বিএসসি প্রকৌশলীদের প্রতি বৈষম্য নিরসন ও ৩ দফা দাবি বাস্তবায়নের দাবিতে দেশজুড়ে বিক্ষোভ করেছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিভিন্ন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়-বুয়েট, চুয়েট, কুয়েট, রুয়েটসহ সকল বিজ্ঞান-প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল কলেজগুলোতে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
এ সময় শিক্ষার্থীরা অধিকার আদায়ে তাদের দাবি সমূহ তুলে ধরেন। পাশাপাশি দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন।
শিক্ষার্থীরা পূর্বঘোষিত তিন দফা দাবি আবারও উপস্থাপন করেন। প্রকৌশল নবম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদে প্রবেশের জন্য সবাইকে পরীক্ষা দিয়ে উত্তীর্ণ হওয়া এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী হওয়া, কারিগরি দশম গ্রেডে উপ-সহকারী প্রকৌশলী বা সমমান পদ সবার জন্য উন্মুক্ত করা এবং বিএসসি ডিগ্রিধারী ব্যতীত অন্য কেউ ‘প্রকৌশলী’ পদবি ব্যবহার করতে পারবে না মর্মে আইন পাশ করে গেজেট প্রকাশ করা, এই তিন দফা দাবি দ্রুত কার্যকর করার দাবি জানান শিক্ষার্থীরা।
বর্তমানে কারিগরি পদে (১০ম গ্রেড) শুধুমাত্র ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীরাই আবেদন করতে পারেন এবং পরবর্তীতে পদোন্নতি পেয়ে তারা সরাসরি ৯ম গ্রেডে সহকারী প্রকৌশলী পদে প্রবেশ করতে পারেন। তবে একজন বিএসসি ডিগ্রিধারীকে এই ৯ম গ্রেডে প্রবেশ করতে প্রচুর প্রতিযোগিতামূলক বিসিএস পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। এ কারণেই এই আন্দোলনে আসতে হয়েছে বলে জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
তাদের মতে, ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের প্রভাবশালী গোষ্ঠীর কারণে প্রকৌশল পেশায় বিএসসি ডিগ্রিধারীরা পদোন্নতি ও নিয়োগে ন্যায্যতা থেকে অনেকদিন ধরেই বঞ্চিত হয়ে আসছেন। দীর্ঘ চার বছর কঠিন পাঠ্যক্রম, ল্যাব, থিসিস ও প্রজেক্টের মধ্য দিয়ে পাশ করা বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীরা চাকরির বাজারে চরম বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। সরকারি চাকরির দশম গ্রেডে একচেটিয়া শতভাগ ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের নিয়োগ এবং নবম গ্রেডে পদোন্নতিতে ৩৩.৩ শতাংশ কোটা বরাদ্দ করা আছে ডিপ্লোমা ডিগ্রিধারীদের জন্য। অধিকন্তু নবম গ্রেডে পদোন্নতির ক্ষেত্রে কোটার ব্যবস্থা ৫০ শতাংশ করার অন্যায্য দাবিও জানিয়ে আসছিলো তাঁরা।
তারা আরও জানান, সরকারি নিয়োগে ডিপ্লোমা প্রকৌশলীদের প্রাধান্য ও বিএসসি ডিগ্রিধারী প্রকৌশলীদের উচ্চতর পদে প্রবেশে নানা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা হচ্ছে, যা পেশাগত মর্যাদা ও ন্যায্যতা লঙ্ঘন করে। কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলনের মধ্য দিয়েই জুলাই গণ-অভ্যুত্থান হয়েছিল। অভ্যুত্থানের পরেও চাকরিক্ষেত্রে এরকম অন্যায্য কোটা থাকা জুলাই শহীদের রক্তের সঙ্গে বেইমানি। তাই অনতিবিলম্বে এ কোটা প্রথা বাতিল চান তারা।
এ বিষয়ে চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিরাজুল ইসলাম মিরাজ জানান, দশম গ্রেডের পদটি উপ-সহকারী প্রকৌশলীদের। কিন্তু যারা আসলেই বিএসসি ইঞ্জিনিয়ার, তারাই আবেদন করতে পারে না। আবার অনেকে দশম গ্রেড থেকে পদোন্নতি পেয়ে নবম গ্রেডে যাচ্ছে, তাদের সেটার জন্য বিএসসি সার্টিফিকেটটা দরকার, কিন্তু সেটা নেই। তাদেরকে এক সময় দশম গ্রেডে আবেদন করার সুযোগ দেয়া হয়েছিল, কিন্তু পরে তারা এটাকে পুরোপুরি নিজেদের করে নেয়। সেজন্য এবার আমরা নিজেদের অধিকার আদায়ে তিন দফা দাবি নিয়ে আজ মিছিল ও বিক্ষোভ করছি।
মন্তব্য করুন