বাসস
প্রকাশ : ১০ অক্টোবর ২০২৪, ০২:৪২ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছি এসে চিরতরে হারিয়ে গেলেন ওমর

ওমর বিন নূরুল আবছার (২৪)। ছবি : সংগৃহীত
ওমর বিন নূরুল আবছার (২৪)। ছবি : সংগৃহীত

বিমান প্রকৌশলী হওয়ার স্বপ্ন ছিল ওমরের। স্বপ্ন পূরণের কাছাকাছিও পৌঁছে গিয়েছিলেন তিনি। কিন্তু ঘাতক বুলেট সব তছনছ করে দিল তার। পৃথিবী থেকে চিরতরে হারিয়ে গেলেন ওমর।

গত ৫ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের বিজয় মিছিল থেকে ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে শহীদ হয়েছেন তিনি।

বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স ট্রেনিং সেন্টারের (বিএটিসি) মেধাবী ছাত্র ওমর বিন নূরুল আবছার (২৪) বোয়ালখালী উপজেলার আকুবদন্ডী ২ নম্বর ওয়ার্ডের হাজী দেলোয়ার হোসেন সওদাগর বাড়ির মো. নুরুল আবছার (৫৫) ও রুবি আখতার (৪৪) দম্পতির পুত্র। ছয় ভাইবোনের মধ্যে ওমর তৃতীয়।

শহীদ ওমরের পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সক্রিয় ছিলেন ওমর। বন্ধুদের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিদিনই কর্মসূচিতে যোগ দিয়েছেন। আন্দোলনে নিজের সর্বোচ্চটুকু দিয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ছিলেন।

১৮ জুলাই পুলিশের টিয়ারগ্যাস ও রাবার বুলেটের আঘাত পেয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। কিন্তু বুলেটের সে ক্ষত শুকাতে না শুকাতেই আবারও রাজপথে নেমে আসেন। তার সেই ত্যাগ সফল হলো। স্বৈরাচার সরকার পতনের পর বন্ধুদের সঙ্গে আনন্দ মিছিলেরও আয়োজন করেন তিনি। কিন্তু ঘাতক বুলেট তার সেই আনন্দ চিরতরে কেড়ে নিয়েছে।

৫ আগস্ট স্বৈরাচার সরকারের পতনের পর ঢাকার উত্তরায় আনন্দ মিছিল শেষে বাসায় ফেরার পথে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ওমর। ওমরের এমন চলে যাওয়া কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না পরিবার ও সহপাঠীরা। ওমরের স্বপ্ন ছিলো বিমান প্রকৌশলী হবেন। তার মা-বাবাও এই স্বপ্নের পথে হাঁটতে ছেলেকে সাধ্যমতো সহায়তা করেছেন। স্বপ্ন পূরণে অনেকটা পথ পাড়ি দিয়েও ওমরের স্বপ্ন অধরাই থেকে গেল।

ঢাকার সাভারের উত্তরা সেক্টর ১৪/১৮ নম্বর রোডে বন্ধুদের সঙ্গে ভাড়া বাসায় থাকতেন ওমর। সেখান থেকে বিএটিসিতে পড়াশোনা করছিলেন। তিন বছরের কোর্সের ১৩টি মডিউলের ১২টি মডিউল শেষ করেছিলেন ওমর। এরই মধ্যে পেয়েছিলেন ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্সে কাজ করার সুযোগও। ছোটবেলা থেকেই নানামুখী আবিষ্কারের প্রতিভা ছিল তার। কিন্তু ঘাতক বুলেট কেড়ে নিয়েছে সবার স্বপ্ন।

ওমরের শোকস্তব্ধ মা রুবি আখতার বলেন, ছেলের মৃত্যুর খবর পাওয়ার পরও কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছিলাম না। মনে মনে বারবার বলছিলাম, সংবাদটি যেন মিথ্যা হয়। কিন্তু পরক্ষণেই সবকিছু ওলটপালট করে দেয় আমার ছেলের মৃতদেহ। যেন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। তারপরেও আল্লাহর দিকে তাকিয়ে সব মেনে নিয়েছি। ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। আজ সবকিছুই শেষ হয়ে গেছে।

তিনি জানান, ছেলের মৃত্যু সংবাদ পেয়ে তার বাবা নূরুল আবছার দেশে ফিরে আসেন। তিনি ছেলেকে হারিয়ে স্তব্ধ হয়ে গেছেন। কোনোভাবেই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছেন না। যে কয়দিন দেশে ছিলেন ছেলের তৈরি করা বিভিন্ন জিনিসপত্র দেখে কান্না করতেন।

তিনি আরও বলেন, ওমরের বাবা জীবনের বেশিরভাগ সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন। খেয়ে না খেয়ে, নির্ঘুম রাত কাটিয়ে সন্তানদের মানুষ করার স্বপ্ন দেখতেন। কিন্তু ঘাতক বুলেট আমাদের সে স্বপ্ন ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে। আমার ছেলে এ দেশের সম্পদ। এ সম্পদকে যারা চিরতরে শেষ করে দিয়েছে আমি তাদের বিচার চাই। আমি বেঁচে থাকা অবস্থায় সে বিচার দেখে যেতে চাই।

