বহু পুরাতন কবরের অবস্থান কোথায় ছিল, কার নামে কোন জায়গায় কবর দেওয়া হয়েছিল, বর্তমানে কবর দেওয়ার জন্য কোথায় ফাঁকা জায়গা আছে, কোন পুরাতন কবরের ওপর নতুন কবর দেওয়া হবে এসব বিষয় পরিকল্পনা করে স্মার্ট কবরস্থান ব্যবস্থাপনা সিস্টেম আনছে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি)।
বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) গুলশান ২ ডিএনসিসি নগর ভবনে আয়োজিত স্মার্ট কবরস্থান ব্যবস্থাপনা সিস্টেম প্রাথমিকভাবে উদ্বোধন উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানানো হয়।
জানা গেছে, কবরস্থান ব্যবস্থাপনা হবে অ্যাপের মাধ্যমে। ‘গ্রেভইয়ার্ড ম্যানেজমেন্ট ডিএনসিসি’ নামে অ্যাপটি গুগল প্লে স্টোরে পাওয়া যাচ্ছে। কবরস্থানে না গিয়েও অ্যাপে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টস প্রদান করে লাশ দাফনের জন্য সব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে। এরপর লাশ নিয়ে নির্দিষ্ট কবরে দাফন করতে পারবেন। পাশাপাশি দাফন সনদ সংগ্রহ করা যাবে।
ডিএনসিসির সব কবরস্থানই পর্যায়ক্রমে স্মার্ট কবরস্থান ব্যবস্থাপনা সিস্টেমের আওতায় আনা হবে। প্রথমে ৬টি স্মার্ট ডিজিটাল কবরস্থান ম্যানেজমেন্ট সিস্টেমে থাকছে। কবরস্থানগুলো হলো- বনানী কবরস্থান, মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থান, রায়ের বাজার কবরস্থান, উত্তরা ৪ নম্বর সেক্টর কবরস্থান, উত্তরা ১২ নম্বর সেক্টর কবরস্থান ও উত্তরা ১৪ নম্বর সেক্টর বুদ্ধিজীবী কবরস্থান।
সংবাদ সম্মেলনে মেয়র আতিকুল ইসলাম বলেন, স্মার্ট বাংলাদেশে থাকবে স্মার্ট কবরস্থান ব্যবস্থাপনা। আজকের ডাটা যদি থাকে তাহলে আমরা অনেক বছর পরও তথ্য জানতে পারব। কবরস্থানের সব ব্যবস্থাপনা হাতের মুঠোয় থাকবে। ডিএনসিসির কবরস্থানের সব তথ্য যুক্ত হয়েছে অনলাইন সেবায়।
মেয়র বলেন, কবরস্থানে কত কবর আছে, কোথায় কবরের লোকেশন ছিল একটা জেনারেশন পরে আর কেউ কিন্তু এই তথ্য জানবে না। তবে আমরা যে উদ্যোগ নিয়েছি এখন ডিজিটাল ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে আত্মীয়স্বজনরা একযুগ পরেও এই তথ্য জানতে পারবেন। কবর কোথায় ছিল এটা নিয়ে কেউ দিশেহারা আর হবে না। আমরা যদি ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য ডাটা রাখতে পারি তাহলে তারা অনেক বছর পরেও জানতে পারবে এসব তথ্য।
আতিকুল ইসলাম বলেন, এটা আমাদের জন্য অনেক চ্যালেঞ্জিং ছিল। চ্যালেঞ্জ নিয়েও আমরা ম্যাপিং কাজ শুরু করেছি। পরে কবরস্থানে বড় বড় ডিজিটাল স্ক্রিন থাকবে, আমরা সেখানে দেখতে পাব কবরের তথ্য। এগুলোকে টোটাল ম্যানেজম্যান্টের মধ্যে আনতে, হাতের মুঠোয় আনতে আমরা কাজ করছি। আমাদের ঢাকা উত্তরের ছয়টি কবরস্থান ডিজিটাইলেজেশন করার উদ্যোগ আমরা নিয়েছি। আমরা এটার এমন সেবা দিতে চাই যেন নাগরবাসীর পাশাপাশি বিদেশেও যারা আছেন তারা যেন তাদের স্বজনদের কবরের সার্বিক তথ্য হাতের মুঠোয় পায়। পাশাপাশি কবর কোথায় দিবে, কোথায় ফাঁকা আছে তার সার্বিক তথ্য পেয়ে যাবে ঘরে বসে অ্যাপের মাধ্যমে।
ডিএনসিসি মেয়র বলেন, কবরস্থানে নির্দিষ্ট মেয়াদে কবর সংরক্ষণের খরচ আমরা বাড়িয়েছি। এর কারণ এমনিতেই কবরের জায়গার সংকট। তাই কবর সংরক্ষণকে নিরুৎসাহিত করার জন্য আমরা সংরক্ষণ খরচ বাড়িয়েছি। বনানী কবরস্থানেও যদি কেউ কবর দিতে আসে, আর সেটা যদি স্থায়ী না করা হয়, তাহলে সেই কবর দেওয়ার খরচ আমরা রেখেছি মাত্র ৫০০ টাকা। তবে কবর সংরক্ষণে করতে চাইলে সেটা অনেক খরচ পড়বে।
তিনি বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ট্যাক্স আমরা আর ক্যাশে নিচ্ছি না। সব এখন হবে অনলাইনে। এ ছাড়া ট্রেড লাইসেন্স অনলাইনে দেওয়ার সার্বিক কার্যক্রম শিগগিরই আমরা উদ্বোধন করব। সবার ঢাকার অ্যাপের মাধ্যমে নাগরিক সমস্যার সমাধান করছি।
ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সেলিম রেজার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আইসিডিডিআর,বি নির্বাহী পরিচালক তাহমিদ আহমেদ এবং সিনিয়র সায়েন্টিস্ট ও সিনিয়র ডিরেক্টর শামস এল আরেফিন, ডিএনসিসির প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ব্রিগে. জেনা. এ কে এম শফিকুর রহমান, প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগে. জেনা. মুহ. আমিরুল ইসলাম, প্রধান বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা কমোডর এস এম শরিফ-উল ইসলাম, ডিএনসিসির সচিব মোহাম্মদ মাসুদ আলম ছিদ্দিকসহ কাউন্সিলর ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন