

আজকাল ফ্যাটি লিভারের সমস্যা খুবই সাধারণ হয়ে উঠেছে। অনেক সময় কোনো স্পষ্ট উপসর্গ না থাকায় মানুষ বুঝতেই পারে না, লিভারে চর্বি জমছে। কিন্তু ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সময়মতো সচেতন হলে এবং জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনলে ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব। বিশেষজ্ঞদের মতে, কিছু প্রাকৃতিক পানীয় নিয়মিত পান করলে লিভারের কার্যক্ষমতা ভালো থাকে এবং চর্বি জমার ঝুঁকিও কমে।
টাইমস অব ইন্ডিয়ার এক প্রতিবেদনে চিকিৎসকরা এমন ১০টি পানীয়ের কথা বলেছেন, যা লিভারের জন্য সত্যিই উপকারী।
কফি : কফি লিভারের জন্য আশ্চর্যজনকভাবে ভালো। গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত কফি পান করলে ফ্যাটি লিভার ও সিরোসিসের ঝুঁকি কমে। এতে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, বিশেষ করে ক্লোরোজেনিক অ্যাসিড, লিভারের প্রদাহ কমায় এবং চর্বি জমতে বাধা দেয়।
দিনে ২-৩ কাপ কালো কফি যথেষ্ট। চিনি, ক্রিম বা সিরাপ এড়িয়ে চলাই ভালো।
হলুদ দুধ : বর্তমানে জনপ্রিয় ‘গোল্ডেন মিল্ক’ শুধু ট্রেন্ড নয়, সত্যিই উপকারী। হলুদের কারকিউমিন লিভারের চর্বি কমাতে সাহায্য করে, এনজাইমের ভারসাম্য ঠিক রাখে এবং ইনসুলিন সেনসিটিভিটি বাড়ায়।
এক কাপ লো-ফ্যাট বা বাদাম দুধে আধা চা চামচ হলুদ ও এক চিমটি গোলমরিচ মিশিয়ে রাতে পান করুন।
আমলকীর জুস : আমলকী লিভারের জন্য একটি প্রাকৃতিক টনিক। এতে থাকা ভিটামিন সি কোলেস্টেরল কমায় এবং লিভারে চর্বি জমা রোধ করে।
সকালে খালি পেটে ২ টেবিলচামচ আমলকীর জুস আধা গ্লাস পানিতে মিশিয়ে খান। চিনি দেওয়া জুস এড়িয়ে চলুন।
গ্রিন টি : গ্রিন টিতে থাকা ক্যাটেচিন (EGCG) লিভারের প্রদাহ কমায় এবং ফ্যাট মেটাবলিজমে সাহায্য করে।
দিনে ২-৩ কাপ সাধারণ গ্রিন টি যথেষ্ট। দুধ বা চিনি মেশানো গ্রিন টি নয়।
বিটরুটের জুস : বিটরুটে থাকা বিটালেইন অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে। এটি পিত্ত নিঃসরণ বাড়িয়ে চর্বি হজমে সহায়ক।
১টি ছোট বিটরুটের সঙ্গে গাজর বা আধা আপেল মিশিয়ে জুস বানাতে পারেন। এক ফোঁটা লেবুর রস দিলে উপকার আরও বাড়ে।
লেবু পানি : সকালে গরম লেবু পানি খাওয়ার অভ্যাস লিভারের এনজাইম সক্রিয় করে এবং শরীর থেকে টক্সিন বের হতে সাহায্য করে।
আধা লেবুর রস গরম পানিতে মিশিয়ে খালি পেটে পান করুন। অতিরিক্ত চিনি ব্যবহার করবেন না।
অ্যালোভেরা জুস : অ্যালোভেরা লিভারের প্রদাহ কমায়, হজমশক্তি বাড়ায় এবং রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে রাখে—যা ফ্যাটি লিভারে খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
১-২ টেবিলচামচ ফুড-গ্রেড অ্যালোভেরা জুস পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাবারের আগে খান।
অ্যাপল সাইডার ভিনেগার : এই পানীয় ইনসুলিন সংবেদনশীলতা বাড়ায় এবং শরীরের অতিরিক্ত চর্বি কমাতে সাহায্য করে, যা লিভারের জন্য উপকারী।
এক টেবিলচামচ আনফিল্টারড অ্যাপল সাইডার ভিনেগার এক গ্লাস পানিতে মিশিয়ে পান করুন। সরাসরি কখনোই খাবেন না।
ধনেপাতার বীজের পানি : ধনেপাতার বীজে রয়েছে প্রাকৃতিক ডিটক্স উপাদান, যা লিভার পরিষ্কার রাখতে সাহায্য করে।
১ চা চামচ ধনেপাতার বীজ রাতে পানিতে ভিজিয়ে রেখে সকালে ছেঁকে পান করুন।
ডাবের পানি : ডাবের পানি সরাসরি ফ্যাট কমায় না, তবে লিভারকে সুস্থ রাখতে ও শরীর হাইড্রেটেড রাখতে খুব কার্যকর। দিনে ১ গ্লাস টাটকা ডাবের পানি যথেষ্ট, বিশেষ করে গরমে বা ব্যায়ামের পর।
- অতিরিক্ত চিনি, ভাজাপোড়া ও অ্যালকোহল এড়িয়ে চলুন
- পর্যাপ্ত পানি পান করুন—এটাই সবচেয়ে সহজ ডিটক্স
- নিয়মিত হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করুন
- লিভারের রোগ বা নিয়মিত ওষুধ খেলে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিন
মনে রাখবেন, একদিনে কোনো পানীয় খেলেই লিভার ঠিক হয়ে যাবে—এমনটা নয়, নিয়মিততা সবচেয়ে জরুরি
লিভার আমাদের শরীরের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। ফ্যাটি লিভার অবহেলা করলে ভবিষ্যতে বড় সমস্যার কারণ হতে পারে। সঠিক খাদ্যাভ্যাস, স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন এবং চিকিৎসকের পরামর্শের সঙ্গে এই প্রাকৃতিক পানীয়গুলো যুক্ত করলে লিভার সুস্থ রাখা অনেক সহজ হয়। তবে সবার শরীর এক নয়—তাই আপনার জন্য কোন পানীয়টি উপযোগী, তা জানার জন্য বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়াই সবচেয়ে নিরাপদ পথ।
মন্তব্য করুন