কূটনৈতিক প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০৩ জুন ২০২৫, ১০:৫৩ পিএম
আপডেট : ০৪ জুন ২০২৫, ১২:৫৬ এএম
অনলাইন সংস্করণ

ব্রিটিশ রাজা ও প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করবেন ড. ইউনূস

রাজা তৃতীয় চার্লস, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি: সংগৃহীত
রাজা তৃতীয় চার্লস, প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস ও ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার। ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লস ও প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে আগামী সপ্তাহে লন্ডনে সাক্ষাৎ করবেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আগামী ৯ জুন লন্ডনের উদ্দেশে ঢাকা ছাড়ার কথা রয়েছে প্রধান উপদেষ্টার। ওই দিন ব্রিটেনের রাজপরিবারের পক্ষ থেকে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ড. ইউনূসকে কিং চার্লস হারমনি অ্যাওয়ার্ড-২০২৫ দেওয়া হবে।

আগামী মঙ্গলবার অথবা বুধবার লন্ডনে বাকিংহাম প্রাসাদে রাজা চার্লসের সঙ্গে তার এই সাক্ষাৎ হতে পারে। এ সময় অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি সমর্থন আদায়ে চেষ্টা করবেন প্রধান উপদেষ্টা।

সরকারের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা কালবেলাকে এমনটা নিশ্চিত করেছেন।

দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, অ্যাওয়ার্ড নিতে প্রধান উপদেষ্টা লন্ডন যাচ্ছেন, এটা প্রায় চূড়ান্ত। প্রাথমিক পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী ১০ জুন রাতে সরকারপ্রধান লন্ডন পৌঁছাবেন এবং দেশে ফিরবেন ১৩ জুন। সফরের তৃতীয় দিনে (অ্যাওয়ার্ড গ্রহণের দিন) যুক্তরাজ্যের রাজা তৃতীয় চার্লসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ হবে তার। আর যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের বিষয়টি এখনো প্রক্রিয়াধীন।

কূটনীতিকরা জানান, ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সঙ্গে প্রধান উপদেষ্টার আগামী বুধবার অথবা বৃহস্পতিবার বৈঠকের সম্ভাবনা রয়েছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিসহ দেশটির কয়েকজন মন্ত্রীর প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে সাক্ষাতের কথা রয়েছে। এ কর্মসূচিগুলো দু-এক দিনের মধ্যে চূড়ান্ত হবে।

তবে সরকারপ্রধানের সঙ্গে আলোচনা হলে দুই দেশই নানা বিষয়ে গুরুত্ব দেবে বলে জানান তারা।

সরকারের প্রতি সমর্থন বাড়াতে সংস্কারপ্রক্রিয়ায় সমর্থন

অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর থেকেই যুক্তরাজ্যের সমর্থন অব্যাহত রয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে নির্বাচন ইস্যুতে সরকারকে চাপ দিচ্ছে রাজনৈতিক দলগুলো। যদিও অন্তর্বর্তী সরকারের পক্ষ থেকে সংস্কারকে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। ফলে বর্তমান প্রেক্ষাপটে সংস্কার গুরুত্বপূর্ণ, তা এই সফরে জানাবেন প্রধান উপদেষ্টা।

এ নিয়ে যুক্তরাজ্যের ভাবনা কী, জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সবাই সংস্কারকে গুরুত্ব দিচ্ছে। আর যুক্তরাজ্যও চায় সংস্কারপ্রক্রিয়ার মধ্য দিয়েই বাংলাদেশে নির্বাচন হোক। সংস্কারপ্রক্রিয়ায় তাদের সমর্থন রয়েছে।

সুসাশন ও মানবাধিকার

যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের সঙ্গে সুশাসন ও মানবাধিকার ইস্যুতে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে আগ্রহী। গেল ফেব্রুয়ারিতে যুক্তরাজ্যের মানবাধিকার বিষয়ক রাষ্ট্রদূত এলেনর স্যান্ডার্স ঢাকা সফর করেছেন। তিনি ন্যায়বিচার, জবাবদিহি, ধর্ম বা বিশ্বাসের স্বাধীনতা, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, লিঙ্গ-সমতা এবং শ্রম অধিকার নিয়ে বাংলাদেশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা ও জবাবদিহি নিশ্চিত করার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা আসবে তাদের পক্ষ থেকে। এ বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থান পরিষ্কার করা হবে জানা যায়।

