কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:২২ পিএম
আপডেট : ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০৬:৩১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
বিবিএস ও ইউএনএফপিএ’র জরিপ

নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বেড়েছে

বিবিএস ও ইউএনএফপিএ’র যৌথভাবে পরিচালনা করা জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ছবি : কালবেলা
বিবিএস ও ইউএনএফপিএ’র যৌথভাবে পরিচালনা করা জরিপের ফলাফল প্রকাশ করা হয়। ছবি : কালবেলা

দেশে নারীর প্রতি যৌন সহিংসতা বেড়েছে। গত এক দশকে যৌন সহিংসতা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮.৫ শতাংশ। ১০ বছর আগে ২০১৫ সালে যৌন সহিংসতা ছিল ২৭.২ শতাংশ। তবে যৌন সহিংসতা বাড়লেও নারীর প্রতি শারীরিক সহিংসতা কমেছে। সহিংসতার শিকার নারীদের মাত্র ৭ দশমিক ৪ শতাংশ নারী আইনগত ব্যবস্থা নেয়।

বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বিবিএসের অডিটোরিয়ামে নারীদের ওপর সহিংসতা শীর্ষক জরিপ ২০২৪ এর প্রতিবেদন প্রকাশ অনুষ্ঠানে এসব তথ্য তুলে ধরা হয়। জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) অর্থায়নে বিবিএস ও ইউএনএফপিএ যৌথভাবে এ জরিপ পরিচালনা করে।

জরিপে চার ধরনের সহিংসতার তুলে ধরা হয়। এগুলো হচ্ছে- শারীরিক সহিসংতা, যৌন, অর্থনৈতিক এবং মনস্তাত্ত্বিক সহিসংতা। জরিপের তথ্য অনুযায়ী,বাংলাদেশের অধিকাংশ নারী তাদের জীবনসঙ্গী বা স্বামী কর্তৃক সহিংসতার শিকার। বাংলাদেশে জীবনসঙ্গীর দ্বারা সহিংসতা এখনো ব্যাপকভাবে বিদ্যমান, যা লাখ লাখ নারীর জীবনে গভীর প্রভাব ফেলছে।

প্রতিবেদনে বলা হয়, সহিংসতার শিকার নারীদের মধ্যে মাত্র ৭.৪ শতাংশ নারী আইনের আশ্রয় নেয়। বাকি ৯৩.৬ শতাংশ নারী এ বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয় না। এছাড়া সহিংসতার শিকার ৬৪ শতাংশ নারী তাদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কারও সঙ্গে শেয়ার করে না।

প্রতিবেদনে বলা হয়, নারীর প্রতি সহিংসতা বাংলাদেশে এতটাই প্রকট যে প্রায় ৭০ ভাগ নারী তাদের জীবদ্দশায় অন্তত একবার হলেও শারীরিক, যৌন, মানসিক এবং অর্থনৈতিক সহিংসতার পাশাপাশি নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণের শিকার হয়েছেন। ৪১ শতাংশ নারীর ক্ষেত্রে গত ১২ মাসে এই সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।

এই পরিসংখ্যানগুলো জাতিসংঘের মানসম্পন্ন পরিমাপের ওপর ভিত্তি করে তৈরি, যা বিশ্বব্যাপী নারীর প্রতি সহিংসতার বিস্তার পর্যবেক্ষণের জন্য ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশের সামাজিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে প্রাসঙ্গিক এমন সহিংসতামূলক আচরণগুলো অন্তর্ভুক্ত করলে এই সহিংসতার ব্যাপকতা আরও বেশি হয় (জীবনে অন্তত একবার : ৭৬ শতাংশ নারী এবং গত ১২ মাসে : ৪৯ শতাংশ নারী)।

বিবিএস এবং জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ) বাংলাদেশ এর সমন্বয়ে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে ‘নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপ ২০২৪ এর মূল তথ্যগুলো প্রকাশিত হয়। ২০১১ এবং ২০১৫ সালের জরিপের পরে তৃতীয়বারের মতো ২০২৪ সালের নারীর প্রতি সহিংসতার এই জরিপটি বাংলাদেশে নারীর প্রতি সহিংসতার প্রকৃতি, মাত্রা এবং প্রভাব সম্পর্কে সবচেয়ে বিস্তৃত এবং সমসাময়িক প্রেক্ষাপটের প্রকৃত চিত্র উপস্থাপনকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেদন।

জরিপটিতে, জীবনসঙ্গী বলতে বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী এবং ‘নন-পার্টনার’ বলতে বর্তমান বা প্রাক্তন স্বামী ব্যতীত উত্তরদাতার ১৫ বছর বয়সের পর হতে জীবনের যে কোনো সময়ে সংস্পর্শে আসা যে কোনো ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে।