সেদিনের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে ওমরের চাচাতো ভাই ইঞ্জিনিয়ার আবু বক্কর রাহাত বলেন, মিছিল থেকে ফেরার পথে সাড়ে ৪টার দিকে উত্তরা থানা এলাকায় পুলিশ গুলি করলে সে মারা যায়। মঙ্গলবার ভোর ৪টায় লাশবাহী গাড়ি করে ওমরের মরদেহ বাড়িতে নিয়ে আসা হয়। গ্রামের মানুষ তার এভাবে চলে যাওয়ায় ভীষণ শোকাহত।

ওমরের ছোট ভাই আম্মার বিন নূরুল আবছার (১৯) বাসসকে বলেন, আমার ভাই তো কোনো দোষ করেনি। কেন আমার ভাইকে পুলিশ গুলি করল? আমি এ হত্যার বিচার চাই। আমার বাবা সৌদি আরবে থেকে অনেক কষ্ট করে আমাদের পড়ালেখা করিয়েছেন। আমার ভাইও বাবার মর্যাদা রক্ষায় দিনরাত পরিশ্রম করে পড়ালেখা করেছেন। সে সফলও হয়েছে। কিন্তু সেই সাফল্যের আশা মিথ্যা হয়ে গেল। ওমরের সহপাঠী রুহুল আমিন বলেন, সে খুব মেধাবী শিক্ষার্থী ছিল। বন্ধুদের সঙ্গেও তার খুব ভালো সম্পর্ক ছিল। কোনো বিষয় একবার দেখলেই তার আয়ত্তে চলে আসত। নতুন নতুন জিনিস আবিষ্কার করাই ছিল তার নেশা। তার এভাবে চলে যাওয়া আমরা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছি না। আল্লাহ তাকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুক।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানায়, ওমরের বড় ভাই নূরুল হাসনাত রিফাত (২৬) শারীরিক প্রতিবন্ধী। আম্মার বিন নূরুল আবছার (১৯) নগরের বায়তুশ শরফ মাদ্রাসায় আলিম দ্বিতীয় বর্ষে এবং মোহাম্মদ বিন নূরুল আবছার (১৭) একই মাদ্রাসায় আলিম প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী। সবার ছোট আহমেদ বিন নূরুল আবছার (১৪) নগরের সিডিএ পাবলিক স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। সবার বড় বোন জান্নাতুল হুরাইন (২৮)। তার অনেক আগেই বিয়ে হয়ে গেছে। শহীদ ওমরের বাবা মো. নূরুল আবছার পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ওমরের পড়ালেখা শেষ হলে তিনিই সংসারের হাল ধরতেন। কিন্তু তিনি অকালেই ঝরে গেলেন।

পরিবারের পক্ষ থেকে আরও জানায়, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশ এর পক্ষ থেকে শহীদ ওমরের পরিবারকে এক লাখ টাকা আর্থিক সহায়তা করা হয়েছে। তবে আর কেউ কোনো সহায়তা করেনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শেখ হাসিনা ও সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে ট্রাইব্যুনালে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ

লন্ডনে মিটিংয়ের পর বাংলাদেশের গুণগত পরিবর্তন হয়েছে : মঈন খান

এটিএম বুথে কিশোরীকে ধর্ষণ

এখনো ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘খুব বেশি কিছু করেনি ইরান’

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সামনে ককটেল বিস্ফোরণ

রাজনীতিতে আসার ব্যাপারে যা বললেন তামিম

তুরস্ক-সৌদি-ইরান-পাকিস্তান মিলে ইসলামিক আর্মি গঠনের প্রস্তাব

ঈদের ১৫ দিনে সড়কে ঝরেছে ৩৯০ প্রাণ

মার্কিন দূতাবাসে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

নেতানিয়াহুর ওপর বিশ্বাস রাখতে পারছে না ইসরায়েলিরা

১০

আসামির তালিকা প্রকাশের পর ছাত্রলীগ নেতা হয়ে গেলেন বিএনপি 

১১

দেখে নিন ক্লাব বিশ্বকাপে রিয়াল মাদ্রিদের ম্যাচের সূচি

১২

বিএনপি মহাসচিবের সঙ্গে ব্রিটিশ হাইকমিশনারের বৈঠক

১৩

মানবতাবিরোধী অপরাধ / ট্রাইব্যুনালে সাবেক আইজিপি মামুন

১৪

৫ অক্টোবর কলম্বোতে ভারত-পাকিস্তান মহারণ

১৫

ইরানের জনগণ কি আসলেই সরকার পাল্টাতে চাইছে?

১৬

যেসব মডেলের ক্যালকুলেটর ব্যবহার করতে পারবেন এইচএসসি পরীক্ষার্থীরা

১৭

চ্যানেল ১৪-এর রিপোর্ট / ইরানে কী কায়েম করতে চায় ইসরায়েল

১৮

এইচএসসি পরীক্ষা কেন্দ্রে মাস্ক ও স্যানিটাইজার বাধ্যতামূলক

১৯

বিএনপির এমপি মনোনয়ন পেতে লাগবে তিন যোগ্যতা

২০
X