ব্রিকসের ১৫তম শীর্ষ সম্মেলনে জোটটির নতুন সদস্য হিসেবে যুক্ত হতে চেয়েছিল বাংলাদেশ। শুরুর দিকে সরকার আশাবাদী থাকলেও এবারই সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারে সন্দ্বীহানও ছিল। তাই নতুন সদস্যের তালিকায় বাংলাদেশের নাম না থাকাকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখতে নারাজ বিশ্লেষকরা। তারা বিষয়টি নিয়ে রাজনীতি না করে সদস্যপদ না পাওয়ার নেপথ্যের কারণগুলো খতিয়ে দেখার জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
কূটনৈতিক সূত্রগুলো বলছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে নতুন ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ব্রিকসে যুক্ত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয় সরকার। সে লক্ষে নতুন সদস্য হতে আবেদনও করে বাংলাদেশ। তবে ব্রিকসে যাওয়ার আগেই নীতিনির্ধারকরা ধারণা পেয়েছিলেন এবার সদস্যপদ নাও হতে পারে।
প্রধানমন্ত্রীর দক্ষিণ আফ্রিকা সফর নিয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের কাছে সাংবাদিকরা ব্রিকসে সদস্যপদ পাওয়ার ব্যাপারে সবশেষ পরিস্থিতি জানতে চান।
জবাবে তিনি জানান, গত জুন মাসে জেনেভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দক্ষিণ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সিরিল রামাফোসার বলেছিলেন, তারা ব্রিকসের সদস্যসংখ্যা বাড়াতে চান। বাংলাদেশকেও সদস্য করার চিন্তাভাবনা করছেন। এরপর বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিকসের সদস্যপদের জন্য আবেদন করেছে।
এ পর্যন্ত প্রায় ২২টি দেশ ব্রিকসের সদস্য হতে আগ্রহ দেখিয়েছে জানিয়ে ড. মোমেন আরও বলেন, এ মুহূর্তে ব্রিকসে নতুন সদস্য নেবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। কারণ, তারা কী প্রেক্ষাপটে সদস্য নেবেন, কী কী হবে-সেজন্য তারা একটা মোডালিটি (কর্মপদ্ধতি) তৈরি করবেন। এ ব্যাপারে আমরা তাড়াহুড়ো করব না।
উল্লেখ্য, গতকাল বৃহস্পতিবার জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকস শীর্ষ সম্মেলনে ব্রিকসের সদস্য হওয়ার জন্য আর্জেন্টিনা, মিসর, ইথিওপিয়া, ইরান, সৌদি আরব ও সংযুক্ত আরব আমিরাত- এই ছয় দেশকে আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এদিকে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো বলছে, ব্রিকসে যোগ দিতে শুধু আবেদন করা ছাড়া বাংলাদেশের তেমন তৎপরতা ছিল না। এ ধরণের জোটে যুক্ত হতে সদস্যদেশগুলোর সঙ্গে ব্যাপক কূটনৈতিক যোগাযোগ গুরুত্বপূর্ণ। যা ব্রিকসের ক্ষেত্রে দেখা যায়নি।
এ ছাড়াও কোনো জোটে আবেদনের দুমাসের মধ্যে সদস্যপদ পাওয়াকেও বেশি প্রত্যাশা বলে মনে করা হচ্ছে।
এদিকে ব্রিকসের সদস্য দেশগুলোর মধ্যে এর নতুন সদস্য নেওয়ার ক্ষেত্রে মানদণ্ড নির্ণয়েও দ্বিধাবিভক্তি ছিল। ফলে ব্রিকসের সদস্যপদ না পাওয়াকে কূটনৈতিক ব্যর্থতা হিসেবে দেখা বা নেতিবাচক হিসেবে না দেখার পক্ষে সংশ্লিষ্টরা।
সাবেক রাষ্ট্রদূত মুন্সী ফয়েজ কালবেলাকে বলেন, ব্রিকসে এবার যুক্ত হতে না পারাটা কোনো ব্যর্থতা মনে করছি না। তবে স্বল্পসময়ে আমাদের বেশি প্রত্যাশা ছিল। বাংলাদেশ কেনো এবার হতে পারলো না তা জানতে আরও অপেক্ষা করা উচিত। তবে ভবিষ্যতে যুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে বলে জানান তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বলেন, এতো স্বল্প সময়ে আবেদনের পর ব্রিকসের সদস্য না হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়। ব্রিকসে যারা এবার সদস্য হওয়ার সুযোগ পেলো তাদের অর্থনীতি আমাদের তুলনায় ভালো বলে মনে করেছে জোটটি। কারণ আমরা এখনো স্বল্পোন্নত দেশের তালিকায় আছি। শুরু থেকেই ব্রিকসে যোগ দেওয়া নিয়ে বাংলাদেশে এক ধরণের রাজনীতি হচ্ছিল বলে স্বাভাবিক বিষয়টি ভিন্ন রূপে দেখার সুযোগ তৈরি হয়েছে বলেও অভিমত জানান তিনি।
মন্তব্য করুন