অনির্দিষ্টকালের জন্য বাংলাদেশ ত্যাগ করে নিজ দেশে গেছেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ।
রোববার (১১ মে) সন্ধ্যা ৭টা ৪০মিনিটে পাকিস্তান হাইকমিশনার ঢাকা বিমানবন্দর থেকে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৭ ফ্লাইটে দুবাই হয়ে পাকিস্তানের ইসলামাবাদের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। পাকিস্তানের হাইকমিশনারের এ সফর নিয়ে চলছে নানা গুঞ্জন। বলা হচ্ছে, গেল ৯ মে কক্সবাজার সফরকালে সৈয়দ আহমেদ মারুফ পাকিস্তান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জরুরি তলবের পর ঢাকা ছেড়েছেন।
ঘটনার শুরু যেখানে :
পাকিস্তান হাইকমিশনারের এবার নিজ দেশে যাবার ঘটনাটি স্বাভাবিক নয় বলে কালবেলাকে একটি সূত্র জানায়, পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহম্মেদ মারুফ তিনদিনের সফরে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন। গত বৃহস্পতিবার ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স ফ্লাইট যোগে (ফ্লাইট নং-বিএস-১৫৯) তিনি রাত ৮টা ১৫ মিনিটে কক্সবাজার পৌঁছান।
বিমানবন্দরের একটি ছবিতে দেখা যায় ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহম্মেদ মারুফের সঙ্গে অবস্থান করছেন তার ঘনিষ্ঠ ব্যবসায়ী বন্ধু আজহার মাহমুদ ও এক নারী।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, হাইকমিশনার সফরে কক্সবাজারের উখিয়ায় অবস্থিত হোটেল সি-পার্লে ওঠেন। সেখানে হাইকমিশনারের সেই নারীসহ সঙ্গে ছিলেন বন্ধু আজহার মাহমুদ। মূলত তারা কক্সবাজার যাবার পরের দিন গত ৯ মে নিজ গাড়ি করে বন্ধু ও সেই নারীসহ ঘুরছিলেন ঢাকায় নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহম্মেদ মারুফ।
একই সূত্র বলছে, তাদের কক্সবাজারে অবস্থান করা নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রশ্নের মুখে পরেন তারা। তখন তাদের পক্ষ থেকে ভ্রমণের উদ্দেশ্যে গিয়েছেন এমনটা জানানো হয়।
কে সেই নারী:
কালবেলার সূত্র বলছে, সেই নারী ঢাকার ঝিগাতলায় একটি ফ্ল্যাটে বসবাস করেন। সেখানে পাকিস্তানের হাইকমিশনার ও তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজহার মাহমুদের যাতায়াত রয়েছে। এছাড়া সেই নারীর ফেইসবুক অ্যাকাউন্টেও পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সঙ্গে একাধিক ছবি ছিল যা এখন তার অ্যাকাউন্টে নেই সেগুলো সেই নারী মুছে ফেলেছেন।
জানা যায়, তাদের সফরটি গোপন রাখতে হাইকমিশনার ও তার বন্ধু এক সঙ্গে টিকেট কেটেছেন এবং সেই নারী আলাদাভাবে টিকেট কেটে ভ্রমন করেছেন। তাদের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজমান। সেই নারী ২৩ ব্যাচের বাংলাদেশ ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হাফিজা হক শাহ। তিনি বৈদেশিক মুদ্রা ও নীতি বিভাগে কর্মরত।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে হাফিজা হক শাহ কালবেলাকে পাকিস্তানের হাইকমিশনার তার পূর্ব পরিচিত বলে স্বীকার করেন এবং কক্সবাজারে হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয়েছে জানিয়ে বলেন, পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত আমার পূর্ব পরিচিত। বিভিন্ন সময়ে তার অনুষ্ঠানেও গিয়েছি। আমি তার বিরুদ্ধে কোথাও কোনো অভিযোগ করিনি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত ছাড়াও অনেক দেশের রাষ্ট্রদূতদের সঙ্গেই আমার যোগাযোগ রয়েছে।
কক্সবাজারে পাকিস্তানের হাইকমিশনারের সঙ্গে একসঙ্গে বেড়াতে যাওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, আমি আমার কাজিনদের নিয়ে ব্যক্তিগত ভ্রমণে কক্সবাজার গিয়েছি। রাষ্ট্রদূত তার পরিবারের লোকজন নিয়ে গিয়েছেন তার মতো করে। আমরা এক সঙ্গে যাইনি। তবে কক্সবাজার গিয়ে দেখা হয়েছে তার সঙ্গে।
এসময় কক্সবাজারে একসঙ্গে ঘোরাঘুরির বিষয়ে তিনি দাবি করেন, কক্সবাজার গিয়ে তার সঙ্গে (পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত) আমার দেখা হয়েছে হোটেল লবিতে। পূর্ব পরিচিত হিসেবে একসঙ্গে তারা কফি খেয়েছেন সেখানে। তখন আরও অনেকেই ছিলেন। এটা তো বড় কিছু না। একসঙ্গে ঘোরাঘুরির বিষয়টি মিথ্যা।
হাফিজা হক শাহ বলেন, তা ছাড়া আমি আমার মতো করেই শনিবার (১০ মে) বিকেলের ফ্লাইটে ঢাকায় চলে আসি। পাকিস্তানের রাষ্ট্রদূত কবে গেছেন বা কবে ফিরেছেন, তাও জানি না।
তবে কালবেলার হাতে আসা পাকিস্তানের হাইকমিশনারের কক্সবাজারে যাবার টিকেটে নেই পরিবারের লোকজনের নাম। রয়েছে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজহার মাহমুদের নাম। এমনকি ঢাকায় ফেরার ফিরতি টিকেটেও রয়েছে আজহার মাহমুদের নাম। সেখানে দেখা যায় তাদেরও ঢাকায় ফেরত আসার কথা ছিল শনিবার।
হঠাৎ কেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার নিজ দেশে:
পাকিস্তানের হাইকমিশনারের কক্সবাজার ভ্রমণের সময়ই তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও ঢাকায় পাকিস্তানের হাইকমিশনের তলবের ভিত্তিতে জরুরি ঢাকায় আসেন পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহম্মেদ মারুফ এমনটা জানিয়ে সূত্র বলছে, হাইকমিশনারের ভ্রমণ নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সন্দেহ হলে তারা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষতে অবহত করলে বিষয়টি পাকিস্তান সরকার অব্দি খবর পৌছায়। পরে তাকে জরুরি বাই রুটে ঢাকায় ফেরার নির্দেশ দিলে হাইকমিশনার তার সফরসঙ্গী সেই নারী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু আজহার মাহমুদকে কক্সবাজার ফেলে ঢাকায় ফেরেন তিনি।
কালবেলার হাতে আসা কক্সবাজারে যাবার টিকেটেও রয়েছে আজহার মাহমুদের নাম, এমনকি ঢাকায় ফেরার ফিরতি টিকেটেও রয়েছে আজহার মাহমুদের নাম। সেখানে দেখা যায় তাদের ঢাকায় ফেরত আসার কথা ছিল ১০ মে রাত ৯টায়। কিন্তু আকর্ষিকভাবে নিজের টয়োটা গ্রে রঙ্গের গাড়িতে ঢাকায় আসেন। পরে রোববার তিনি পাকিস্তানে ফিরে যান।
জানতে চাইলে ঢাকায় অবস্থিত পাকিস্তান হাইকমিশন জানায়, বাংলাদেশে নিযুক্ত পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ সরকারি কাজে পাকিস্তানে আছেন।
মন্তব্য করুন