কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ০২ জুলাই ২০২৫, ০৮:৪০ পিএম
আপডেট : ০২ জুলাই ২০২৫, ১০:০৯ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সিন্ডিকেটে বাড়েনি মালয়েশিয়ার অভিবাসন ব্যয়, স্বীকার করলেন আসিফ নজরুল

উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি : সংগৃহীত
উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল। ছবি : সংগৃহীত

প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানবিষয়ক উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল অবশেষে স্বীকার করেছেন সিন্ডিকেটের কারণে অভিবাসন ব্যয় বাড়েনি বরং অভিবাসন ব্যয় বেড়েছে মধ্যস্বত্বভোগী দালালচক্রের কারণে। তিনি বলেন, আমরা সীমিতসংখ্যক লাইসেন্সের মাধ্যমে কর্মী পাঠালে বলে- আমি সিন্ডিকেটের পক্ষে, আর না পাঠালে আমি ব্যর্থ, এতে কয়েক লাখ পরিবার বঞ্চিত হবে।

বুধবার (২ জুলাই) আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘জাপানের শ্রম বাজার : সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক এক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।

এসময় ড. আসিফ নজরুল বলেন, সিন্ডিকেটের কারণে মালয়েশিয়ায় শ্রমিক যাওয়ার খরচ বাড়েনি। মালয়েশিয়ার সঙ্গে আগের সরকার চুক্তি করে রেখেছে যে, ‘তোমরা রিক্রুটিং এজেন্সির লিস্ট দিবা আমরা সিলেক্ট করবো।’ এটা দুই পক্ষের আনুষ্ঠানিক চুক্তি। যেটাকে আমরা কখনো কখনো ‘সিন্ডিকেট’ বলি। আমরা যখন দায়িত্ব নিয়েছি তখন আমাদের সবাই বলেছি সিন্ডিকেট করা যাবে না। সিন্ডিকেট না করতে হলে চুক্তি পরিবর্তন করতে হবে। সেটাতো মালয়েশিয়া সরকারকে পিটিয়ে করাতে পারব না। এখন তাদের (মালয়েশিয়া) সঙ্গে সমঝোতা করতে হবে।

তিনি বলেন, যদি সে চুক্তি পরিবর্তন না করে তাহলে আমার সামনে দুটা পথ খোলা আছে। এক হচ্ছে তার (মালয়েশিয়ার) কথা অনুযায়ী ২৫, ৫০ বা ১০০ রিক্রুটিং এজেন্সির মাধ্যমে পাঠানো, আরেকটি হচ্ছে তাদেরকে বলা যে- আমরা লোকই পাঠাব না। এখন আমি যদি ২৫, ৫০ বা ১০০ এজেন্সির মাধ্যমে লোক পাঠাই তাহলে সবাই বলবে আমি সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। কুৎসা রটনা করবে। আবার যদি কর্মী না পাঠাই তাহলে বলবে আমরা ব্যর্থ। আমার হাজার হাজার কর্মী যেতে পারবে না। এটা মালয়েশিয়া মনে রাখবে। লোক না পাঠালে পরবর্তীতে আমার এক থেকে দুই লাখ পরিবার ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সবাই এই ব্যর্থতার জন্য আমাকে দোষারোপ করবে। আমরা পুরো পিকচারটা জানার চেষ্টা করি না। আমরা সিন্ডিকেট সিন্ডিকেট করে ভালো বলতে পারি। সিন্ডিকেট মানে মনোপলি, মনোপলি মানে হচ্ছে- শ্রমিকদের কাছ থেকে বেশি অর্থ নেওয়া।

আসিফ নজরুল আরও বলেন, মালয়েশিয়ায় সিন্ডিকেট হয়েছিল; যদি বলি ৬-৭ লাখ টাকায় লোক গিয়েছে। দেখেন সৌদি আরবেতো সিন্ডিকেট নাই, বাহারাইন, কুয়েত কাতারে সিন্ডিকেট নাই। সেখানে কি ৬-৭ লাখ টাকায় লোক যায় না? বলেন আপনারা। সমস্যা কি সিন্ডিকেট? সিন্ডিকেটও সমস্যা; সিন্ডিকেট ছাড়াও সমস্যা। আপনাদের আমি বলি সমস্যা হচ্ছে অনেক মধ্যস্বত্বভোগী (দালাল) আছেন। যদি আপনি কয়েকটা (এজেন্সি) নির্দিষ্ট করে দেন সেখান সেখানেও মধ্যস্বত্বভোগী, যদি না করে দেন সেখানেও মধ্যস্বত্বভোগী।

আসিফ নজরুল বলেন, সৌদি আরবে সামান্য উট খামারে কাজ করা শ্রমিকের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সাত লাখ টাকা দিয়ে গিয়েছে। মরুভূমির মধ্যে বস্তির চাইতেও খারাপ একটা ঘরে থাকে। সে কত টাকা ব্যয় করে সেখানে গিয়েছে। আমার কাছে ভিডিও ফুটেজ আছে ওই শ্রমিক আমাকে জানিয়েছে, স্যার প্রথমে নিয়েছে পাঁচ লাখ; পরে নিয়েছে আরও তিন লাখ; মোট ৮ লাখ। আমাদের সমস্যা- যারা অভিবাসী নিয়ে কাজ করে তাদের মধ্যে একটা গ্রুপ আছে, যারা অপ্রয়োজনীয়ভাবে ‘হিউজ ডিমান্ড’ করে।

