টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) এবং সার্বজনীন স্বাস্থ্য কভারেজ (ইউএইচসি) লক্ষ্যগুলির অগ্রগতি ত্বরান্বিত করা এবং এ সংক্রান্ত বর্তমান পরিস্থিতি ও রূপরেখার কৌশল বিষয়ে আলোচনা করতে, বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ ‘এক্সিলারিটিং প্রগ্রেস টুয়ার্ডস ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি সেমিনার আয়োজন করে। বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠিত এই সেমিনারটি ছিল ‘ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজের দিকে অগ্রগতি’ থিমযুক্ত স্বাস্থ্য অর্থনীতি বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলনের অংশ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অফ হেলথ ইকোনমিক্স সেমিনারটি আয়োজন করে ।
দুইদিন ব্যাপী (১২-১৩ সেপ্টেম্বর) অনুষ্ঠানে চেয়ারপারসন হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মো. হুমায়ুন কবির (টিম লিডার, প্রিপারেশন অফ পিআইপি ফর এইচপিএনএসপি অফ মিনিস্ট্রি অফ হেলথ এন্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার)। অধিবেশনে প্যানেল আলোচক হিসাবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্য সচিব এম এম রেজা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ড. সৈয়দ এ হামিদ, ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম ও ড. রওনাক জাহান।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে রাখেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক ফারুক আহমেদ। তিনি বিশিষ্ট অতিথি ও অংশগ্রহণকারীদের অধিবেশনে উপস্থিত হওয়ার জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন এবং পূর্ণাঙ্গ অধিবেশনের পটভূমি ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটি সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদান করেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. অতনু রব্বানী এবং ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্সের সহকারী অধ্যাপক ড. সুজানা করিম যৌথভাবে ‘এক্সিলারেটিং প্রোগ্রেস টু ইউনিভার্সাল হেলথ কভারেজ (ইউএইচসি) ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন।
উপস্থাপনায় ড. রব্বানী এবং ড. করিম গত এক দশকে স্বাস্থ্য খাতে উল্লেখযোগ্য উন্নতি হওয়া সত্ত্বেও, বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের একটু বেশি মানুষের কাছে অত্যাবশ্যকীয় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছাতে সক্ষম হয়েছে বলে একটি চিত্র তুলে ধরেন। ইউএইচসি-এসসিআই পরিমাপ অনুযায়ী যা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় মধ্যে সর্বনিম্ন হার।
বাংলাদেশ তার ইউএইচসি পরিষেবা কভারেজ সূচক এসসিআই ২০১৫ সালে ৪৫ স্কোর থেকে ২০২১ সালে ৫২ এ উন্নীত করেছে। তবে, এই বৃদ্ধিকে অপর্যাপ্ত বলে মনে করা হয় এবং ন্যূনতম ইউএইচসি-এসসিআই লক্ষ্যমাত্রা ২০৩০ সালের মধ্যে ৮০ এ পৌঁছানোতে দেশের সক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়।
এম এম রেজা, প্রাক্তন স্বাস্থ্য সচিব প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবাকে শক্তিশালী করার কথা উল্লেখ করে বলেন, এটি ছাড়া ইউএইচসি অর্জন করা সম্ভব হবে না। ড. রেজা অন্যান্য বিষয়ের উপর জোর দিয়ে বলেন, ‘আমাদের স্বাস্থ্যের উপর জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, পরিবেশগত প্রভাব এবং চিকিৎসা বর্জ্য ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি বিষয় নিয়ে কাজ করতে হবে।’
ব্যারিস্টার রাশনা ইমাম চিকিৎসা খাতে জবাবদিহিতার অভাবের কথা উল্লেখ করেন। তিনি চিকিৎসার ক্ষেত্রে অবহেলার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেন। তিনি বলেন, চিকিৎসা অবহেলার বিষয়ে আইন না থাকলে জবাবদিহিতা আসবে না। তিনি আরও বলেন, জীবন রক্ষার অধিকার যে রকম মৌলিক অধিকার স্বাস্থ্যের অধিকার ও তেমনি মৌলিক অধিকার হওয়া উচিত।
ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক সৈয়দ এ হামিদ বলেন, আমাদের বিদ্যমান স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করতে হবে, দক্ষতার ওপর জোর দিতে হবে এবং বিদ্যমান সম্পদকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে হবে। তার জন্য আমাদের প্রয়োজন হবে প্রতিবন্ধকতার ক্ষেত্রে গুলো চিহ্নিত করা। তিনি বলেন, চিকিৎসা ক্ষেত্রে সেবা গ্রহীতাদের জোরালো কন্ঠে তাদের সমস্যা এবং দাবিগুলোর কথা উচ্চারণ করতে হবে। আর তাহলেই সম্ভব হবে একটি জবাবদিহিতামূলক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা এবং উন্নত স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করা।
প্রফেসর রওনাক জাহান স্বাস্থ্য ব্যবস্থায় বিরাজমান প্রশাসনিক অসঙ্গতির কথা বলেন। এছাড়াও আমলাতান্ত্রিক বিষয়গুলি কখনও কখনও বাস্তবায়িত হতে দীর্ঘ সময় নেয় বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, ‘আমাদের এই ইস্যুতে বাধাগুলি চিহ্নিত করতে হবে, কারণ আমরা যদি বাধাগুলি অপসারণ করতে পারি তবেই সাফল্যের পথ অর্জিত হবে।’
ইউনিভার্সাল হেলথ কাভারেজ অর্জনের লক্ষ্যে সেমিনারে বেশ কিছু সুপারিশ উত্থাপিত হয়। সুপারিশ সমূহ নিম্নরূপ:
ক) একটি শক্তিশালী প্রাথমিক স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা
খ) উন্নত স্বাস্থ্যসেবা সমন্বয়
গ) জেনারেল প্র্যাকটিশনারদের (জিপি) অগ্রাধিকার এবং
ঘ) জেলা পর্যায়ে স্বাস্থ্যসেবার বিকেন্দ্রীকরণ।মন্তব্য করুন