দৈনিক কালবেলায় জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) নানা অসংগতি আর অনিয়ম নিয়ে প্রতিবেদনের প্রকাশের প্রায় এক মাসেরও বেশি সময় পরে অবশেষে সরিয়ে দেওয়া হলো বিএমইটির বহির্গমন শাখার পরিচালক মামুন সরদারকে। গত ২ জুলাই জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব আবুল হায়াত মো. রফিকের সই করা এক চিঠিতে মামুন সরদারকে বদলি করা হয়।
নতুন করে তাকে ‘মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের ৬০টি ডে-কেয়ার সেন্টার স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে বদলি করা হয়েছে। চিঠিতে তাকে আগামী ১০ জুলাইয়ের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে।
এর আগে গত ২৬ মে দৈনিক কালবেলায় ‘গৃহকর্মীর আড়ালে কিশোরী পাচার’ শীর্ষক ৩ পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের প্রথম পর্বে ‘রক্ষক বিএমইটিই ভক্ষক’ শীর্ষক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। প্রতিবেদন গৃহকর্মীর আড়ালে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোরী ও ২৫ বছরের কম নারীদের পাচারের একটি সংঘবদ্ধ চক্রের বিস্তারিত তুলে ধরা হয়। সেই প্রতিবেদনে বিএমইটির একাধিক কর্মকর্তার যোগসাজশের বিষয়ে তাদের নাম পরিচয়সহ বিস্তারিত তুলে ধরা হয়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, মানবিক এই বিপর্যয়ের পেছনে সক্রিয় রয়েছে একটি সুসংগঠিত পাচারকারী চক্র, যারা কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করে ভুয়া কাগজপত্রে কিশোরীদের বিদেশে পাঠাচ্ছে। দৈনিক কালবেলার দীর্ঘ অনুসন্ধানে উঠে এসেছে ভয়াবহ সব তথ্য— চক্রটির সঙ্গে জড়িত অন্তত চারজন বিএমইটি (জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো) কর্মকর্তার সরাসরি সম্পৃক্ততার প্রমাণ মিলেছে। জড়িত রয়েছে অর্ধশতাধিক রিক্রুটিং এজেন্সি।
এতে আরও বলা হয় প্রশিক্ষণ ছাড়াই, ভুয়া পাসপোর্ট নম্বর ব্যবহার করে, প্রত্যাগত দেখিয়ে শত শত অপ্রাপ্তবয়স্ক কিশোরীকে পাঠানো হচ্ছে মধ্যপ্রাচ্যসহ বিভিন্ন দেশে, যেখানে অনেকেই ঠাঁই পাচ্ছেন ডান্স বার, স্পা সেন্টার কিংবা গৃহকর্মীর ছদ্মবেশে নির্যাতনের ভেতরে। পাচার হওয়া নারীদের প্রায় ৫০০টি পাসপোর্ট নম্বর এখন কালবেলার হাতে। এ সংখ্যাই শেষ নয়—প্রতিদিনই গৃহকর্মীর আড়ালে নতুন নতুন কিশোরী পাড়ি দিচ্ছেন অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে। অভিবাসনের নামে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানের ভেতরে লুকিয়ে থাকা এই মানব পাচার এখনই না থামালে গন্তব্যের নাম শুধুই অন্ধকার।
মন্তব্য করুন