আজ মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) বিশ্ব বাঘ দিবস। বনের রাজা সিংহ হলেও বাঘের দাপটে কাঁপে গোটা জঙ্গল। গায়ের ডোরা দাগ, চোখের তীক্ষ্ণ দৃষ্টি তার অস্তিত্বের জানান দেয়। শক্তি, গতি আর ধৈর্যের এক নিখুঁত সংমিশ্রণ এই শিকারি। তার উপস্থিতিতে থমকে যায় চারপাশের প্রাণিকুল। বাঘ শুধু বন্যপ্রাণী নয়, বহু সংস্কৃতি আর কল্পনার অনন্য প্রতীক। তার গর্জন মানে প্রাকৃতিক রাজত্বে আধিপত্যের ঘোষণা।
তবে পৃথিবীর সবচেয়ে করুণ ও সংকটাপন্ন বন্যপ্রাণীদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে এই বনরাজ। ক্রমাগত আবাসস্থল ধ্বংস, খাদ্যাভাব ও চোরাশিকারির কারণে দ্রুতই কমে যাচ্ছে বাঘের সংখ্যা। এক সময় যাদের গর্জনে কাঁপত জঙ্গল, আজ তারাই টিকে থাকার লড়াইয়ে হেরে যাচ্ছে। নানা দেশে বিলুপ্তপ্রায় তকমা পেয়ে গেছে এই দুর্ধর্ষ প্রাণীটি। টিকে থাকা বাঘগুলোও এখন অনিরাপদ বনাঞ্চলে। প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষায় বাঘের অস্তিত্ব তাই শুধু প্রয়োজন নয়, অপরিহার্য। আর তার অস্তিত্বই টিকিয়ে রাখতে বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ‘বিশ্ব বাঘ দিবস’।
একসময় পৃথিবীতে বাঘের ৯টি উপপ্রজাতি ছিল। কিন্তু শতাধিক বছর আগে এর তিনটি প্রজাতি বিলুপ্ত হয়ে যায়।
বর্তমানে টিকে আছে ছয়টি উপপ্রজাতির বাঘ। এর মধ্যে বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগার অন্যতম। বাংলাদেশ ছাড়া এশিয়ার মাত্র কয়েকটি দেশের বনে-জঙ্গলে এই বাঘের বসবাস। বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণে সাগরঘেঁষা নোনা জলাভূমির বাদাবন-সুন্দরবন হচ্ছে বাঘের প্রধান বিচরণস্থল। এই বাঘকে বলা হয় বেঙ্গল টাইগার। বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের বাঘ একেবারে আলাদা বৈশিষ্ট্যের।
একসময় পৃথিবী থেকে সবচেয়ে বড় মাংসাশী প্রাণী বাঘ বিলুপ্ত হতে চলেছিল। তখন বাঘ রক্ষায় ২০১০ সালে রাশিয়ার সেন্ট পিটাসবার্গ শহরে বাঘ আছে এমন দেশগুলোকে নিয়ে শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখান থেকেই বাঘ নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে ২৯ জুলাইকে বিশ্ব বাঘ দিবস পালনের ঘোষণা দেওয়া হয়। পাশাপাশি ২০২২ সালের মধ্যে বিশ্বে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণে পরিণত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এই ঘোষণা অনুযায়ী, বাঘ রক্ষায় পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত. নেপাল ও ভুটান বাঘের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বাড়ালেও বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে রয়েছে। এর অন্যতম কারণ দিন দিন বনভূমি কমে যাওয়া এবং বনে চোরা শিকারিদের নিয়ন্ত্রণ করতে না পারাকেই দায়ী করছেন গবেষকরা।
সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশে দিনটি পালন করা হয়। এবারের প্রতিপাদ্য ‘বাঘের সংখ্যা বৃদ্ধি, সুন্দরবনের সমৃদ্ধি’। দিবসটি উদ্যাপনের মূল লক্ষ্য বাঘ সংরক্ষণ বিষয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং বাঘ রক্ষায় নীতিনির্ধারক, বিজ্ঞানী, স্থানীয় জনগোষ্ঠী ও পরিবেশকর্মীদের মধ্যে সমন্বিত প্রচেষ্টা জোরদার করা। বাংলাদেশ প্রতি বছরের মতো এবারও বাঘ দিবস পালন করছে বিশেষ কর্মসূচির মাধ্যমে।
মন্তব্য করুন