আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন বিবেচনায় নিয়ে অস্থায়ী শ্রমিকদের (টিএলআর) ছাটাইয়ের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছে রেলমন্ত্রণালয়। এসব শ্রমিকদের চাকরির মেয়াদ ছয়মাস বাড়িয়ে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত বৃদ্ধি করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) রেল মন্ত্রণালয়ে রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজনের সঙ্গে বাংলাদেশ রেলওয়ে অস্থায়ী শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেন। বৈঠকে এই শ্রমিকদের ছয় মাস চাকরির মেয়াদ বর্ধিত করার কথা জানান মন্ত্রী।
আরও পড়ুন: আ.লীগ প্রতিনিধিদল ভারতে যাওয়ায় বিএনপির ঘুম নেই : কাদের
জানা গেছে, স্থায়ী শূন্যপদের বিপরীতে অস্থায়ী দৈনিক মজুরির ভিত্তিতে কর্মরত প্রায় ৭ হাজার টিএলআর শ্রমিককে অব্যাহতি দিয়ে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নতুন জনবল নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যা চলতি বছরের ২২জুন থেকে কার্যকর করা হয়েছে। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে চট্টগ্রামসহ সারাদেশের সকল টিএলআর শ্রমিকরা কর্মবিরতিসহ নানা আন্দোলন কর্মসূচি পালন করছেন। জুন মাস পর্যন্ত টিএলআর শ্রমিকদের সরকারের রাজস্ব খাত থেকে বেতন দেওয়া হয়। কিন্তু ১ জুলাই থেকে কোনো বাজেট বরাদ্দ বা চাকরির মঞ্জুরি হয়নি। তবে তারা আন্দোলনের পাশাপাশি দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
আজ রেলমন্ত্রীর সঙ্গে আন্দোলনরত শ্রমিকদের একটি প্রতিনিধি দল বৈঠক করেন। এ সময় রেলমন্ত্রী হাতে একটি লিখিত আবেদন তুলে ধনে তারা। মন্ত্রী তাদের সমস্যার কথা শোনে রেল কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘তোমরা বিষয়টি নিয়ে তরিঘরি করেছো। এতবেশি তরিঘরি করার কোনো প্রয়োজন ছিল না। এরা আর কিছুদিন কাজ করলে অসুবিধা কোথায়।’
বৈঠক শেষে শ্রমিক প্রতিনিধি মো. হোসেন ও হিরা জানান, আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত আমাদের চাকরির সময়সীমা বর্ধিত করা হয়েছে। অব্যাহতি দেয়া দুই হাজার শ্রমিককে পুনর্বহালের আশ্বাস দিয়েছেন মন্ত্রী। চাকরি স্থায়ী করার বিষয়ে তারা বলেন, এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করে আমাদের পক্ষে কথা বলবেন রেলমন্ত্রী। আমরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের বিষয়ে রেলমন্ত্রীর সহযোগিতা চেয়েছি। তিনি এ ব্যাপারে চেষ্টা করার কথা জানিয়েছেন।
তারা জানান, যে সময়সীমা থেকে আমাদের ছাটাই করা হয়েছিল সে সময় ধরে পুরো বেতন দেয়ার জন্য মন্ত্রী সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন।
মন্ত্রীর আশ্বাসে আপনারা সন্তুষ্ট কিনা জানতে চাইলে শ্রমিক প্রতিনিধিরা বলেন, আমরা সন্তুষ্ট। কাজে ফিরে যাচ্ছি। আশা করি সরকার আমাদের চাকরি স্থায়ী করণের বিষয়টি মানবিক কারণে বিবেচনায় রাখবে।
বৈঠক সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ের বিপুল সংখ্যক কর্মীকে এই মুহূর্তে বাদ দিলে আগামী নির্বাচনের বিরুপ প্রভাব পড়তে পারে। বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে রেল মন্ত্রণালয়ে কয়েক দফা আলোচনা হয়। রেলমন্ত্রী টিএলআর শ্রমিকদের আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত কজে রাখার ব্যাপারে প্রস্তাব দেন। এতে সায় দেন কর্মকর্তারা।
বৈঠকে রেল সচিব হুমায়ুন কবীর, মহাপরিচালক মো. কামরুল আহসান, অতিরিক্ত মহাপরিচালক সরদার সাহাদাত আলী উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার প্রণয় ভার্মা। বৈঠকে রেলওয়ের উন্নয়নে ভারতের অর্থায়নে চলা বিভিন্ন প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। পাশাপাশি এসব প্রকল্প উদ্বোধনের বিষয় নিয়েও কথা হয়েছে বলে বৈঠক সূত্রে জানা গেছে।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফর উপলক্ষে মূলত এই বৈঠক। ভারতের অর্থায়নে কাজ শেষ হওয়া চলমান প্রকল্পগুলো যেন দুই দেশের প্রধানমন্ত্রী যৌথভাবে উদ্বোধন করতে পারেন তা ঠিক করতে বৈঠকে আলোচনা হয়। তবে কোন কোন প্রকল্প উদ্বোধন হবে এই তালিকা এখনও চূড়ান্ত করতে পারেনি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
মন্তব্য করুন