মালয়েশিয়া শ্রমবাজার বর্তমান সরকারের আমলেই সিন্ডিকেট মুক্ত করার উপযুক্ত সময়। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর সরকারের প্রচেষ্টায় মালয়েশিয়া শ্রমবাজার আবারও উম্মুক্ত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। প্রবাসী কল্যাণ উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল আগামী ১৫ মে মালয়েশিয়া সরকারের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক আলোচনায় বসবেন।
এর আগে ২০১৬-২০১৮ সালে মাত্র ১০টি এজেন্সির মাধ্যমে এবং ২০২২-২০২৪ সালে প্রথমে ২৫টি এবং পরে ১০০টি এজেন্সির সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার উম্মুক্ত হয়۔সিন্ডিকেটের অনিয়ম, দুর্নীতি ও অতিরিক্ত অভিবাসন খরচের কারণে বারবার এই শ্রম বাজার বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। কর্মীরা অতিরিক্ত খরচ দেওয়ার পরও হাজার হাজার কর্মী চাকরি বেতন না পেয়ে মানবেতর জীবন যাপন করতে বাধ্য হয়েছিলেন। সিন্ডিকেটের অতিরিক্ত ফির কারণে বহুজাতিক কোম্পানিগুলো কর্মী নিতে পারেনি।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সাবেক ফ্যাসিবাদী সরকারের মতো এবারও সিন্ডিকেটের মাধ্যমে কর্মী পাঠাতে হলে কর্মীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। ২ হাজার ৫০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মধ্যে ৯৫ শতাংশ বৈষম্যের শিকার হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকারের সুনাম নষ্ট করার জন্যই সেই পুরোনো চক্র তাদের ব্যক্তিস্বার্থে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে ভুল তথ্য দিয়ে সিন্ডিকেট করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। এ ক্ষেত্রে সরকারকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দিয়েছেন তারা।
উল্লেখ্য, মালয়েশিয়া আরও ১৪টি সোর্স কান্ট্রি থেকে শ্রমিক আনলেও বাংলাদেশ ছাড়া কোনো দেশে সিন্ডিকেট সিস্টেম নেই। মালয়েশিয়া জনশক্তি পাঠানোর ক্ষেত্রে সিন্ডিকেট করে প্রত্যেক কর্মী থেকে সব খরচ বাদ দিয়ে সিন্ডিকেটকারীরা অন্যায়ভাবে অতিরিক্ত ১ লাখ ৫২ হাজার টাকা চাঁদা বাধ্যতামূলকভাবে আদায় করে। এতে প্রত্যেক কর্মীকে প্রায় ৫ থেকে ৬ লাখ টাকা খরচ করে মালয়েশিয়া যেতে হয়েছে।
গরিব নিরীহ মালয়েশিয়াগামী কর্মীদের থেকে অতিরিক্ত প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকা চাঁদা আদায়কারী সিন্ডিকেটের মূল হোতা বায়রার সাবেক মহাসচিব ও ক্যাথারসিস ইন্টারন্যাশনাল, আরএল-৫৪৯-এর স্বত্বাধিকারী রুহুল আমিন (স্বপন), তার পার্টনার মালয়েশিয়ায় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দাতোশ্রী আমিন নূর এবং তাদের সহযোগী সাবেক স্বৈরাচারী সরকারের প্রধান মন্ত্রীর উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক প্রধান মন্ত্রীর প্রটোকল অফিসার ও সাবেক এমপি আলাউদ্দিন নাসিম, সাবেক অর্থমন্ত্রী লোটাস কামাল ও তার পরিবার, সাবেক মন্ত্রী ইমরান আহমেদ, সাবেক সচিব ড. মনিরুস সালেহীন, সাবেক এমপি বেনজীর আহমেদ, সাবেক এমপি লেফটেনেন্ট জেনারেল মাসুদ উদ্দিন চৌধুরী, সাবেক এমপি নিজাম হাজারী, বায়রার সাবেক সভাপতি আবুল বাসার ও তার পরিবারসহ প্রভাবশালী সাবেক সরকারের নেতাদের যোগসাজশে মালয়েশিয়া শ্রমবাজারে চরম অরাজকতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার করেছেন। তাদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দেশের স্বার্থে, কর্মীদের স্বার্থে, সরকারের ইমেজের স্বার্থে মালয়েশিয়া শ্রমবাজার কোনোভাবেই যাতে সিন্ডিকেট করতে না পারে, সে ব্যাপারে উদ্যোগী হতে হবে।
অভিবাসন বিশেষজ্ঞ ব্রাকের শরিফুল হাসান কালবেলাকে বলেন, প্রথম কথা হচ্ছে মালয়েশিয়ার শ্রমবাজার খোলার ক্ষেত্রে যে বিষয়টি বিবেচনা করতে হবে তা হলো অতীতের যারা সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত ছিল তারা যেন আর কোনোভাবেই সিন্ডিকেট করার সুযোগ না পায়। বিশেষ করে এফডব্লিউসিএমএসের ধাতুশ্রী আমিনুর যে অনলাইনের মাধ্যমে সিন্ডিকেট করে দুর্নীতি করার সুযোগ পেয়েছিল, এ ধরনের অনলাইন সিস্টেম বজায় রেখে দুর্নীতি ও সিন্ডিকেট মুক্ত শ্রমবাজার তৈরি করা সম্ভব নয়। নতুন উদ্যোগে নিতে হবে।
শ্রমিকদের বৈধকরণ তিনি বলেন, দিনশেষে যেন প্রবাসীদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করতে না হয়, প্রতারণার শিকার না হতে হয়, সিন্ডিকেটের শিকার হতে না হয়। এ ছাড়া মালয়েশিয়ায় ইতোমধ্যে যারা অনিয়মিতভাবে বা অবৈধভাবে রয়েছেন, সেসব শ্রমিককে বৈধকরণ করা জরুরি।
শরিফুল হাসান বলেন, নতুন শ্রমবাজার উন্মুক্ত হলে ১৮ হাজার কর্মী যারা যেতে পারেননি। বারবার আশ্বাস-বিশ্বাসে প্রতারিত হয়েছেন তারা। তাদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে বিবেচনায় নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
মন্তব্য করুন