বর্তমান কর্মজীবনের ব্যস্ততা ও দীর্ঘ সময় অফিসে কাটানোর কারণে সহকর্মীদের মধ্যে ঘনিষ্ঠতা তৈরি হওয়া খুব সাধারণ একটি বিষয়। এই ঘনিষ্ঠতা অনেক সময় রূপ নেয় প্রেমের সম্পর্কে। যদিও এটি একেবারে অস্বাভাবিক কিছু নয়, তবে অফিসে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলার আগে কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় জেনে রাখা জরুরি।
প্রথমেই দেখা উচিত—প্রতিষ্ঠানটির নীতিমালা কী বলে। অনেক অফিসে সহকর্মীদের মধ্যে রোমান্টিক সম্পর্ককে নিরুৎসাহিত করা হয়, আবার কিছু কিছু প্রতিষ্ঠানে এমন সম্পর্ক গোপন না রেখে কর্তৃপক্ষকে জানানো বাধ্যতামূলক। নিয়ম ভঙ্গ করলে চাকরিজীবনে জটিলতা তৈরি হতে পারে।
দ্বিতীয়ত, অফিসে প্রেমে সম্মতির বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। সম্পর্ক যদি একপক্ষীয় হয় বা এক পক্ষ আগ্রহী না হয়, তাহলে তা যৌন হয়রানির অভিযোগে পরিণত হতে পারে। এতে ব্যক্তিগত ও পেশাগত উভয় জীবনেই বড় ধরনের সমস্যা তৈরি হতে পারে।
তৃতীয়ত, সম্পর্ক যেন কাজের পরিবেশকে প্রভাবিত না করে, সেদিকেও নজর দিতে হবে। সহকর্মীদের সামনে সম্পর্কটি নিয়ে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ উঠলে সেটা শুধু দুজনের নয়, পুরো টিমের কর্মপরিবেশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
মনোবিজ্ঞানীরা মনে করেন, অফিসে শুরু হওয়া সম্পর্ক অনেক সময় ভেঙে গেলে সেটি কর্মক্ষেত্রে অস্বস্তিকর পরিস্থিতি তৈরি করে। ফলে ভবিষ্যতে একসঙ্গে কাজ করাটাই হয়ে ওঠে কঠিন। তাই সম্পর্কের আগে ভবিষ্যৎ পরিস্থিতির বিষয়টিও চিন্তা করা জরুরি।
সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—নিজের পেশাদারিত্ব বজায় রাখা এবং ব্যক্তিগত ও অফিস জীবনের মাঝে একটি পরিষ্কার সীমারেখা নির্ধারণ করা। সম্পর্ক থাকলেও তা যেন দায়িত্ব পালনে প্রভাব না ফেলে, তা নিশ্চিত করাই হবে সবচেয়ে বুদ্ধিমানের কাজ।
অফিসে প্রেম করতেই হবে এমন কোনো বিষয় নয়, তবে যদি সম্পর্ক গড়ে ওঠে, তাহলে তা যেন পেশাগত পরিবেশ ও নিজস্ব মর্যাদাকে ক্ষতিগ্রস্ত না করে, সেদিকে সতর্ক থাকা জরুরি।
সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে চাইলে যা করতে পারেন
অফিসের সহকর্মীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্কে জড়ালে সেটি যতই ব্যক্তিগত হোক না কেন, কিছু পেশাগত বাস্তবতা মাথায় রাখা জরুরি। এ বিষয়ে মার্কিন ক্যারিয়ার বিশেষজ্ঞ ভিকি সালেমি এক নিবন্ধে লিখেছেন, যদি বুঝতে পারেন, আপনাদের সম্পর্কের বিষয়ে অফিসের মানবসম্পদ বিভাগকে আনুষ্ঠানিকভাবে জানাতে হতে পারে কিংবা একজনকে অন্য অফিসে বদলি হতে হতে পারে—তাহলে বিষয়টি আরও গভীরভাবে ভাবার সময় এসেছে। এখান থেকেই সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজ হবে—এই সম্পর্কটি আসলে ঝুঁকি নেওয়ার মতো কি না।
যদি সত্যিই সম্পর্কটি টিকিয়ে রাখতে চান, তাহলে কিছু কৌশল অনুসরণ করা জরুরি। প্রথমত, সহকর্মীদের কাছে সম্পর্কের বিষয়টি গোপন না রেখে সীমিত পরিসরে জানিয়ে দিন। তবে খোলাখুলি ব্যক্তিগত আলোচনা করা থেকে বিরত থাকুন।
সম্পর্ক গোপন রাখার চেষ্টা করলে সেটা নিয়ে গুজব ছড়াতে পারে, বিশেষ করে যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত থাকেন। সময়ের ব্যবধানে সহকর্মীরা বিষয়টি জেনে যাবেই। তাই গুজবের আগে নিজেরাই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা বুদ্ধিমানের কাজ।
সবশেষে, সম্পর্ককে প্রভাব ফেলতে দেবেন না কর্মপরিবেশে। পেশাদারিত্ব বজায় রাখা এবং দায়িত্বে মনোযোগী থাকা শুধু ক্যারিয়ার নয়, সম্পর্কের স্থায়িত্বের জন্যও জরুরি।
মন্তব্য করুন