিএমপি কমিশনার

১৫

জামায়াতের সঙ্গে সমঝোতা নিয়ে যা বললেন আখতার

১৬

অন্তর্বর্তী সরকার থাকাকালীনই হাদি হত্যার বিচার সম্পন্ন হবে : রিজওয়ানা হাসান

১৭

গণঅধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাসান আল মামুন

১৮

ঐক্য পরিষদের গোলটেবিল সংলাপ / সংখ্যালঘুদের অধিকার নির্বাচনী ইশতেহারে অঙ্গীকার হিসেবে ঘোষণার দাবি

১৯

বগুড়ার পাশাপাশি ঢাকাতেও প্রার্থী হবেন তারেক রহমান

২০
X