বাণিজ্য ও বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাবে ঢাকা

যুক্তরাজ্য বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও বিনিয়োগ অংশীদার। দুই দেশের মধ্যে পোশাক শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানি, শিক্ষা, বিমান পরিবহন, অবকাঠামো, প্রযুক্তি ও পরিষেবা খাতে বিনিয়োগ ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক ক্রমাগত বাড়ছে। যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের রপ্তানির প্রধান পণ্য পোশাক ও বস্ত্র।

এ ছাড়া চিংড়ি, বাইসাইকেল ও হস্তশিল্প রপ্তানি হয়। যুক্তরাজ্য থেকে বাংলাদেশ লোহা ও স্ক্র্যাপ, যন্ত্রপাতি, জেনারেটর, এয়ারক্র্যাফটসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আমদানি করে এ ছাড়া যুক্তরাজ্য বাংলাদেশে শিল্প, অবকাঠামো, নবায়নযোগ্য জ্বালানি ও প্রযুক্তি খাতে বিনিয়োগ করছে। ফলে দুই দেশের মধ্যে এই বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরও বৃদ্ধির বিষয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে আগ্রহ থাকবে।

পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার আলোচনা

বাংলাদেশ যুক্তরাজ্যের সঙ্গে পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আনার বিষয়ে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। গত মার্চে বাংলাদেশ সরকার যুক্তরাজ্যের আর্থিক ও ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা আরোপের জন্য ব্রিটিশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর লন্ডনে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপের সদস্যদের সঙ্গে সাক্ষাৎও করেছেন, যাতে বাংলাদেশি ব্যবসায়ী গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া যায়।

ব্রিটিশ সরকারকে বাংলাদেশি অর্থ পাচারকারীদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপে রাজি করানোর চেষ্টা চলছে। ফলে এ বিষয়টিও উভয় পক্ষের আলোচনায় গুরুত্ব পাবে বলে জানা যায় সংশ্লিষ্ট সূত্রে।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে যুক্তরাজ্যেও সমর্থন

যুক্তরাজ্য রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। তারা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ ও সম্মানজনক প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করতে কাজ করছে এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে মানবিক সহায়তা দিয়েছে।

এর আগে ২০১৮ সালে যুক্তরাজ্যের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস জনসন কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন এবং রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার নিশ্চিত করার বিষয়ে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।

এ ছাড়া যুক্তরাজ্য জাতিসংঘের মাধ্যমে কূটনৈতিক চাপ প্রয়োগ করছে, যাতে মিয়ানমার রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

করোনায় ফের মৃত্যু, ২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৩

বার্সার ড্রেসিংরুমে কেমন ছিলেন মেসি?

সাতক্ষীরা প্রেস ক্লাবের নতুন সদস্য ৪৫ ও সহযোগী সদস্য ১৪ জন

বাইডেনের বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ, তদন্তের নির্দেশ ট্রাম্পের

মরক্কোতে কেন পশু কোরবানি না দেওয়ার নির্দেশ দিল সরকার

ভুল করে ৫১ বছর বয়সী সাবেক ফুটবলারকে জাতীয় দলে ডাক

ঈদের দিন কোথায় বৃষ্টি হবে, কোথায় হবে না

ঈদ যাত্রায় ট্রাক চাপায় একই পরিবারের ৩ সদস্য নিহত

বগুড়ায় ছাত্রদলের পদবঞ্চিতদের আমরণ অনশন

পুলিশের সঙ্গে অনেক তিক্ত অভিজ্ঞতা আছে : বাঁধন

১০

গাজীপুরে আলাদা সড়ক দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত, আহত ২৫

১১

ঈদের আগে রোজা রেখেছেন হামজা, বিশ্রামে বাংলাদেশ দল

১২

মহাসড়কে যানজট, যা বললেন স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৩

সাবিলা-ফারিণ পারফেক্ট নয়, যা বললেন মেহজাবীন

১৪

শ্রমিকদের ভয় দেখাতে বিএসএফের সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ, ফাঁকা গুলি

১৫

হজের ৫ দিন তাকবিরে তাশরিক পড়া ওয়াজিব, পড়ার নিয়ম ও উচ্চারণ

১৬

সাতক্ষীরার ৩৬ শহীদ পরিবারের মাঝে জামায়াতের উপহার

১৭

কওমি মাদ্রাসা শিক্ষক পরিষদের বিবৃতি / সরকারের নতুন পলিসি জাতীয় চামড়া সম্পদের ধ্বংস ডেকে আনবে

১৮

বন্ধের ৫ দিন পর খুলল সাদা পাথর পর্যটনকেন্দ্র

১৯

হজের খুতবায় ফিলিস্তিনিদের জন্য আবেগী দোয়া

২০
X