ডায়াবেটিস রোগীদের খুব সাধারণ একটি প্রশ্ন থাকে—‘আম খেতে পারব কি না?’ প্রায় সব বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকই এমন প্রশ্ন শুনেন। ফলের রাজা আমের মৌসুম এলে এ প্রশ্ন আরও বেড়ে যায়। গ্রীষ্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় এই ফল মিষ্টি ও সুস্বাদু হওয়ায় ডায়াবেটিস রোগীদের মধ্যে দ্বিধা থেকেই যায়।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মুম্বাইয়ের ডায়াবেটিস বিশেষজ্ঞ রাহুল বক্সীর মতে, অনেক রোগীর ধারণা—আম খাওয়া কঠোরভাবে এড়িয়ে চলতে হবে। আবার কারও বিশ্বাস, বেশি আম খেলেই ডায়াবেটিস নিরাময় হতে পারে। বাস্তবে দেখা যায়, মৌসুমে অনেকে প্রিয় এই ফল বেশি খেয়ে ফেলেন এবং ফলোআপ পরীক্ষায় তাদের গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়।
তবে সাম্প্রতিক দুটি ভারতীয় ক্লিনিক্যাল গবেষণায় পাওয়া গেছে ভিন্ন ফল। দেখা গেছে, নির্দিষ্ট পরিমাণ আম কার্বোহাইড্রেটের (রুটি) বিকল্প হিসেবে খেলে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা ও সামগ্রিক বিপাকীয় স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে।
আন্তর্জাতিক ডায়াবেটিস ফেডারেশনের তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বে ডায়াবেটিস আক্রান্ত রোগীদের ৯০ শতাংশই টাইপ-২ ডায়াবেটিসে ভোগেন। এটি বর্তমানে অষ্টম প্রধান রোগের কারণ এবং ২০৫০ সালের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসতে পারে। ভারতে বর্তমানে প্রায় ৭৭ মিলিয়ন প্রাপ্তবয়স্ক টাইপ-২ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। এর মধ্যে ২ কোটি ৫০ লাখ মানুষের প্রি-ডায়াবেটিস রয়েছে।
ইউরোপীয় জার্নাল অব ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনে প্রকাশিত এক গবেষণায় ৯৫ জন অংশ নেন। সফেদা, দশেরি ও ল্যাংড়া জাতের আম খাওয়ার পর দুই ঘণ্টার গ্লুকোজ পরীক্ষায় দেখা গেছে, সাদা রুটির তুলনায় এ ফলগুলো কম গ্লাইসেমিক প্রতিক্রিয়া তৈরি করেছে। টানা তিন দিনের পর্যবেক্ষণে টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীদের খাবারের পর রক্তে সুগারের ওঠানামা কমে এসেছে। গবেষকদের মতে, এ ধরনের কম ওঠানামা দীর্ঘমেয়াদে শরীরের জন্য উপকারী হতে পারে।
অন্যদিকে, দিল্লির ফোর্টিস সি-ডকে ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অব মেডিকেল রিসার্চের অর্থায়নে করা গবেষণায় ৩৫ জন টাইপ-২ ডায়াবেটিস রোগীকে সকালের নাশতায় রুটির পরিবর্তে ২৫০ গ্রাম আম খেতে দেওয়া হয়। তাতে ফাস্টিং গ্লুকোজ, HbA1c (রক্তে শর্করার গড় মাত্রা), ইনসুলিন প্রতিরোধ, ওজন এবং এইচডিএল কোলেস্টেরলের উন্নতি দেখা গেছে।
গবেষক অনুপ মিশ্র বলেন, ‘আমরা প্রথমবারের মতো সকালের নাশতায় রুটির পরিবর্তে অল্প পরিমাণ আম খাওয়ার উপকারিতা দেখিয়েছি। তবে এর মানে এই নয় যে, সীমাহীন আম খাওয়া যাবে। মূল বিষয় হলো সংযম।’
তার হিসাব অনুযায়ী, যদি কারও দৈনিক সীমা হয় ১,৬০০ ক্যালোরি, তবে আম থেকে পাওয়া ক্যালোরি সেই মোট ক্যালোরির অংশ হিসেবে ধরতে হবে। একটি ২৫০ গ্রাম আমে থাকে প্রায় ১৮০ ক্যালোরি।
মুম্বাইয়ের ডা. রাহুল বক্সীর পরামর্শ, গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণে থাকলে ডায়াবেটিস রোগীরা দিনে একবার বা দুইবার ছোট অংশ আম খেতে পারেন। প্রোটিন বা ফাইবারের সঙ্গে খেলে উপকার পাওয়া যায়। তবে জুস বা মিল্কশেকের মতো মিষ্টি খাবারের সঙ্গে আম মেশানো যাবে না।
সব মিলিয়ে গবেষণার দাবি, ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য আম খাওয়া একেবারেই নিষিদ্ধ নয়। বরং সীমিত ও সচেতনভাবে খেলে এটি উপকারীও হতে পারে।
মন্তব্য করুন