উপদেষ্টা বলেন, আমাকে বিদেশে চাকরি পেতেই হবে। সেখানে গিয়ে কান্নাকাটি করে। আপনাকে ১০ লাখ টাকা দিয়ে বিদেশ যেতে হবে কেন? আপনি দেশে থেকে উদ্যোক্তা হোন। মদিনার মসজিদ থেকে বের হলে দেখি যে কটা লোক হাত পেতে বসে থাকে তারা কোন দেশের? তারা বাংলাদেশের। আমাদের মিসকিন কেন বলবে না? বিদেশে গিয়ে বাংলাদেশের ইয়াং ছেলে বার্থরুম পরিষ্কার করছে, বেসিন পরিষ্কার করছে আর বকশিশের জন্য হাত পেতে দাঁড়িয়ে থাকে। সরি ফর মাই ল্যাঙ্গুয়েজ। এই যদি একটা হাইফ তোলা হয়, যেকোনোভাবে বিদেশ যাবো।

তিনি বলেন, আপনাদের বলবো- আপনারা যে কোনো উপায়ে বিদেশ যাইয়েন না। সুনির্দিষ্ট কাজ নিয়ে বিদেশ যান। দক্ষতা অর্জন করে বিদেশ যান। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু বিষয়ে কাজ হয়। জিরো স্কেল, জিরো ল্যাঙ্গুয়েজে বিদেশ যাবেন না। দক্ষতা ছাড়া ভিটে মাটি বেচে বিদেশ যাবে না। বিদেশে যাবেন সবাই স্কিল ওয়ার্কার হিসেবে। একটা লোক যাওয়া মানে তিন-চারটা ফ্যামিলিকে সাপোর্ট করা।

ড. আসিফ নজরুল আরও বলেন, মালয়েশিয়ার বিষয়ে একটা হাইপ উঠছে যে, মালয়েশিয়ায় ১০-১২ লাখ কর্মী নেবে। আমি সেখান থেকে ঘুরে এসেছি। মালয়েশিয়াতে আগামী এক বছরে বাংলাদেশ থেকে খুব বেশি হলে ৩০ থেকে ৪০ হাজার কর্মী নেবে।

জাপানের শ্রমবাজার বিষয় তিনি আরও বলেন, জাপানে কর্মীর চাহিদা রয়েছে। কিন্তু সেই চাহিদা পূরণের সক্ষমতা কি আমাদের রয়েছে? কারণ আমাদের অদক্ষ শ্রমিক আছে। ভাষা শিখছে কিন্তু সে দক্ষ হতে পারছে না। এখন আমাদের সমাধান একটাই, আমাদের জাপানে কর্মীর চাহিদা অনুযায়ী কর্মীকে দক্ষ করতে হবে। আমরা জাপান সেল করেছি। সেখানে একটা ডেডিকেটেড ওয়েবসাইট করা হবে।

জাপানের ক্ষেত্রে আমরা আমাদের দিক থেকে কোনো প্রক্রিয়া রাখব না জানিয়ে তিনি বলেন, এর পাশাপাশি কর্মীদের দক্ষ করার জন্য আমরা প্রাইভেট পাবলিক পার্টনারশিপের কথা ভাবছি। এ ছাড়া আমরা জাপানি উদ্যোক্তাদের বলছি যে আপনি টিটিসির দায়িত্ব নিয়ে নেন। আপনি দায়িত্ব নিয়ে আপনি জাপান থেকে লোকে এনে দক্ষতার প্রশিক্ষণ দেন। আমরা পুরো টিটিসি আপনাকে দিয়ে দেব। ইতোমধ্যে মনোহরদী টিটিসি আমরা দিয়ে দিয়েছি। এটা আমরা বলেছি যে, আপনারা আপনাদের মতো তৈরি করে নিন। একটা মডেল আমরা আগাচ্ছি। আরেকটা মডেল হচ্ছে আস-সুন্নাহ ফাউন্ডেশনের সঙ্গে আমরা বিভিন্ন পার্টনারশিপে যাওয়ার চিন্তা করছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বিএনপির সঙ্গে বৈঠকে পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী

‘এখন কাউকে ধরতে যৌক্তিক কারণ লাগে না, তবে সত্যের জয় হবে’

হাওরে নৌকা ডুবে নিখোঁজ ২

‘পৃথক সচিবালয় ছাড়া বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক স্বাধীনতা অর্জন সম্ভব নয়’

রাতের মধ্যে যেসব জেলায় হতে পারে বজ্রবৃষ্টি

বেসরকারি সংস্থায় চাকরি, বেতন ৩৮০০০ টাকা

চট্টগ্রামে শিল্পী সম্মিলন ও আর্ট ক্যাম্পে মিলন মেলা

যে কারণে এশিয়া কাপ দলে সোহান-সাইফ, জানালেন প্রধান নির্বাচক

ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির ভর্তি পরীক্ষার ফল প্রকাশ কবে, জানালেন প্রশাসক

ভারতে মোদির বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করলেন থালাপতি বিজয়

১০

‘নির্বাচনে কাজ করবে সাড়ে ৬ লাখ আনসার-ভিডিপি’

১১

কারাগারে গোয়েন্দা সংস্থার ভুয়া সদস্য আটক

১২

মেহেদী হত্যা মামলায় কারাগারে আনিসুল-মেনন 

১৩

১৯ মামলার আসামি যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

১৪

‘যারা বলে ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না, তারা বোকার স্বর্গে বাস করে’

১৫

চোখ পিটপিট বেশি করে ছেলেরা নাকি মেয়েরা? 

১৬

এশিয়া কাপের আগে ভারত শিবিরে আরও দুঃসংবাদ

১৭

সৈকতে ভেসে এলো বিরল প্রজাতির পাইন্না সাপ

১৮

অজ্ঞাত একাধিক দেশে অস্ত্র কারখানা গড়ে তুলেছে ইরান

১৯

আকিজ বশির গ্রুপে চাকরি, বেতন ছাড়া পাবেন আরও বিভিন্ন সুবিধা

২০
X