বিবিএস জানিয়েছে, উত্তরদাতা নারীদের অর্ধেকেরও বেশি (৫৪ শতাংশ) জীবদ্দশায় তাদের স্বামীর দ্বারা শারীরিক অথবা যৌন সহিংসতা বা উভয় সহিসতার সম্মুখীন হলেও ১৬ শতাংশ নারী গত ১২ মাসে এই ধরনের সহিংসতার মুখোমুখি হয়েছেন। এ ছাড়াও, নিয়ন্ত্রণমূলক আচরণ এবং মানসিক সহিংসতা সর্বাধিক সংঘটিত সহিংসতার ধরন হিসাবে পাওয়া গেছে, ফলে, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্বেগের বিষয় বলে প্রতীয়মান হয়েছে।

উপরন্তু, জরিপে দেখা যায় যে নারীদের অন্য কারও তুলনায় তাদের স্বামীর কাছ থেকে শারীরিক সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা তিনগুণ বেশি এবং যৌন সহিংসতার শিকার হওয়ার সম্ভাবনা ১৪ গুণ বেশি। এতে প্রতীয়মান যে, বৈবাহিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে, শারীরিক এবং যৌন সহিংসতার ঝুঁকি অত্যধিক বেশি।

জীবনসঙ্গী বা স্বামী কর্তৃক সহিংসতার মাত্রা বেশি হলেও সহিংসতার শিকার নারীদের প্রায় ৬৪ শতাংশ তাদের সাথে ঘটে যাওয়া সহিংসতার কথা কাউকে কখনো বলেননি বলে উল্লেখ করা হয়েছে। পরিবারের সুনাম রক্ষা করার আকাঙ্ক্ষা, সন্তানদের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বেগ এবং ধরনের সহিংসতা স্বাভাবিক বলে মনে করার প্রবণতাসহ বিভিন্ন কারণ থেকে মূলত এই নীরবতা।

জরিপ প্রকাশ অনুষ্ঠানে গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা, উন্নয়ন সহযোগী এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। এতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা শারমিন এস মুরশিদ। বিশেষ অতিথি হিসেবে অংশ নেন মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ, এনডিসি এবং পরিসংখ্যান ও তথ্যবিজ্ঞান বিভাগ, পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব আলেয়া আক্তার। ২০২৪ সালের নারীর প্রতি সহিংসতা জরিপের মূল ফলাফল উপস্থাপন করেন বিবিএস এর প্রকল্প পরিচালক ইফতেখাইরুল করিম।

অনুষ্ঠানে মহিলা ও শিশু মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মমতাজ আহমেদ বলেন, মানসিকতার কারণে ভায়োলেন্স বাড়ে। ইউরোপ আমেরিকার মতো জায়গায়ও নারীর প্রতি সহিংসতা রয়েছে। হজের সময় নারী পুরুষ সবাই থাকে কিন্তু সেখানে সহিংসতার কোন ঘটনা ঘটে না। কারণ সেখানে তাদের ধর্মীয় উদ্দেশ্য থাকে, তাদের মাথায় সহিংসতার কোনো চিন্তাই আসে না। তাই নারীর প্রতি সহিংসতা কমাতে মানসিক পরিবর্তন দরকার।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

ডিআরএস বিতর্কে আবারও উত্তাল আইপিএল

জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে চাকরির সুযোগ

মানসিক স্বাস্থ্যসেবায় এআই ‘থেরাবট’

ভায়াডোলিদের মাঠে ঘাম ঝরানো জয় বার্সার

মানবিক করিডর নিয়ে কোনো ধরনের চুক্তি হয়নি : নিরাপত্তা উপদেষ্টা

গাজা ইস্যুতে নেতানিয়াহুর বক্তব্য প্রত্যাখ্যান কাতারের

বিএনপির সঙ্গে রাশিয়ার রাষ্ট্রদূতের বৈঠক

মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের উত্ত্যক্তের অভিযোগে গ্রেপ্তার ৩

‘তুরিন আফরোজের ডক্টরেট ডিগ্রি ভুয়া’

ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক অবরোধ করে প্রতিবাদসভা

১০

মাদকাসক্ত ছেলের হাতে প্রাণ গেল মায়ের

১১

সারা দেশে বজ্রবৃষ্টির পূর্বাভাস

১২

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে দুদকের অভিযান

১৩

মেসি-সুয়ারেজ ঝলকে চার ম্যাচ পর জয়ের দেখা পেল মায়ামি

১৪

শেরপুরে ট্রাকচাপায় অটোচালক নিহত, আহত ৫

১৫

কাশ্মীর উত্তেজনা, পাকিস্তানি রেঞ্জারকে আটক করল বিএসএফ

১৬

সুগন্ধা নদীতে নিখোঁজ শ্রমিকের মরদেহ উদ্ধার

১৭

নিবন্ধন ফিরে পেতে জামায়াতের আপিল দ্রুত শুনানির আবেদন

১৮

গ্রামবাসীর ধাওয়ায় বোমা ফাটিয়ে পালাল ডাকাতদল

১৯

জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পেশাগত দক্ষতা বাড়াতে নতুন উদ্যোগ

২০
X