আশুলিয়ায় সাব-রেজিস্ট্রারের পদত্যাগের দাবিতে দলিল লেখকদের আন্দোলন ও বিক্ষোভের কারণে আশুলিয়া সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে সৃষ্টি হয়েছে অনেকটা অচলাবস্থা। ব্যাহত হচ্ছে জমি কেনাবেচার কার্যক্রম। ফলে জমির দলিল সম্পাদন করতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। একইসঙ্গে সরকারও রাজস্ব হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা।
তবে এবার সাব-রেজিস্ট্রি অফিসে অচলাবস্থা নিয়ে মুখ খুলেছেন সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভূঁইয়া পাভেল।
সাব রেজিস্ট্রি অফিসের এমন বেহাল অবস্থার কারণ জানতে চাইলে তিনি কালবেলাকে বলেন, আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে আমার বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এনে প্রায় একমাস ধরে আমার পদত্যাগ দাবি করা হচ্ছে। আমি দায়িত্ব নিয়ে বলতে চাই আমার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ ভিত্তিহীন ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত। আমি আইন অনুযায়ী কাজ করছি। ফলে দলিল লেখকরা আমার কাছ থেকে অবৈধ সুবিধা না পেয়ে আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেনের ইন্ধনে সাধারণ দলিল লেখকদের বিভ্রান্ত করছে এবং নষ্ট করা হচ্ছে কর্মপরিবেশ। জোর করে বন্ধ রাখা হয়েছে দলিল লেখকদের দোকান।
তিনি আরও বলেন, পে-অর্ডার করতেও বাধা প্রদান করছে। যারা দলিল করতে আসছেন তাদের দেখানো হচ্ছে ভয় ভীতি এমনকি আমির হোসেন নামে একজন ব্যাংক কর্মকর্তাকে মেরে আহত করা হয়েছে। প্রতিনিয়ত ‘মব’ সৃষ্টির মাধ্যমে আতঙ্ক সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম দেশে এমন পরিস্থিতি চলতে পারে না। দলিল লেখকরা চরম স্বেচ্ছাচারিতায় মেতেছেন, ফলে সরকার হারাচ্ছে রাজস্ব এবং সাধারণ সেবা প্রত্যাশীরা বঞ্চিত হচ্ছেন তাদের ন্যায্য সেবা প্রাপ্তি থেকে।’
সাব-রেজিস্ট্রার খায়রুল বাশার ভূঁইয়া পাভেল বলেন, ‘আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন ‘ভুয়া’ খাজনা দিয়ে একটি দলিল সম্পাদন করাতে চেয়েছিলেন। আমি তা গ্রহণ করিনি। এছাড়াও সরকারি রেভিনিউ উৎস কর ৮০ হাজার টাকা থেকে মাত্র ২০ হাজার টাকা দেওয়ার অন্যায় আবদারসহ ভ্রম সংশোধনের নামে আরএস দাগ নাম্বার পরিবর্তন করে দলিল সম্পাদনের জন্য অন্যায়ভাবে চাপ দেওয়া হয়েছিল আমাকে। পাশাপাশি খাজনা খারিজ ছাড়া দলিল সম্পাদনের জন্যও আমাকে প্রেসারাইজ করা হয়। কিন্তু আমি কোন চাপের কাছে মাথা নত করিনি।’
সাব-রেজিস্ট্রার আরও বলেন, সরকার আমাকে এখানে বসিয়েছে, ‘সরকারি স্বার্থ সংরক্ষণের জন্য সুতরাং কোনো চাপই আমাকে আমার দায়িত্ব থেকে পিছু হটাতে পারবে না। আর কারও অন্যায় দাবিতে পদত্যাগ করার প্রশ্নই আসে না। আমি এখানে থাকবো কিনা এসব বিষয় সিদ্ধান্ত নেবে আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ।’
তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আশুলিয়া দলিল লেখক কল্যাণ সমিতির আহ্বায়ক আলমগীর হোসেন বলেন, ‘সাব-রেজিস্ট্রার পাভেল একজন দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা। আমরা তার অপসারণ চাই।’
গত ১৭ জুন থেকে চলমান এ অচলাবস্থায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জমির ক্রেতা-বিক্রেতা ও সচেতন মহল। দ্রুত সমাধান না হলে এ সংকট আরও ভয়াবহ আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। এখনই যথাযথ তদন্ত করে দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তারা।
মন্তব্য করুন